ইয়ামানাকা
May 27, 2020 | 3005
২০১২ সালের ৯ অক্টোবর। মেডিসিনের নোবেল প্রাইজের ঘোষণা আসলো। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সিনয়া ইয়ামানাকা আর গুরডন নামক দুই ভদ্রলোক রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ফিল্ড মোটামু্টি কাপিঁয়ে দিয়েছেন। আমাদের ত্বকের কোষ থেকে কোনদিন কিডনী, লিভার বা হার্টের কোষ জন্ম নেয় না। কারণ, এর সবাই পরিণত কোষ। ইয়ামানাকা এই ত্বকের কোষকে “বায়োলজিকাল টাইম ট্রাভেল” করিয়ে ভ্রূণের স্টেম সেলের পর্যায়ে নিয়ে যান। তারপর সেই স্টেম সেল থেকে যেকোন কোষ বানিয়ে দেখান। ওই দিন আমি ফেইসবুকে দুই ভদ্রলোকের ছবি এক করে একটা কভার ফটোও দিয়েছিলাম। চাইলে সেটা ঘেঁটে দেখতে পারেন।
কি দরকার এই কাজের?
অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট করার পর প্রায়ই রিজেকশন হয়। কারণ, ডোনারের অর্গানের সাথে পেশেন্টের অর্গান মিলে না। ইয়ামানাকার আবিষ্কারের পর ঘটনা বদলে গেলো। এখন পেশেন্টের ত্বকের কোষ নিয়ে সেটাকে “রি-প্রোগ্রাম” করে হার্ট, কিডনী, লিভার বানানো সম্ভব। কোন রিজেকশনের চান্স নেই; কারণ আপনি নিজের কোষ থেকে বানানো অঙ্গ পাচ্ছেন। রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ফিল্ডে ইয়ামানাকার আবিষ্কার সম্ভবত সবচেয়ে বড় অবদান।
২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কোর্সে আমি ইয়ামানাকা ফ্যাক্টর ব্যবহার করে একটা ইন্ডাস্ট্রী তৈরির আইডিয়া দিয়েছিলাম। আমার সহপাঠীদের অনেকেই আইডিয়াটা পছন্দ করেছিলো। পরবর্তীতে দেখলাম Organovo নামক একটা কোম্পানি সেই আইডিয়াটা বাস্তবায়নও করে ফেলে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, “একজন মানুষের ত্বকের কোষ নিয়ে সেখান থেকে স্টেম সেল বানানো হবে। সেই স্টেম সেল থেকে যেকোন কোষ তৈরি করা হবে। সেই কোষগুলো 3D প্রিন্টারে দিয়ে একটা অঙ্গ বানিয়ে ফেলা হবে।”
আজ অক্সফোর্ডের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে “জেনকিনসন মেমোরিয়াল লেকচার” দিতে আসেন সেই সিনয়া ইয়ামানাকা। আমি এই সুযোগ মিস করার পাত্র নই। সকালে ল্যাবের কাজ সেরে তিনটা নাগাদ সাইকেল চালিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ৩.১৫ মিনিটে সামনের সারির ছাত্র হয়ে বসলাম। লেকচার শুরু ৪.০০ টায়। ভাবলাম কফি খেয়ে আসি। এক কাপ ল্যাতে অর্ডার করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমার ঠিক পেছনে এক জাপানি ভদ্রলোক পানি কেনার জন্য অপেক্ষা করছে। অন্তত ৩০ সেকেন্ড তব্দা খেয়ে তাকিয়ে থাকার পর বুঝলাম আমি এতক্ষণ ধরে একজন নোবেল বিজয়ীর সামনে দাড়িঁয়ে কফির জন্য অপেক্ষা করছি!
জীবনটা অনেক সুন্দর। একটু বেশীই। ভাগ্যিস অক্সফোর্ডে এসেছিলাম!