লক্ষ‍্য যখন অক্সফোর্ড
Oxford Life

লক্ষ‍্য যখন অক্সফোর্ড

May 27, 2020   |    10239


বিগত দুই বছর ধরে টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের র‍্যাংকিং অনুসারে অক্সফোর্ড বিশ্বের নম্বর বিশ্ববিদ‍্যালয়। প্রায় নয়শত বছর পূর্বে স্থাপিত এই ঐতিহ‍্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াটা যে কারো জন‍্যই একটি স্বপ্নাতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু, দু:খের বিষয় হলো, আমাদের দেশ থেকে খুব বেশী ছেলে-মেয়েকে অক্সফোর্ডে যেতে দেখা যায় না। বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই ভয়ে অক্সফোর্ডের আবেদনপত্রটাই পূরণ করে না। তাই, আমি আমার নিজের ব‍্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রক্ষিতে কীভাবে অক্সফোর্ডে চান্স পাওয়া যেতে পারে সে ব‍্যাপারটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।


প্রথম মূলমন্ত্র হলো স্বীয় আত্মবিশ্বাস। আপনাকে আয়নার সামনে দাড়িঁয়ে বলতে হবে যে, আমিও অক্সফোর্ডে পড়ার যোগ‍্য। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই নিজের পিএইচডি গন্তব‍্য হিসেবে অক্সফোর্ডকে নির্ধারণ করে ফেলি। পরবর্তী বছর গুলোতে www.ox.ac.uk সাইটটে যেয়ে প্রায়ই তাদের অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া, বৃত্তি সুবিধা, পছন্দের বিষয়গুলো নির্বাচন করতে থাকি। প্রস্তুতিটা আমি শুরু করি অনেক আগে থেকেই। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, অক্সফোর্ডে পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশনের জন‍্য আবেদন করতে গেলে নূন‍্যতম .৭০ সিজিপিএ থাকা উচিত।


পিএইচডির জন‍্য আমার বিশেষ উপদেশ হলো, আবেদন করার আগেই একজন সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করা। অক্সফোর্ডের সাইট থেকে তাদের রিসার্চ সম্পর্কে পড়ে কয়েকজন বিজ্ঞানীর সাথে ইমেইলের মাধ‍্যমে আপনি কথা বলে নিবেন। তাহলে আপনার সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। মাস্টার্সের জন‍্য এটা খুব একটা দরকারী নয়। কিন্তু, উভয় ক্ষেত্রেই আপনাকে খুব সুন্দর করে একটিস্টেটমেন্ট অফ পারপাসলিখতে হবে। একপাতার এই গল্পে আপনাকে বোঝাতে হবে যে, আপনার পূর্বাভিজ্ঞতা কীভাবে আপনাকে এই কোর্সের জন‍্য প্রস্তুত করেছে এবং এই ডিগ্রীটি কীভাবে আপনার ভবিষ‍্যৎ লক্ষ‍্য পূরণে সহায়ক হবে। আবেদনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনার একাডেমিক সিভি। পিএইচডির জন‍্য পূর্বের গবেষণার অভিজ্ঞতাকে বিশেষভাবে জোর দিতে হয়। মাস্টার্সের জন‍্য একাডেমিক অর্জন, পুরস্কার, ট্রেনিং সার্টিফিকেট ইত‍্যাদি বিষয়গুলোকে সুন্দর করে দুপাতার মাঝে সাজিয়ে দিতে হবে।

.

আবেদনের আরো একটি ধাপ হলো রিকমেন্ডেশন লেটার। আপনার বিশ্ববিদ‍্যালয় জীবনের তিনজন শিক্ষককে রাজি করাতে হবে যারা আপনার জন‍্য অক্সফোর্ডের অনলাইন পোর্টালে নিজের একাডেমিক -মেইল দিয়ে লগইন করে একটি প্রশংসাপত্র লিখে দিবেন। এই ধাপে আপনার শিক্ষক কী লিখলেন তার উপর আপনার চান্স পাওয়াটা অনেকাংশেই নির্ভর করবে। আর সবশেষে আপনাকে নিজের ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণের জন‍্য IELTS/TOEFL পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। অক্সফোর্ডের জন‍্য আপনার IELTS স্কোর . থাকা উচিত। IELTS প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত জানতে আপনি www.10minuteschool.com সাইট থেকে আমার লেকচারগুলো দেখে নিতে পারেন।





সুতরাং, প্রস্তুতিটা বেশ লম্বা সময়ের ব‍্যাপার। অক্সফোর্ডের অধিকাংশ ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে। বৃত্তিসুবিধা পেতে চাইলে অবশ‍্যই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মাঝে আপনাকে ৭৫ পাউন্ড ফি সহকারে আবেদনপ্রত্র জমা দিতে হবে। আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড না থাকে তাহলে ডাচ-বাংলা ব‍্যাংক থেকে ভার্চুয়াল ডেবিট কার্ড বানিয়ে এই ফি পরিশোধ করতে পারবেন। আবেদনপত্র জমার দুমাসের মাঝেই আপনাকে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। অনেক কোর্সের জন‍্য আপনাকে স্কাইপ ইন্টারভিউতেও অংশ নিতে হতে পারে। 


চান্স পাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় বৃত্তি সংক্রান্ত চিন্তা। অনেক ডিপার্টমেন্ট তার সেরা কিছু শিক্ষার্থীকে সরাসরি বৃত্তি দিয়ে দেয়। সেটা পাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ‍্য ব‍্যাপার। এরপর অক্সফোর্ড চান্সপ্রাপ্তদেরকে অন‍্যান‍্য নানা উৎস থেকে ফান্ড খুজেঁ দেয়। এই বৃত্তি নিশ্চিত হতে মে-জুন মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। বাংলাদেশীদের জন‍্য খুবই ভালো একটি সুযোগ হলো কমনওয়েলথ স্কলারশীপ, শিভেনিং স্কলারশীপ এবং বঙ্গবন্ধু ফেলোশীপ। তবে এই বৃত্তিগুলোর জন‍্য আপনাকে আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে।


আর স্কুলের শিক্ষার্থীরা যারা স্নাতক পর্যায়েই অক্সফোর্ডে আবেদন করতে চাও তাদের জন‍্য পরিশ্রমটা আরো একটু বেশি করতে হবে। অনেক কোর্সের জন‍্যই তোমাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ইন্টারভিউ পাশ করে তারপর চান্স পেতে হবে। তবে স্নাতক পর্যায়ে বাংলাদেশীদের জন‍্য বৃত্তির সংখ‍্যা খুবই কম।


আমি কখনোই বলবো না যে, অক্সফোর্ডে খুব সহজে চান্স পাওয়া যায়। অবশ‍্যই প্রক্রিয়াটা অনেক লম্বা এবং এর জন‍্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু, চিন্তা করে দেখুন আপনি যদি একবার উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারেন তাহলে এমন একটা শহরে থাকার সৌভাগ‍্য হবে যেখান থেকে আধুনিক বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার শুরু হয়েছে। অক্সফোর্ডের রাস্তায় হেটেঁ বেড়ানোটাই অনেক বড় একটা সৌভাগ‍্য। কারণ, আপনার ক্লাস হবে রাজপ্রাসাদের মতো বিল্ডিং-, আপনাকে থাকতে দেয়া হবে কয়েকশ বছরের ঐতিহ‍্যবাহী কলেজে এবং আপনি খাবার খেতে পারবেন হ‍্যারি পটার মুভিতে দেখানো ডাইনিং টেবিলগুলোতে বসে। 


মানুষ তার স্বপ্নের মতো বড়। সবার জন‍্য রইলো শুভকামনা। 





Contact

Hi there! Please leave a message and I will reply for sure. You can also set an appointment with me for the purpose of Motivation, Counselling, Educational Advising and Public Speaking Events by filling this form up with your contact info.

© 2023 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.