ধর্ষণ নিয়ে নানাবিধ জিজ্ঞাসা ও তার উত্তর
May 5, 2017 | 15933
1. কোন ধরণের যৌনকর্মকে ধর্ষণ বলা যাবে?
উত্তর: পেনাল কোড
(1860) অনুচ্ছেদ-16
অনুসারে,
• কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক করা হলে।
• কারো সম্মতির বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক করা হলে ।
• কাউকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অথবা আঘাত করার পর সম্মতি অর্জন করে যৌন মিলন করলে।
• ছেলেটি মেয়েটির স্বামী নয়। অথচ,
মেয়েটি নিজেকে সেই ছেলের স্ত্রী বলে মনে করছে। এঅবস্থায় সম্মতি নিয়ে যৌন মিলন করলেও তাকে ধর্ষণের আওতাভুক্ত করা যাবে। তাই,
মিথ্যা বিয়ের আশ্বাস দিয়ে যৌনকর্ম করলেও তা ধর্ষণ বলে গণ্য হতে পারে ।
• 16 বছরের চেয়ে ছোট কোন মেয়ের সাথে সম্মতি/অসম্মতিতে যৌন মিলন করলে। মূলত,
এর থেকে ছোট বাচ্চার যৌনমিলনের সম্মতিকে আদালত সম্মতি বলে গণ্য করে না।
• ঘুমের সময় কারো সাথে যৌন মিলন করলে।
(সম্মতির অভাব)
• মাতাল অবস্থায় কারো সাথে যৌন মিলন করলে।
(সম্মতির অভাব)
ইত্যাদি…
2. কেবল জোরপূর্বক যোনিপথের সঙ্গমই
(Vaginal Sex) কি ধর্ষণ?উত্তর:
না!
যোনিপথ ছাড়া পায়ুপথ
(Anal), মৌখিক
(Oral Sex/ Blow Job) যৌনমিলনও ধর্ষণ বলে গণ্য হয় যদি তাতে উভয়পক্ষের ইচ্ছা ও সম্মতি না থাকে। কাউকে বলপূর্বক বিবস্ত্র করা হলে সেটাকেও
Attempt to Rape বলে গণ্য করা যেতে পারে।
3. বৈবাহিক জীবনে কি ধর্ষণ সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ। যদি স্ত্রীর সম্মতি ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামী যৌন মিলন করে তাহলে সেটাও ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে।
4. ধর্ষণ কি কেবল মেয়েরাই হয়?
উত্তর: না। ছেলেরাও ধর্ষণের শিকার হতে পারে। আমাদের দেশে বিশেষ করে ছোট ছেলে শিশুরা অন্য পুরুষ কর্তৃক পায়ুপথে ধর্ষণের শিকার হয়। কারাগারে অন্য কয়েদীদের দ্বারা ছেলে কয়েদীরা প্রায়ই ধর্ষণের শিকার হয়। তাই,
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে যে কেউ ধর্ষিত হতে পারে।
5. ধর্ষণ কি কেবল অপরিচিত মানুষের দ্বারাই হয়?
উত্তর: না। পৃথিবীর
85 শতাংশ ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতা ধর্ষককে আগে থেকেই চিনতো। মূলত,
বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি যেমন-
চাচা,
মামা,
দাদা,
কখন বাবা,
গৃহশিক্ষক,
টিচার,
পারিবারিক বন্ধু,
দূর সম্পর্কের আত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের ঘটনাই বেশি ঘটে। এবং এই পরিচিত মানুষের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার পর অধিকাংশ ঘটনাই পারিবারিকভাবে ধামাচাপা দেয়া হয়।
6. ধর্ষণের সময় কি মেয়েটিকে অবশ্যই বাধা প্রদান করতে হবে?
বাধা না দেয়াই কি সম্মতি?
উত্তর: বাধা প্রদান করা আবশ্যক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণ শুরু হবার পর মেয়েটি বাধা দিতে ভয় পায় কিংবা বাধা দেবার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই,
মেয়েটি বাধা দিয়েছিলো কিনা তা নিয়ে মাথা ব্যথা করা অবান্তর।
7. পৃথিবীতে কয়জন ধর্ষকের শাস্তি হয়?
উত্তর: প্রতি
100টি ধর্ষণের মাত্র
5টি পুলিশ পর্যন্ত যায়।
3টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আর,
মাত্র
1টির শাস্তি হয়। সুতরাং,
ধর্ষণ করার পর শাস্তি হওয়ার নজির খুবই কম। অধিকাংশ ধর্ষণ অজানাই থেকে যায়। তাই,
একবার ধর্ষণের পর ধর্ষকের সাহস বেড়ে যায় এবং সে বার বার এই খারাপ কাজটি চালিয়ে যায়। তাই,
আপনি যদি নির্যাতিত হন,
তাহলে অন্যদের কথা বিবেচনা করে হলেও আদালতে যান। আপনি মেনে নিলেও আপনার ধর্ষক পরবর্তীতে অন্য আরেকটি মেয়ের জীবন নষ্ট করবে।
8. কেউ ধর্ষিত হলে কি করবেন?
উত্তর:
• ধর্ষিত ব্যক্তিকে গোসল করতে বারণ করবেন। গোসল করলে যোনিপথ/পায়ুপথ/মুখে লেগে থাকা বীর্য বা স্পার্ম ধুয়ে চলে যাবে। এতে
DNA Test করা কঠিন হয়ে যাবে।
• যে কাপড়ে ধর্ষিত হয়েছে সেই কাপড়টি কোন ভাবেই ধুয়ে ফেলবেন না। কাপড়টিকে একটি কাগজের ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। কোনভাবেই পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করবেন না।
• ধর্ষিত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব
One Stop Crisis Center এ নিয়ে যান । যত দেরি করবেন তত ধর্ষণের আলামত নষ্ট হতে থাকবে।
(72 ঘন্টার পর
DNA Test করা অনেক কঠিন হয়ে পরে)।
• ধর্ষিত ব্যক্তির নখ কাটতে বারণ করবেন। কারণ,
ধর্ষণের সময় ধস্তাধস্তিতে ধর্ষকের কোষ ধর্ষিতার নখে লেগে থাকে। এটা
DNA Test এ সাহায্য করতে পারে।
• ধর্ষিত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সাহস যোগান। কারণ,
ধর্ষণ পরবর্তী আইনী প্রক্রিয়া অনেক নিষ্ঠুর। তাই বলে,
ধর্ষককে ছেড়ে দিবেন না। সে একবার পার পেয়ে গেলে সেই কাজ আবার করবে। আরো একটি জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করবে।
9. কোন ধরণের যৌন মিলন ধর্ষণ নয়?
উত্তর: নিচের সবগুলো বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে সেই যৌনমিলন ধর্ষণ নয়:
• উভয়পক্ষের ইচ্ছা থাকলে
• উভয়পক্ষের মৌখিক সম্মতি থাকলে
• উভয়পক্ষই
16 বছরের বড় হলে
• উভয়পক্ষই স্বজ্ঞানে থাকলে
• কোন পক্ষই যদি অন্য জনকে কোন মিথ্যা বিয়ের আশ্বাস না দিয়ে থাকে
• কোন রকম আঘাতের ভয়/ভীতি/চাকুরি হারানোর ভয় ইত্যাদি দেখানো না হলে
সেই যৌন মিলনটিকে সম্মতিপূর্ণ যৌনমিলন বলা হবে।
10. খোলামেলা পোষাক পরা মেয়েরাই কি শুধু ধর্ষণের শিকার হয়?
উত্তর: না। ধর্ষণের সাথে ধর্ষিতার পোশাকের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে সালওয়ার কামিজ পরা নারীরাই সবচেয়ে বেশি ধর্ষিত হচ্ছে। মনে রাখবেন,
মেয়ের পোষাককে কোন ভাবেই ধর্ষণের কারণ বলে দাবী করা যাবে না। দায়ী করুন ধর্ষকের কুৎসিত মনকে।
আমাদের দেশে একটি মেয়ে ধর্ষিত হবার পর এই সমাজ মেয়েটির কাপড়কে দোষ দিয়ে তাকে বার বার মৌখিক ধর্ষণ করে। আসুন,
এই কুৎসিত মানসিকতা পূর্ণ সামাজিক ধর্ষণ বন্ধ করি। কোন মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে তা জানলে,
তাকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন। এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও যে মেয়েটি বেচেঁ থাকতে পারে তার প্রতি শ্রদ্ধা আসাটা স্বাভাবিক। তারা অসাধারণ মানসিক শক্তির অধিকারী!
You are the source of our inspiration, our Mental Strength.
লেখক: ঢাকা মেডিকেলের
DNA Lab এ একবছর ধরে শিক্ষানবিশ গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এই ল্যাবেই আদালতের প্রয়োজনে যাবতীয়
DNA Test করা হয়।