সুখী হবার কৌশল: এমপ্যাথি
May 4, 2017 | 14431
সুখে
থাকার একটা উপায় জানতে
চান?
নিজের
ভুল স্বীকার করতে শিখুন।
বিশ্বাস
করুন আর নাই করুন,
আমরা সবাই নিজের ভুলগুলো
অধিকাংশ সময়ই চোখে দেখি না।
কেউ কেউ তার সমগ্র
জীবনেও বুঝতে পারে না যে,
সে বড় রকমের ভুল
করছে।
আমি
ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ধাক্কা খেয়ে
বুঝতে পেরেছি, আমি প্রচন্ড মাত্রায়
Empathy বিহীন একজন মানুষ। ব্যাপারটা প্রথম জানতে পারি একজন বন্ধুর
কাছ থেকে থার্ড ইয়ারে
পড়ার সময়। পরে যখন ব্যাপারটা নিয়ে ঘাঁটতে শুরু করলাম তখন
দেখলাম আমার রোগটা কতটা
গুরুতর। সেই প্রথম প্রেমের
ব্যর্থতা থেকে শুরু করে
সহপাঠীদের/ সহকর্মীদের সাথে রূঢতা— মোটামুটি
সবই আমার এমপ্যাথিবিহীন
জীবনের ফলাফল।
এখন
কথা হচ্ছে, এমপ্যাথি কি?
মূলত
অন্য কারো কষ্ট
বুঝতে পারা। এটা সিমপ্যাথী
না। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ব্যাপার।
আমি আসলেই অন্য কারো
কষ্ট বুঝতে পারি না; কিংবা
বোঝার চেষ্টা করি না। সবসময়ই
সবাইকে নিজের স্ট্যান্ডার্ডে বিচার
করার চেষ্টা করি। যেমন, আমি
সবসময় নিজের ঘর বেশ সাজিয়ে
ঘুছিয়ে রাখি। এখন অন্য
করো অগোছালো ঘর দেখলেই আমার
তাকে আর মানুষ মনে
হয় না। চিন্তা করতে
শুরু করি, আরে! আমি
পারলে ও পারবে না
কেন?
কিন্তু,
এই ধরণের চিন্তা করাটা মারাত্মক ভুল।
এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি এমপ্যাথির গাছ লাগাবো। দিন
রাত সেই গাছে সাড়
দিবো। চারা গাছটা বড়
হলে সেই ছায়ায় হয়তো
জীবনটা পাড় করে দিবো
সুখে শান্তিতে! কিন্তু কথা হলো, এই
গাছের বীজ কই পাবো?
২০১৫
সালে উদ্ভাসে পড়াতাম। আমার দুইটা ক্লাসে
মোটামুটি ৮০ জনের মতো
স্টুডেন্ট ছিলো। আমি এক রাতে
ঠিক করলাম, এই ৮০ জন
মানুষের জীবনের কত কষ্ট আছে
তা বোঝার চেষ্টা করবো। হয়তো তাদের কথা শুনতে শুনতে
কিছুটা হলেও এমপ্যাথি
সৃষ্টি হবে।
যেই
কথা, সেই কাজ। পরের
দিন ক্লাসে ঢুকলাম ৮০টা সাদা কাগজ
নিয়ে। স্টুডেন্টদের বললাম একটা রচনা লিখতে
“তুমি কি জীবনে সুখী?
কেন?”
আমার
ধারণা ছিলো কেউ হয়তো
পাত্তাটাও দিবে না; বিরক্ত
হবে! কিন্তু, আমাকে অবাক করে দিয়ে
তারা পাতার পর পাতা লিখে
জমা দিয়ে গেলো। শর্ত ছিলো একটাই,
সবার পরিচয় থাকবে গোপন। কারো কোন নাম
লেখা থাকবে না।
বাসায়
এসে রাতে বেলা লেখাগুলো
পড়তে শুরু করলাম। অবাক
হয়ে লক্ষ্য করলাম,
তারা সবাই জীবনের ঘোরতরো
কষ্টের কথা আমার কাছে
বর্ণণা করা শুরু করেছে।
অধিকাংশই নিজের নাম, ইমেইল দিয়ে
দিয়েছে। অনুরোধ করেছে যাতে আমি তাদের
সমস্যার সমাধান করে
দেই!
এই পর্যায়ে আমি নিজেকে “মুশকিল-আহসান বাবা”র ভূমিকায়
অবতীর্ণ করলাম। বুঝি আর নাই
বুঝি, সবাইকে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে
সাহস দিতে লাগলাম। এদের
মধ্যে কারো বাবা-মার বিচ্ছেদ ঘটেছে,
কেউ তার ছেলেবেলায় ঘটে
যাওয়া নির্যাতনের কালো ছায়া থেকে
বের হয়ে আসতে পারছে
না। নিজের এতো ব্যক্তিগত
সমস্যা যখন তারা
আমার সাথে শেয়ার করা
শুরু করলো, তখন আমার কাছে
নিজের জীবনের সমস্যাগুলো অনেক
ছোট বলে মনে হতে
লাগলো।
একজন
মেয়ের সাথে একবার পরিচয়
হয়েছিলো যে খুব ছোটবেলায়
প্রতিনিয়ত তার চাচার দ্বারা
যৌন নির্যাতনের শিকার হতো। এই মেয়েটাকে
দেবার মতো সান্ত্বনা আমার
কাছে একেবারেই ছিলো না। তারপরও
মাসের পর মাস তার
সাথে কথা বলে গেছি।
আমার কাছে কখনোই কোন
সমাধান ছিলো না। শুধু
তাকে বুঝিয়েছি যে, যা হয়েছে
তার জন্য নিজেকে
দোষ দেয়া একেবারেই ঠিক হবে না।
কিছুদিন আগে দেখলাম সেই
মেয়েটা খুব ভালো একটা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। দূর থেকে দেয়া
একটা হাসিতে সে জানিয়ে দিলো,
জীবনটা তার এখন অনেক
সুন্দর।
আমার
ছোটবেলা থেকে মনে হতো,
আমি এই দুনিয়াতে সবচেয়ে
কষ্ট করে বড় হওয়া
মানুষ। আমরা অনেক গরীব
ছিলাম; বাবাহীন সংসারে মা সরকারি চাকরি
করে দুই ছেলেকে অসম্ভব
উচ্চাভিলাষী করে গড়ে তুলেছিলেন।
ছোটবেলায় একটা ভাঙ্গা বাড়িতে
থাকতাম বলে বন্ধুদের কখনো
বাসায় দাওয়াত দিতাম না। বাসায় আসার
কথা আসলেই নিজ থেকে এড়িয়ে
যেতাম। বড় হওয়ার পর
এই দরিদ্রতা ঘুচলো। কিন্তু, কেন যেন মনে
হতো, আমাকে একটু বেশিই কষ্ট
সহ্য করতে হয়েছে।
২০১৬
সালের মাঝামাঝির দিকের কথা। নিজের অত্যন্ত নিকটজনের
কাছে ধর্ষণের শিকার একটা মেয়ে ফোন
দেয়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে
মনোযোগ দিয়ে তার কথাগুলো শুনি।
একপর্যায়ে মেয়েটা বুঝতে পারে সে সন্তান
সম্ভাবী। পরিবারের সহায়তায় সে গর্ভপাত ঘটায়।
একের পর এক তার
জীবনের দিনগুলো জাহান্নামের চেয়ে ভয়ংকর হতে থাকে। সবকিছু
শেষ হবার পরও মেয়েটা
মানসিকভাবে অনড় ছিলো। তার
সাথে কথা বলতে বলতে
শিখেছি, পজেটিভ মেন্টালিটি কাকে বলে। মুসলিম
বাঙালি সমাজের সবচেয়ে নির্মম খড়া কাটিয়ে এসে
মেয়েটা আবার পড়াশোনা শুরু
করে। একরাতে আমাকে বলে, আমার সাথে
এটাই তার শেষ কথা।
আমার কাছে সে প্রচন্ড
কৃতজ্ঞ, কিন্তু, সবকিছু ভুলে মেয়েটা এবার
সামনে আগাতে চায়। সেদিন প্রথম বুঝতে পারলাম, মানুষ চাইলে আসলে যেকোন রাগই
ছেড়ে দিতে পারে।
নিজের
প্রথম প্রেমের ব্যর্থতার পর
সাবেক প্রেমিকাকে মনে মনে অনেক
গালি দিতাম। এক সময় বুঝতে
পারলাম, যত দিন মানুষ
রাগ ধরে রাখে ততদিন
পর্যন্ত সে আসলে ঘটনাটা
থেকে বের হয়ে আসতে
পারে না। তাই, সবকিছু
মাফ করে দিয়ে জীবনে
সামনে আগানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। একরাতে বসে মোবাইলের কল
লিস্ট ঘেটে বের করলাম,
কতজন আমার উপর রাগ
করে আছে। তাদের সবাইকে
ফোন দিলাম। কিছু বলার আগেই,
সবার কাছে নিজের ভুল
স্বীকার করলাম। অকপটে বললাম, আমি আসলে তোমাদের
কষ্টগুলো কখনোই বুঝতে পারিনি। এখন বুঝতে চেষ্টা
করি। তাই, প্রতিনিয়ত অনুভব
করি, তোমাদের সাথে কতটা বাজে
ব্যবহার করেছি।
লিস্টটা
বেশ বড়সড় ছিলো। অধিকাংশ মানুষই দেখলাম খুশি হয়ে মাফ
করে দিলো। আমার বন্ধু/বস
আয়মানের একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। একটা
বড়সড় উদোক্তা ও সফল ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ও নিজের ভুল
স্বীকার করে ফেলে। যে
নিজের ভুল স্বীকার করতে
পারে, তার উপর রাগ
করা যায় না। ভালো
মানুষ, সাহসী মানুষগুলোকে দেখে দেখে জীবনে সুখী হবার মন্ত্রটা শিখে নিলাম:
1. ভুল
করলে সেই ভুল স্বীকার
করার মধ্যে কোন
দূর্বলতা নেই। ভুল স্বীকার
করতে পারাটা অনেক বড় কলিজার
কাজ।
2. যখন
বুঝতে পারবেন যে আপনি কারো
মনে কষ্ট দিয়েছেন, অকপটে
তার কাছে সত্যি
বলে মাফ চেয়ে নিন।
সে মাফ না করলেও
দেখবেন আপনার মনের পাথর নেমে
গেছে।
3. রাগ
ধরে রাখবেন না। কোন ঘটনার
রাগ ধরে রাখলে আপনি
কোন দিনই কিন্তু মুক্তি
লাভ করবেন না। রাগ একটা
কারাগারের মতো।
Finally, my greatest realization: Sometimes, you lack the
tree called empathy in you. Don’t worry. Try to grow one. Try to talk to
everyone and hear their pains. Someday, you will understand your pains are too
small to care about.
That day, you will realize that you still don’t have an
empathy tree, yet you can feel its shade.