হোলি আর্টিসান আক্রমণ-পরবর্তী-সাইকোলজি
Psychology

হোলি আর্টিসান আক্রমণ-পরবর্তী-সাইকোলজি

May 4, 2017   |    11044


দেশে একটা বড় ধরণের জঙ্গী আক্রমণ ঘটে গেলো। এক রাতেই আমার প্রিয় নগরীর মানুষগুলোর মনে ভড় করেছে কালো এক ছায়া। বিগত কয়েক মাস ধরেই একের পর এক ব্লগার-লেখক-সমাজকর্মী হত্যার পর গতরাতে গুলশানের রেস্তোরাতে 20 জন বিদেশীকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় সবাই দেশের ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষ চিন্তিত। দেশ কি তবে আইসিস এর ঘাটিঁতে পরিণত হচ্ছে? আমরা কি আগফান-ইরাকে পরিণত হচ্ছি? দেশে কি আমেরিকা/ভারত আক্রমণ চালাবে?

 

এসকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউই জানে না। কয়জন মারা গেছে, তাদের কয়জন অমুসলিম, কয়জন বিদেশী ইত্যাদি বিষয়ে সবাই নিজ নিজ থিওরী দিয়ে পানি ঘোলা করবে। একটা বিষয় ভালো, আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি, টিভি মিডিয়ার ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত নেক্কারজনক! রাত 12.00 থেকে ভোর পর্যন্ত একই ফুটেজ বার বার ঘুরিয়ে পেচিঁয়ে দেখিয়ে সবাই নিজ নিজ ্যানেলের পপুলারিটি চাঙ্গা রেখেছে। দোষ কি আমাদের নেই? ফেইসবুকে অনলাইন নিজউ পোর্টালগুলোরদেখুন ভিডিওসহজাতীয় ভিত্তিহীন খবরগুলো শেয়ার দিয়ে আপনিই এই ভাইরালিটির প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন। কাজের খবরের থেকে হাতিপু- ভিডিও আপনার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আপনাদের মতো দর্শকদের জন্য কিন্তু এই লাইভ টেলিকাস্ট দেখানোটাই ভালো বিজনেস! আপনি না দেখলে এই লাইভ টেলিকাস্ট কিন্তু সৃষ্টি হতো না!

 

এখন আসা যাক কাজের কথায়। এই ঘটনার পরবর্তী করণীয় কি? জনগণ হিসেবে আমাদের কি দায়িত্ব?

 

1. প্রথম কথা হলো, ভয় পেয়ে দমে যাওয়া যাবে না। আজ থেকে আর গুলশানে ঘুরতে যাবো না, রাতে বাইরে বের হবো না- জাতীয় কথাবার্তা বলে নিজের এবং নিজ সন্তানের মনে ভয় সৃষ্টি করবেন না। জঙ্গীদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো জনমনে ভীতি সৃষ্টি করা। আজকে 7 জন নিয়ে এসে 22 জন জবাই করে গেছে। আপনি আরো ভয় পেলে কালকে 3 জন এসে 50 জন জবাই করে যাবে। তাই, স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসার চেষ্টা করুন। হোলি আর্টিসান ছাড়াও ঢাকায় খাবার রেস্তোরা আছে। ঢাকার প্রাণ ফিরিয়ে আনুন।

2. শোনা যাচ্ছে, জঙ্গীরা জিম্মিদেরকে কোরান পাঠ করে মুসলমানিত্ব প্রমাণ করতে বলেছে। যারা পারে নাই, তারাই মারা পড়েছে। এজাতীয় কাজ 1971 সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা করেছিলো। এটা অবশ্যই নেক্কারজনক! তাই, আজকেই কোরানের একটা সুরা মুখস্ত করা অথবা নিজের হিন্দু বন্ধুদের শিখানোর ফলে কেউ সাচ্চা মুসলমান হয়ে যাবে না। বরং, এজাতীয় জঙ্গীবাদকে লাই দেয়া হবে।

3. হিজাব পরিহিতা এক নারীর প্রতি ভালো আচরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু, গেঞ্জি পড়ুয়া এক যুবকের গলা কেটে ফেলা হয়েছে- সেটা তো মেনে নেয়া যায় না। হিজাব পরিহিতা যেমন মানুষ, বিদেশি মৃত ্যক্তিরাও মানুষ ছিলো। আপনার ধর্ম দুইজনকেই বাচাঁর অধিকার দিয়েছে। হিজাব পড়ায় মুসলিম বোনের জীবন বাচঁলো। তাই, আজকে থেকে জোর করে কারো উপর হিজাব, ধর্ম চাপিয়ে দিলে কিন্তু আপনিও কিন্তু সেই বৈষ্যবাদী ধর্মের অনুসারী হয়ে যাবেন। সাম্যের ধর্মে আসুন। সেটার নাম মনুষ্যত্ব।

4. আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করে একটি খাবারের দোকানে খেতে আসা বিদেশি অতিথী মেরে ফেলে তারা কোন ধর্ম রক্ষা করলো? সেটা যেই ধর্মই হোক না কেন অন্তত মানুষের ধর্ম নয়।

5. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণকেই জঙ্গীবাদ দমন করতে হবে। এখন, আপনি কি করবেন? পিস্তল কিনবেন? পকেটে রিভালবার নিয়ে ঘুরবেন? হাহা! তাইলে, কিন্তু আমরা অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফাঁদে পা দিবো। দেশটা তখন আরো রসাতলে যাবে। কিছু যদি করতেই চান, তাহলে আত্মীয় স্বজনদের ভয় কাটান। গুলশান কোন বধ্যভূমি নয়। এখনো জনমানুষের বসতি আছে সেখানে। ভয়টাকে পুজীঁ করে নতুন ভয় সৃষ্টি করবেন না।

6. পুলিশ অফিসারের মৃত্যুতে কোন ফেইসবুক বন্ধু আনন্দ প্রকাশ করলেই বিনা নোটিশে ব্লক মারুন। শহীদ হওয়া দুইজন পুলিশ অফিসার আমাদের গর্ব। তাদের পরিবারকে স্রষ্টা এই শোক সহ্য করবার শক্তি দিক!

7. আজকে থেকেপাশের ছাদে আটকা পড়া বিড়ালকে রক্ষা করলো ফায়ার সার্ভিসজাতীয় লাইভ টেলিকাস্ট বর্জন করুণ। আপনি না দেখলেও ফায়ার সার্ভিস রক্ষা করতে পারবে। আপনি দেখলে ্যানেলের ্যামেরার ভীড়ে রক্ষাকাজে কিছুটা জটিলতা হবে। ভেবে দেখেন কি করবেন?

 

ঢাকা আমার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। ঢাকার বাহিয়ে গেলেকবে আবার কবে সেই দূষিত বাতাসের ঘ্রাণ পাবো?” তা চিন্তা করেই সময় পার কর দেই। আসুন, মনের ভয় দূর করি। আজকে আরেকটা আক্রমণ হতেই পারে। সেটা আপনি বাসায় বসে থাকলেও হতে পারে, এমনকি আপনার বাসায়ও হতে পারে। তাই বলে কি আপনি জীবন যাপন বন্ধ করে দিবেন?

 

যদি করে দেন তাহলে এই জঙ্গী হামলা সফল হলো।



Contact

Hi there! Please leave a message and I will try my best to reply.

© 2024 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.