২০০ বছর পর পিতা-পুত্রের পরিচয়
May 27, 2020 | 6818
থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬)। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের Founding Fathers-দের মধ্যে অন্যতম। মার্কিনীদের বিখ্যাত Declaration of Independence এর প্রধান রচয়িতাও ছিলেন জেফারসন। ১৮০১ থেকে ১৮০৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু, তার সম্পর্কে একটা চাপা গুঞ্জন চলে আসছে প্রায় দু’শ বছর ধরে।
থমাস জেফারসনের বাসায় স্যালি হেমিংস নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা দাসী হিসেবে কাজ করতেন। এক পত্রিকার সূত্রমতে, স্যালি হেমিংসের সাথে থমাস জেফারসনের ছিলো গভীর প্রেমের সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, স্যালি হেমিংসের তৃতীয় সন্তান এস্টনের গায়ের রং ছিলো সাদাটে। অনেকেই ধারণা করতেন, এস্টন হচ্ছে জেফারসন আর হেমিংসের ভালোবাসার সন্তান। কিন্তু, প্রেসিডেন্ট জেফারসন ও একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলার বিবাহ-বহির্ভূত প্রণয় তৎকালীন আমেরিকান সমাজে খুবই সংবেদনশীল বিষয় হয়ে দাঁড়াতো। তাই, নানাভাবে এই প্রণয়ের কথা ধামাচাপা দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৮২৬ সালে থমাস জেফারসন এই বিশাল ধোয়াঁশা অমিমাংসিত রেখেই মৃত্যুবরণ করেন।
প্রায় দু’শ বছর পরের কথা। ততদিনে জেফারসন, স্যালি হেমিংস, এস্টন— সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু, বিজ্ঞান ততদিনে চলে গেছে কোষের ভেতরের ডিএনএ পর্যন্ত। সম্পর্ক সনাক্তকরণে ডিএনএ টেস্ট এখন আমাদের সমাজে নিত্যদিনের ব্যাপার। ১৯৯৬ সালে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইউজিন ফস্টার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি জেফারসন ও এস্টনের মাঝে কোন সম্পর্ক যদি থাকে তা প্রমাণ করেই ছাড়বেন।
কিন্তু শত বছর আগে মারা যাওয়া তিনজন মানুষের সম্পর্ক আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন? তাদের সবার লাশের অবশিষ্টাংশ কিংবা অস্তিত্ব আজ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
উত্তরটা লুকিয়ে আছে Y ক্রোমোসোমে। আমাদের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় X ও Y নামক দুটি ক্রোমোসোজ দ্বারা। XX হলে সন্তান মেয়ে হয়; XY হলে সন্তান হবে ছেলে। Y-ক্রোমোসোমটা বাবার কাছ থেকে তার সব ছেলে সন্তানদের মাঝে অপরিবর্তিত অবস্থায় চলে যায়। যেহেতু মেয়ে হতে কোন Y-ক্রোমোসোম দরকার হয় না, সেহেতু বাবার Y-ক্রোমোসোমটা কখনই মেয়ের শরীরে যায় না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, Y-ক্রোমোসোমটা একই পরিবারের সব পুরুষ সদস্যদের মাঝে সম্পূর্ণ মিলে যাবে। আপনার দাদা, আপনার বাবা, আপনার চাচা, অাপনার সব চাচাতো ভাই এবং তাদের ছেলে সন্তানদের Y-ক্রোমোসোম সম্পূর্ণ অবিকল। তাই, Y-ক্রোমোসোম ব্যবহার করে বাবার দিকের পারিবারিক সম্পর্ক খুব সহজেই বের করে ফেলা যায়।
আমাদের ড. ফস্টারও তাই Y-ক্রোমোসোমকেই অস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন। কিন্তু, কাকে পরীক্ষা করবেন?
অনেক খোজঁ লাগানোর পর থমাস জেফারসনের চাচা ফিল্ড জেফারসনের সপ্তম পুরুষের এক ছেলে সন্তানকে খুঁজে পাওয়া গেলো। তিনি পরীক্ষায় অংশ নিতেও রাজি হলেন। জেফারসনের দিকের ছেলে আত্মীয় তো মিললো। কিন্তু, অন্য পক্ষের কি হবে?
এস্টন হেমিংসের চতুর্থ পুরুষের এক ছেলেকেও খুজেঁ পাওয়া গেলো। ড. ফস্টার তার পরীক্ষা শুরু করলেন। Y-ক্রোমোসোমের এক মাথা থেকে অন্য মাথা মিলিয়ে দেখা হলো এই দুই পরিবারের উত্তরসূরীদের মাঝে। সেই পরীক্ষার ফলাফলটা ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা Nature-এ ফলাও করে প্রকাশিত হয়: Jeffersen fathered slave’s last child. প্রবন্ধটিতে দেখানো হয়, দুই পরিবারের Y-ক্রোমোসোমটা প্রায় একশতভাগ মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এস্টন হেমিংস আসলে এস্টন জেফারসন; আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের ঔরসজাত সন্তান। অবশেষে প্রায় দু’শত বছরের পুরোনো পিতা-পুত্রের সম্পর্ক বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হলো।
Science does not guarantee pleasant information. It only promises the truth.