মুশতাক ইবনে আইয়ূব
Oxford Life

মুশতাক ইবনে আইয়ূব

May 27, 2020   |    3070


এই ছবিটা আমার জীবনের জন‍্য একটি ঐতিহাসিক ছবি। ডান পাশের মানুষটা আমার বিশ্ববিদ‍্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষের শিক্ষক মুশতাক ইবনে আয়ূব। ২০১২ সালে আমি ঢাবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হই। ঢাকা মেডিকেল, বুয়েট ছেড়ে ঢাবিতে পড়ার সিদ্ধান্তে অবশ‍্যই পরিবারবর্গ ছিলেন বেশ নারাজ। বিভাগে ক্লাস করার সময় তাই প্রতি মুহুর্তেই আমি কিছুটা ইন্সপায়রেশন খুজঁতে থাকতাম। তখনই ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে মুশতাক স‍্যার পিএইচডি করতে অক্সফোর্ডে চলে যান। 


অক্সফোর্ডের প্রথম সপ্তাহে শেল্ডনিয়ান থিয়েটারে ম‍্যাট্রিকুলেশন নামের এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। মুশতাক স‍্যার ১৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে তার ম‍্যাট্রিকুলেশনের ছবিটা ফেইসবুকে আপলোড করেন। সেই ছবি দেখে এক মুহুর্তেই আমি অক্সফোর্ডের প্রেমে পড়ে যাই। ছবির নিচে কমেন্ট করে বসি “I will go to Oxford.” সেই সপ্তাহেই রাতের অক্সফোর্ডের একটি ড্র্রোন ফুটেজের ভিডিও দেখি। অত:পর সিদ্ধান্তে অটল হই যে, “নাহ! পিএইচডি করতে অক্সফোর্ডেই যাবো।”


দ্বিতীয় আর তৃতীয় বর্ষটা আমার কাটে অক্সফোর্ডের ওয়েবসাইটের আনাচে-কানাচে ঘেটেঁ। যে ওয়েব প্রোফাইল দিয়ে আমি অক্সফোর্ডে ২০১৮ সালে পিএইডি শুরু করেছি সেইটা আমি আসলে খুলেছিলাম সেই ২০১৫ সালে! অক্সফোর্ড নিয়ে আমার ভালোবাসার গল্পটা তাই বেশ লম্বা। চতুর্থ বর্ষে আসার পর থেকেই মুশতাক স‍্যার আমাকে নিয়মিত মেন্টরিং শুরু করেন। কীভাবে সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, কোথায় গেলে স্কলারশীপ মিলবে তার অনেকটাই আমি জেনেছি তার কাছ থেকেই। অবশ‍্য আমিও চেষ্টা করতাম এই ব‍্যস্ত মানুষটাকে যথাসম্ভব পয়েন্ট করে করে প্রশ্ন করতে। তার সাথে প্রতিটা স্কাইপ কলের আগে আমি অনেক সময় ধরে ইন্টারনেট ঘেটেঁ ঠিক করে রাখতাম মুশতাক স‍্যারের সাথে কোন ব‍্যাপারে আলোচনা করবো।


অবশেষে প্রায় দীর্ঘ ২ বছরের অধ‍্যবসায় শেষে গত ১৩ অক্টোবর শেল্ডনিয়ান থিয়েটারে আমার ম‍্যাট্রিকুলেশন হলো। নিয়তির কী মধুর পরিণতি যে, ওই দিনটাতে মুশতাক স‍্যারও অক্সফোর্ডে ছিলেন। ম‍্যাট্রিকুলেশনের পর আমি স‍্যারকে সাথে নিয়ে ব‍্যালিয়ল কলেজের ডাইনিং হলে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। সেই অসাধারণ মুহুর্তটুকুকে ক‍্যামেরায় বন্দী করতে আমরা ভুলিনি। দু’জনের চেহারাতেই ছিলো হাসির ঝলকানি। 


স‍্যার, আমার জীবনে আপনি যে মেন্টরের ভূমিকা পালন করেছেন তা আমি বর্ণণা করে শেষ করতে পারবো না। ধন‍্যবাদ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সবই আপনার প্রাপ‍্য। আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, আপনার মতো দুই চারটা মানুষ এখনো আছে বলে আমাদের দেশটাকে নিয়ে বিভোর হয়ে স্বপ্ন দেখা যায়। ভালো থাকুন, আর স্বপ্নের দেখানোর মিশনটা চালিয়ে যান।



Contact

Hi there! Please leave a message and I will try my best to reply.

© 2024 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.