হিন্দী সিরিয়াল vs গেইম অফ থ্রোন্স
Jul 24, 2017 | 8021
কিউকী সাস ভি কাভি বাহু থি - কুমকুম - জেসি জেসি - দিল মিল গায়ে (পার্সোনাল ফেভারিট) ইত্যাদি নামধারী হিন্দী নাটক বছরের পর বছর ধরে আমাদের দেশের মা-বোনদের (কোন কোন ক্ষেত্রে আমার মতো ছেলেদের) জীবনের রাত 9-11টা সময়টুকুকে কূটনামী/ছলনা অথবা উৎসবের আনন্দে মাতিয়েছে। আমাদের দেশের অনেক মেয়েই বাঙালী উৎসবের চেয়ে ‘কারভাচাৎ কি ব্রাথ’ অথবা ‘হোলি’ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে। এই বিষয়টি নিয়ে মূলত ছেলেদের নাট-সিটকানো স্বভাবটির কোন সীমা নেই।
হিন্দী অথবা স্টার জলসার সিরিয়াল মানেই খ্যাত! সবার ধারণা, যারা এসকল সিরিজ দেখে তাদের জীবনে কূটনামী ছাড়া অন্য কিছু করার সময় নেই। এছাড়াও হিন্দী সিরিয়ালের বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে এজাতীয় “কিউলজ পিপলজস” নানা রকম দোষ ধরেন। যেমন-
১. চরিত্র বদল: হিন্দী সিরিয়ালের খুবই কমন বৈশিষ্ট্য। দিল মিল গায়ে সিরিজের রিদিমা চরিত্রটির অভিনেত্রী বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা চাকরী করার মতো। পোস্ট খালি হলেই নতুন অভিনেত্রী নিয়োগ দেয়া হয়।
২. মৃত মানুষ ফেরত আসা: সবচেয়ে অবান্তর বিষয়গুলোর একটা। নানা প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করে 2 বছর আগে মারা যাওয়া চরিত্রকে ফিরিয়ে আনা হয়।
৩. অবান্তর নাটকীয়তা: এইটা অন্যতম বিরক্তিকর ব্যাপার বলে ধরা হয়। একই মেয়ের মুখ ঘুরানো বার বার দেখিয়ে সিরিয়াস মুড তৈরি করা হয়। কখনো শত্রুর গলায় ছুরি ধরে এক পর্ব ধরে তাকে কেন মারা হচ্ছে সে বিষয়ক শ্লোক গাওয়া হয়।
৪. কুসংস্কার: শনিবার গোসল করলে পরীক্ষায় ফেল করবে, উমুক রাতে জন্ম হয়েছে বলে সে অলক্ষী জাতীয় ঘটনার তো কোন শেষই নেই হিন্দী সিরিয়ালে!
এবার আসুন হালের ক্রেইজ গেম অফ থ্রোন্সের দিকে তাকিয়ে দেখি:
১.
Daario Naharis: খালিসীর প্রেমিক এবং দ্য সেকেন্ড সান্সের দলপতি। তৃতীয় সিজনে এই চরিত্রতে অভিনয় করেন এড স্কেরিন। পরবর্তী সিজনে তার জায়গায় আসেন মাইকেল হুইসম্যান। খুবই সুন্দর করে সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারার একজনকে ডারিও নাহারিস বানানো হলো! সবাই খুশি মনে তা মেনে নিলো।
২.
Jon Snow: পঞ্চম সিজনের শেষ পর্বে নাইটস ওয়াচের কর্তাবৃন্দ একত্রিক হয়ে জন স্নোর পেটে মিনিমাম 10টা ছুরি ঢুকান। সিজন সিক্সের দ্বিতীয় পর্বে রেড ওম্যান ‘মেযিক’ দেখিয়ে জন স্নোকে বাচিঁয়ে তুললেন। সবাই অতি আনন্দে ব্যাপারটা মেনে নিলো!
৩. The Mountain vs The Viper: সিরিজের অন্যতম সেরা একটি পর্ব। ভাইপার নামধারী প্রিন্স ওবেরিন প্রথম দুই মিনিটেই মাউনটেনকে প্রায় পরাজিত করেই ফেলেছেন। বাকী ছিল শুধুই শেষ ছুরির আঁচড় লাগানো। তখনই শুরু হলো অবান্তর নাটকীয়তা। ওবেরিন তখন যা বলছিলো তার বাংলা ট্রান্সলেশন করলে দাঁড়াবে (লাইনটা পড়ার সময় নায়ক মান্নার কথা ভাবুন, বেশ জমবে!)- “তুই আমার বোনকে মেরেছিস! তুই আমার ভাগ্নেকে হত্যা করেছিস! বল, কে তোকে আদেশ দিয়েছিল?”
ফলাফল: মাউন্টেইন এই সুযোগে শক্তি সঞ্চয় করে ওবেরিনকে ঘায়েল করে। কি সুন্দর টুইস্ট না?
৪. Lord Tyrion: বামুন এই চরিত্রটির জন্মের সময় তার মায়ের মৃত্যু হয়। তাই, তাকে সারাটা জীবন অলক্ষী বলে অপবাদ শুনতে হয়। কুসংস্কার মানার প্রবণতা সেভেন কিংডমের সবার মাঝে বেশ প্রবল।
তাই, আপনার মা-বোন যখন স্টার জলসা/ সনিতে সিরিয়াল দেখতে বসে তখন তাদের “কুসংস্কারী/ কূটনামী/ লেইম” বলার আগে চিন্তা করুন। আপনিও প্রতি সোমবার সকাল সকাল টরেন্টে ডাউনলোড দিয়ে এর থেকে বড় কূটনামী ও কুসংস্কারআচ্ছন্ন সিরিজ দেখছেন।
শাশুড়ী করলেই কূটনামী, আর Cersei করলেই ডিপ্লোম্যাসী, তাই না?