স্টেম সেল (পর্ব-১): সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
Jan 4, 2023 | 10264
আপনার নাড়ি-ভুঁড়ির (বইয়ের ভাষায় পরিপাকতন্ত্র) কথা একটু চিন্তা করুন। এই অঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০-২৫ ফুট, তাতে রয়েছে কোটি কোটি কোষ। কিছু কোষ আপনার খাদ্য শোষণ করে; এদের বলা হয়ে enterocytes বা শোষণকারী কোষ। অন্যদিকে goblet cell মিউকাস রস নি:সরণ করে পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবারের প্রবাহ নিশ্চিত করে। একই সাথে এই মিউকাস খাবারের মাঝে অবস্থানরত জীবানু ও রাসায়নিক প্রদাহ থেকে পরিপাকতন্ত্রের কোষগুলোকে রক্ষা করে। আবার enteroendocrine নামক কোষগুলো হরমোন নি:সরণের মাধ্যমে খাদ্যের পরিশোষণ, প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও পরিপাকতন্ত্রে রয়েছে M-cell, tuft-cell নামক বিচিত্র সকল কোষ। সহজ কথায় বলতে গেলে, পরিপাকতন্ত্র বা নাড়ি-ভুড়ি কয়েকটি বিশেষ ধরণের কোষের সম্মিলনে তৈরি।
মজার ব্যাপার হলো, উপরে যে কোষগুলোর নাম বলা হলো তারা সবাই হলো differentiated cell (বিশেষায়িত কোষ). অর্থাৎ, এরা সাধারণ অবস্থায় বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরী করতে পারে না। অথচ, পরিপাকতন্ত্রের রোগ-জীবানু আর এসিডপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রতিনিয়ত এই কোষগুলোর মৃত্যু ঘটছে এবং নতুন নতুন শোষণকারী, মিউকাসক্ষরণকারী কিংবা হরমোনাল কোষের আবির্ভাব ঘটছে।
কোথা থেকে আসছে এই কোটি-কোটি নতুন-নতুন বিশেষায়িত কোষ?
উত্তরটি হলো stem cell বা শস্য কোষ। পরিপাকতন্ত্রের মাত্র ১% এর কম কোষ হলো স্টেম সেল। কিন্তু, এই সামান্য কিছু কোষ সম্পূর্ণ অঙ্গটির সকল ধরণের কোষ প্রয়োজন অনুসারে সৃষ্টি করতে পারে। একই সাথে স্টেম সেল আবার নতুন স্টেম সেলও তৈরি করতে পারে। বিকশিত কোষের এই ক্ষমতা সাধারণত থাকে না।
সুতরাং, স্টেম সেল কি?
যে কোষ দেহের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন অঙ্গের নানা রকমের বিশেষায়িত কোষ সৃষ্টির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত বিভাজনের মাধ্যমে দেহে নিজেদের সংখ্যাও বজায় রাখে তাদের স্টেম সেল বলে। স্টেম সেলের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য থাকে:
১. নিয়ন্ত্রিত গতিতে বিভাজিত হয়
২. বিভাজনের মাধ্যমে নতুন কোষ তৈরি করতে পারে
৩. নানা প্রকারের বিশেষায়িত কোষের জন্ম দিতে পারে
প্রথম দুটি বৈশিষ্ট্য মোটামুটি সকল স্টেম সেলের মাঝেই দেখা যায়। তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে স্টেম সেলকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
স্টেম সেলের প্রকারভেদ
১. Totipotent Stem Cell: এই স্টেম সেলটি একটি প্রাণীর পূর্ণাঙ্গ দেহের জন্ম দিতে পারে। এর উদাহরণ হলো মানুষের জাইগোট বা ভ্রূণকোষ। মানবদেহে বীর্য ও ডিম্বককোষের মিলনের পর জাইগোট সৃষ্টি হয়। সেই জাইগোটটি বিভাজিত হয়ে তিনটি ভ্রূণস্তর গঠন করে। সেই তিন ভ্রূণস্তর থেকে আমাদের সম্পূর্ন দেহ তৈরি হয়। সুতরাং, জাইগোট হলো একটি totipotent stem cell.
২. Pluripotent Stem Cell: এরা totipotent কোষের তুলনায় একটু কম ক্ষমতা রাখে। এরা দেহের অধিকাংশ কোষ তৈরী করতে পারলেও পূর্ণাঙ্গ দেহ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষের ভ্রূণীয় স্তরের কোষগুলো (embryonic stem cell) এই শ্রেণীতে পরে। জাইগোট সৃষ্টির ৪-৫ দিন পর এই কোষগুলোর অস্তিত্ব জরায়ুতে দেখতে পাওয়া যায়।
Totipotent ও Pluripotent কোষের অস্তিত্ব কেবল ভ্রূণীয় দশাতেই পাওয়া যায়।
৩. Multipotent Stem Cell: এরা বিভিন্ন অঙ্গের মাঝে অবস্থানকারী বয়:প্রাপ্ত (adult) স্টেম সেল। এদের কাজ হলো একটি অঙ্গের বিচিত্র কাজে পারদর্শী সকল ধরণের বিশেষায়িত কোষের জন্ম দেয়া। যেমন, bone marrow-তে অবস্থানকারী Haematopoetic Stem Cell (HSC) রক্তে অবস্থানকারী নানা প্রকার কোষ সৃষ্টি করে— লোহিত রক্তকোষ অক্সিজেন পরিবহন করে, শ্বেত রক্তকোষ রোগ প্রতিরোধে কাজ করে ইত্যাদি। এই কারণে লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার হলে bone marrow প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তার স্টেম সেলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। অন্যদিকে, Crypt base columnar (CBC) cell পরিপাকতন্ত্রের নানা ধরণের কোষ (যেমন-enterocyte, goblet, enteroendocrine cell) জন্ম দিতে পারে। তাই, HSC ও CBC কোষগুলোকে Multipotent Stem Cell বলা হয়।
এই স্টেম সেলগুলোকে একজন বয়:প্রাপ্ত ব্যক্তির শরীরেও পাওয়া যায় বলে এদের adult stem cell-ও বলা হয়ে থাকে।
এই পর্বে আমরা জানতে পারলাম:
× স্টেম সেল কি?
× স্টেম সেলের তিনটি বৈশিষ্ট্য
× স্টেম সেলের প্রকারভেদ
আগামী পর্বে আসছে, স্টেম সেলকে সনাক্ত করার পদ্ধতি। চোখ রাখুন ব্লগে।