একটি বিয়ে ও ফটোগ্রাফারের অত‍্যাচার
Social Issues

একটি বিয়ে ও ফটোগ্রাফারের অত‍্যাচার

May 5, 2017   |    16270


প্রায় দুবছর আগের এক বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা। শীতকালে রাত :০০ টায় কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকেই বেশ টাশকি খেলাম।.

 

প্রথমে ভাবলাম, আমি হয়তো ভুল জায়গায় এসেছি। এখানে বিগ বাজেটের মুভির শুটিং চলছে।

 

হঠাৎ, পাশ থেকেই এক বন্ধু ডাক দিলো। মুহুর্তেই বুঝতে পারলাম ভেন্যু ঠিকই আছে। এবং শুটিংও ঠিকই চলছে। তবে শুটিংটা হলো Wedding Video এর।

 

তো, আমি অনেক্ষণ ধরে বুঝতে চেষ্টা করলাম মুভির শুটিং পরিমাণ লাইট, ্যামেরা, স্লাইডার (যেটার উপর ্যামরা স্মুথলি পিছলা খায়), মই (্যাডার লিখতে ইচ্ছা করতেসে না) নিয়ে কেন একজনের বিয়ের ভিডিও করা হচ্ছে?

 

ঘটনার তো তখন কেবল শুরু! হবু জামাই বউ গেলেন কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে। সেখানে হবে আউটডোর চিত্রধারণ।

 

প্রথমে জামাই-বউয়ের চাঁদবদন এবং পূর্ণিমার চাঁদকে একই সরলরেখায় রেখে ছবি তুলতে ফটোগ্রাফার সাহেব পাক্কা ২০ মিনিট লাগালেন।

 

শীতের রাত। ততক্ষণে বউয়ের গরম লাগতে শুরু করলো। তার হালকা উষ্মায় বোঝা গেলো ফারজানা শাকিল আপার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকায় এই চাদঁবদনটি এক রাতের জন্য তিনি ্যানেজ করেছেন। আজ রাতের বাকি অংশ তার এই মেকাপ ঘষে তুলতেই ্যয় হবে।

 

হঠাৎ, হাফপ্যান্ট পড়া ফটোগ্রাফার সাহেব জামাইকে বললেন:

 

            আপুকে কোলে তুলুন।

 

আমরা তখন বেশ বিব্রত! উত্তেজনাটাও টান টান।

 

বউকে কোলে তোলা হলো। পিছন থেকে আসলো ্যানের বাতাস। তার উপর ছড়িয়ে দেয়া হলো গোলাপের পাপড়ি! কিন্তু….

 

এই বার সমস্যা বাধাঁলো ্যামেরার ফোকাস। উনি কোন ভাবেই ঠিক থাকছেন না।

 

পাপড়ি-বউ-জামাই অবশেষে ১৫ মিনিট পর একই ফোকাস তলে আসলেন। আরো একটি ছবি হলো। বিয়ে পড়ানো কিছুটা দেরি করে সেই ছবি সাথে সাথে আপলোড হলো ফেইসবুকে।

 

যতক্ষণে বউ তিন বার কবুল বললেন ততক্ষণে সেই ছবিতে ১২৭ টা লাইক, টা শেয়ার। বিয়েটা অবশেষে সমাজ সিদ্ধ হলো।

 

চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। অতিথিরা আসেন দলে দলে। এদের মধ্যে ৯২% কে জামাই বউ জীবনে ্রথম বার দেখছেন। আর প্রায় ৯৭% জামাই-বউয়ের জীবনে গুরুত্বহীন।

 

তবুও তাদের কেন দাওয়াত দেয়া হলো?

 

কারণ, তারা জামাই-বউয়ের বাবা-মার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জামাইয়ের বাবার ৩য় কাজিনের ২য় মেয়ের জামাই লিটন সাহেব তার বাচ্চা সমেত আসলেন। অবশ্যই তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা সেটা প্রমাণও করলেন বড় সাইজের গিফট হাতে প্রবেশ করে।

 

প্রথম সিটিং- রাতের খাবারটা খেয়ে নিলেন। তারপর, জামাই-বউয়ের সাথে পরিচিতি পর্ব ছবি।

 

উপর্যুপরি ফ্লাশ লাইটে বউয়ের চোখ তখন অন্ধ তারপরও আপু হাসির ফিল্টার দিয়ে ্যামিলি ছবি তুললেন।

 

৩০ মিনিটে বিয়ে খাওয়া শেষ। এলাম, খেলাম, চলে গেলাম। অসাধারণ সৌজ্য সাক্ষাৎ হলো। পারিবারিক সৌহার্দ্যের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত!

 

বিয়ের অনুষ্ঠানের শেষ অংশে এসে আবার ফুটেজ খেলেন ফটোগ্রাফার সাহেব। বউকে এবার মুরুব্বিদের পা ছুতেঁ হবে। উনি স্লো-মো তুলবেন! কি আর করার?

 

উনার ঘন্টার ফি দেড় লাখ টাকা। বিয়ের মোহরানার আগে ফটোগ্রাফারের বিল দেয়ার নিয়ম আছে। নইলে তাদের পেইজ থেকে ছবি আপলোড দেয়া হবে না।

 

স্লো-মো তোলা হলো। জামাইয়ের পরিবারেরবউ তুলে আনা সম্পন্ন হলো।

 

সেই বিয়ে খেয়ে বাসায় এসে বেশ অস্বস্তি লাগলো। চিন্তা করলাম, সোশাল মিডিয়া সিদ্ধ বিয়ে করতে আমার ৩০-৪০ লাখ টাকা দরকার। আমি তো শালা ১০ মিনিট স্কুলের কেমিশ্ট্রি টিচার! আমার বিয়ে করার তোঅওকাদ”- হবে না।

 

আর যাই হোক, নিজের জীবন সঙ্গীর উপর জুলুম করে হাফপ্যান্ট পড়া এক ্যাটার কথায় আমি শীতের রাত্রে ঘামতে চাই না।

 

অবশেষে গতকাল রাতে কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

 

আমার এক কাজিনের বিয়ে। ছোট বেলা থেকেই আমরা একসাথে মারা-মারি করে বড় হয়েছি। সুতরাং. আমি বড়-যাত্রী যাবো। অনেক আয়োজন হচ্ছে।

 

সকাল :০০ টায় গেলাম ১০ মিনিট স্কুলের অফিসে। সন্ধ্যা :০০ টা পর্যন্ত টিচাদেরকে ট্রেনিং দিলাম। তারপর সবাই বসে হাল্কা আড্ডা।

 

:০০ টা নাগাদ একটা সিএনজি নিয়ে গেলাম ছোট্ট একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। সবাই দেখি সেখানে উপস্থিত। সবাইকেই আমি ভালো করেই চিনি। গেস্ট লিস্ট সর্বমোট ৭০ জনের মতো হবে।

 

সারাদিনের কাজের পর বেশ খিদা লাগলো। এক বাটি ্যুপ নিয়ে হাটঁতে হাটঁতে কথা বললাম অনেক দিন ধরে দেখা হয় না এমন মানুষ গুলোর সাথে।

 

মাঝখানে একটা অতি সাধারণ্যামেরাম্যান-কম-ছেলের-ছোট-ভাইয়ের-ক্লাসমেট-বেশিগোত্রের বন্ধু দেখা গেলো। তাকে খুব একটা বেল দেয়া হলো না।

 

গল্প করতে করতে সবার সাথে এক পশলা খাবার খেলাম। তারপর ছেলের নিকটাত্মীয় হিসেবে বউ-জামাইয়ের টেবিলেও বসার আমন্ত্রণ! ভদ্রতার খাতিরে এক বাটি ্যুপ নিয়ে গল্প করতে বসলাম।

 

্যামেরাম্যান কে দূরে যেতে বলা হলো। মেয়ে পক্ষের কোন শালা-শালী এসে আরো এক পিস রোস্ট খাওয়ার অত্যাচার করলো না। মনে হলো, বাসার ডাইনিং টেবিলে সবাই মিলে খেতে বসেছি।

 

শান্তমনে বাসায় এসে রাতে ঘুম দিলাম।

 

ইশ! সবাই যদি শো-অফ করার জন্য ছবি-তোলা-নামক-অত্যাচারটা বাদ দেয় তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো কত সুন্দর হয়। সাথে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ দুয়েক টাকাও বাচেঁ।

 

The innate desire to be popular in social media has made us the most unsocial ever.

 



Contact

Hi there! Please leave a message and I will try my best to reply.

© 2024 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.