স্বপ্নের এডিনবার্গ
May 19, 2018 | 11941
স্কটল্যান্ডের
রাজধানী এডিনবার্গ
সম্পর্কে একটা
বিখ্যাত
কথা প্রচলিত
আছে- “যে
একবার এডিনবার্গ
গিয়েছে তার
মুক্তি নেই।
সারাটা জীবন
তার সাথে
এডিনবার্গ লেগে
থাকে।”
অনেকেরই মতে,
ইউরোপের শ্রেষ্ঠ
শহর হলো
এডিনবার্গ। জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস,
কলা, পুরাকৌশল— কি নেই এডিনবার্গের
রাস্তায়? এই
কথাগুলো শুধু
বইয়ের পাতায়
এতোদিন পড়েছি।
গত ফেব্রুয়ারি
মাসে সৌভাগ্য হলো স্বপ্নের
এডিনবার্গে পদচিহ্ন
একেঁ আসার।
গল্পের শুরুটা
১০ ফেব্রুয়ারি
২০১৮ রোজ
শনিবার। রাত
১১টার দিকে
অক্সফোর্ডের ব্রডস্ট্রীটে
আমার বন্ধু
ম্যাক
(মো. আনিসুল
করিম)-এর
বাসায় অমিতা,
ইফতি এবং
আমার সাপ্তাহিক
আড্ডা বসলো।
আড্ডার নিয়মিত
সঙ্গী মনজিলুর
রহমান তখন
যুক্তরাষ্ট্রে সূর্যস্নানে
ব্যস্ত।
যাই হোক,
আমার মধ্যে কিছুটা বিরক্তি
বিদ্যমান
ছিলো। গত
একমাস ধরে
একটা কোষের
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
করার চেষ্টা
করছি; সফলতার
নাম নেই।
ইফতিও বেশ
ব্যস্ত
একটা মাস
কাটাচ্ছে। ওর
সাথে এগুলো
নিয়ে আলোচনা
করতে গিয়ে
হঠাৎ বলে
ফেললাম- “ফেইসবুকে
ঢুকলেই দেখি
বন্ধু-বান্ধব
বিয়ে করে
হানিমুনে যাচ্ছে।
আর আমি
সকালে ঘুম
থেকে উঠে
ল্যাবে
যাই। মাঝে
মধ্যেই
ইচ্ছে হয়,
সব ফেলে
রেখে এডিনবার্গ
ঘুরে আসি।”
ইফতি: তাইলে
চলো, আসলেই
যাই।
আমি: এগুলো
খালি বলাই
হয়; করা
হয়ে উঠে
না।
ইফতি: তাইলে
চলো, এখনি
টিকেট কেটে
ফেলি।
আমি: ম্যাক ল্যাপটপটা
দাও।
ম্যাক:
(লাল তোয়ালে
জড়ানো অবস্থায়)
তোমাদের মতি-গতি আমার কাছে
ভালো ঠেকছে
না।
রাত ৩.৩০ মিনিট নাগাদ
এডিনবার্গের প্লেন
টিকেট হাতে
আমি আর
ইফতি খুশি
মনে বাড়ি
ফেরত গেলাম।
১৬ ফেব্রুয়ারি,
শুক্রবার। সকাল
সাড়ে নয়টায়
ল্যাবে
ঢুকলাম। ডিএনএ
সিকুয়েন্সিং এর
রেজাল্ট দেখতেই
চোখ বড়
বড় হয়ে
উঠলো। বাহ!
অবশেষে জেনেটিক
ইঞ্জিনিয়ারিংটা হয়েছে।
নিজের উত্তেজনা
কোনমতে সামাল
দিয়ে আমার
বস সাজিয়াকে
খবরটা জানালাম।
উত্তরে সাজিয়া
বললো- “Amazing, Shamir! Leave early for
your flight. You have earned this vacation!”
হুম! এই
ছুটিটা নিজের
অর্জিত ছুটি
মনে হলো।
দুপুর ২টার
মধ্যে
খাবার খেয়ে
ল্যাব
থেকেই চলে
গেলাম বাস
স্টেশনে। এতোদিনের
ঘোরাঘুড়ির অভিজ্ঞতার
সবচেয়ে বড়
শিক্ষা হলো,
ছোট্ট একটা
ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঘুরতে
শিখা। যারা
বেশ বড়
লাগেজ নিয়ে
ঘুরতে যায়
তাদের দেখে
খুব কষ্ট
লাগে।
অক্সফোর্ডে সেদিন
বেশ রোদ
উঠেছে। ঘটনাটা
খুবই বিরল।
হঠাৎ সূর্যের
এই বদান্যতায় সবাই
অসম্ভব খুশি।
স্টারবাক্সের একটা
বড় কফি
হাতে নিয়ে
বাস স্ট্যান্ডে বসে
আছি। (Starbucks এর কফি মজা
না; আমার
প্রিয় হলো
Costa-র
কফি।) সময়
কাটাতে বাংলাদেশে
এক বান্ধবীকে
ফোন দিলাম।
হঠাৎ ইফতির
মেসেজ আসলো
ফোনে, “এই
বাসে উঠো।”
লাফ দিয়ে
বাসে উঠতেই
দেখলাম, ইফতি
ভেতরে বসে
আছে। আমি
আর ইফতি
শুরু করলাম
আমাদের বহুল
আকাঙ্খিত সেই
সফর। মনে
মনে দুজনই
বললাম, আগামী
তিন বছরে
হয়তো আমরা
দুজন মিলে
ইউরোপটা চষে
ফেলবো। সেই
গল্পগুলো এই
ব্লগে লিখবো
তা ভাবতেই
ভালো লাগছিলো।
বিকাল সাড়ে
পাচঁটা নাগাদ
আমরা গিয়ে
নামলাম লন্ডন
Gatwick এয়ারপোর্টে। প্লেন
ছাড়লো পৌনে
সাতটায়। এপর্যায়ে
ইফতির পরিচয়টা
দিয়ে রাখা
উচিত। হাসান সাদ ইফতি
(ও ‘সাদ’ নামটা
বেশি পছন্দ
করে, যদিও
আমি ওকে
ইফতি বলে
ডাকি)।
উচ্চমাধ্যমিক
পরীক্ষা দিয়ে
সে
“Aerospace Engineering” পড়তে পাড়ি
জমায় জার্মানিতে।
ব্যাপারটা
নিয়ে তার
প্যাশন
এতো বেশি
যে, সে
জার্মান ভাষায়
তার স্নাতক
শেষ করে।
এরপর বিখ্যাত প্লেন নির্মাতা
কম্পানি Airbus-এ ইফতি ইন্টার্নশীপ
করে। পরে
এয়ারবাস ইফতিকে
চাকুরি অফার
করেছিলো। কিন্তু,
আমাদের স্বপ্নের
ফেরিওয়ালা তার
প্যাশনের
কারণে যোগ
দিলেন অক্সফোর্ডের
গবেষণায়। ইফতির
দল Passenger Rocket বানানোর কাজে
মশগুল। আজ
থেকে ২০
বছর পর
আপনি হয়তো
ইফতির বানানো
রকেটে চড়ে
বাংলাদেশ থেকে
আমেরিকায় মাত্র
২ ঘন্টায়
পৌছেঁ যাবেন।
জ্বলজ্যান্ত
রকেট সায়েন্টিস্টের
সাথে প্লেনে
চড়ার মজা
হলো, অনাগত
জ্ঞান লাভ।
প্লেন উড্ডয়ন
থেকে ল্যান্ডিং এর
প্রতিটি মুহুর্তে
ইফতি আমাকে
তার পেছনকার
ফিজিক্সের জ্ঞানটা
বুঝিয়ে দিলো।
আমি “Pringles-Salt & Vinegar” খেতে খেতে চুপ
করে ওর
কথাগুলো শুনতে
থাকলাম। আপনি
কি জানতেন
যে, প্লেনের
ইঞ্জিন বন্ধ
হয়ে গেলেও
প্লেনটা পড়ে
যাবে না?
বরং সেটা
আকাশে ভাসতে
থাকবে! এরকম
হাজারো তথ্য প্রিংগেলসের
সাথে গিলতে
গিলতে এডিনবার্গে
ল্যান্ড
করলাম রাত্র
সাড়ে আটটায়।
ইউরোপ ভ্রমণের
বড় সমস্যা হলো থাকা-খাওয়ার খরচ।
আমার ক্যাম্বব্রীজের ব্লগটা
পড়ে থাকলে
নিশ্চয়ই জানেন
আমি কীভাবে
এই সমস্যার সমাধান করি।
যথারীতি খুজেঁ
পেলাম আমার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র— ডিকেন্স
ভাইয়া এবং
ফ্যান্সি
আপুকে। তারা
আমাদের দুজনকে
তাদের সুখের
সংসারে দুদিন
বাস করার
সুযোগ দিলেন।
এয়ারপোর্টে নেমেই
দেখলাম বড়
করে EDINBURGH
লেখা। সেটার
সামনে ইফতি
একটা ছবি
তুলতে চাইলো।
আমি কিছুটা
ইতস্তত করছিলাম।
হঠাৎ দেখি
দুজন মেয়ে
আমাদের থেকেও
বেশী পাগলামি
করে EDINBURGH-এর D এর মধ্যে দাড়িঁয়ে ছবি
তুলছে। তাদের
দেখে আমাদের
চক্ষুলজ্জাটা কিছুটা
কমলো।
এয়ারপোর্টে আমি
একটা নতুন
অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীণ
হলাম-“ট্রাম”। বিশ্বের অনেক
দেশেই এই
প্রাচীন যানবাহন
এখন বিলুপ্ত
হয়ে গেছে।
কিন্তু, স্কটরা
তাদের ঐতিহ্যে ছাড় দিতে
নারাজ। ট্রাম
মিশে আছে
তাদের ঐতিহ্যের সাথে। পাচঁ
পাউন্ড দিয়ে
টিকেট কেটে
ট্রামে উঠলাম।
ট্রেনের মতো
দেখতে এই
“বাচ্চা ট্রেন”টা এডিনবার্গের রাস্তার
ট্রাম-লাইনের
মধ্য
দিয়ে চলতে
লাগলো। ইফতি
আর আমি
দুচোখ ভরে
রাতের এডিনবার্গের
সৌন্দর্য কুড়োতে
থাকলাম। পুরো
শহরটা বৈদ্যুতিক বাতির
আলোয় আলোকিত।
এডিনবার্গ হলো
প্রাসাদের শহর।
সেই প্রাসাদগুলো
রাতের ফিকে
আলোয় তাদের
আভিজাত্যের
পসরা সাজিয়ে
যেন বসে
আছে।
ট্রাম থেকে
নামতেই দেখি
ডিকেন্স ভাইয়া
গাড়ি নিয়ে
আমাদের জন্য দাড়িঁয়ে আছে।
গাড়ি ছুটলো
বাসার দিকে।
আমাদের চোখ
ছুটলো দুপাশের
দিগন্তে। শহরটার
যেন কয়েকটা
তলা রয়েছে।
একতলা, দুইতলা,
তিনতলা করে
আপনি গুনতে
পারবেন। ধরুন,
আপনি দুইতলার
রাস্তা দিয়ে
যাচ্ছেন। নিচে
তাকালে দেখবেন
একতলার রাস্তা;
উপরে দেখবেন
তিনতলার রাস্তা
দিয়ে গাড়ি
যাচ্ছে। পুরো
ব্যাপারটা
মস্তিষ্কে মেনে
নিতেই একটু
সময় লেগে
যাবে। প্রায়
দশটা নাগাদ
আমরা বাসায়
ঢুকলাম। ফ্যান্সি আপু
আমাদের জন্য খিচুড়ি আর
ভেড়ার মাংস
রান্না করেছে;
ডিকেন্স ভাইয়া
বানিয়েছে টুনা
মাছের চপ।
খাবারের এই
আয়োজন দেখে
তো ইফতি
আর আমার
চোখ এবং
জিহবা তখন
টইটুম্বুর করার
অবস্থা। পেটপূজোর
পর আমাদের
আড্ডা বসলো।
চার বাংলাদেশী
স্কটল্যান্ডের
রাজধানীতে বসে
মাতিয়ে তুললো
তাদের গল্পের
আসর। প্রায়
সাড়ে বারোটায়
জোরপূর্বক নিজেদের
ঘুম পাড়ালাম।
শনিবার সকাল
৬:০০টা।
এলার্মের আগেই
আমার ঘুম
ভেঙ্গে গেলো।
ধাক্কা-ধাক্কি
করে আমি
ইফতিকে উঠিয়ে
বাথরুমে পাঠালাম।
ঘুরতে আসলে
আমাদের এক
নম্বর নিয়ম
হলো, ঘুমিয়ে
সময় নষ্ট
করা যাবে
না। সাতটা
বাজার আগেই
আমরা নেমে
আসলাম এডিনবার্গের
রাস্তায়। সারাদিনের
জন্য
বাসের টিকেট
কেটে ফেললাম
৪.২০
পাউন্ডে। পাবলিক
ট্রান্সপোর্ট ভালো
হলে যেকোন
শহরে ঘুরতে
যাবার মজাটাই
বেড়ে যায়।
বেলা সাড়ে
সাতটার দিকে
আমরা নামলাম
“The Royal Mile” নামক একটা
রাস্তায়।
পুরো এডিনবার্গের
সবকিছু আছে
“The Royal Mile”-এ। রাস্তাটা
এক স্কটিশ
মাইল (প্রায়
১.৮
মাইল) লম্বা।
এর এক
প্রান্তে এডিনবার্গ
ক্যাসেল,
অন্য
প্রান্তে স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত আগ্নেয়গিরি আর্থার্স
সীট। আমরা
মাঝামাঝি একটা
জায়গায় নেমে
ক্যাসেলের
দিকে হাঁটতে
থাকলাম। হাটাঁ
শব্দটা বললে
ভুল হবে;
ধাক্কা খাওয়াটা
অধিক যুক্তিযুক্ত
একটা শব্দ
এই ক্ষেত্রে।
কারণ, রয়াল
মাইল ধরে
হাটাঁ যায়
না। একটা
রাস্তায় এতো
কিছু থাকলে
তো প্রতি
কদমেই একবার
থমকে দাড়াঁতে
হয়। এই
ব্লগের সাথে
যুক্ত ছবিটাও
রয়াল মাইলে
তোলা।
স্কটল্যান্ডের
পার্লামেন্ট ভবনটা
বেশ সুন্দর।
এর পাশেই
দেখলাম, অর্থনীতির
জনক Adam Smith সাহেবের বেশ
বড় একটা
মূর্তি। এর
পেছনে তাকাতেই
চোখে পড়লো
সেন্ট জাইলস
ক্যাথেড্রাল।
এই চার্চের
সামনের দরজাটা
অসাধারণ। এতো
কারুকার্য করা
স্থাপত্য
আমি জীবনে
কমই দেখেছি।
চার্চের গ্লাসগুলো
ভেতর থেকে
তেলরঙের চিত্রে
সজ্জিত। হঠাৎ
চোখে পড়লো
Hume নামক একটা
মূর্তির উপর।
হিউমের পায়ের
বুড়ো আঙ্গুল
ঘষাটা সৌভাগ্যের লক্ষন। তাই
হিউমের সারাটা
দেহে ময়লা
পড়ে কালচে
হয়ে গেলেও
ব্যাটার
বুড়ো আঙ্গুলটা
‘মানুষের-হাতের-ঘষাঁয়’
এখনো বেশ
চকচকে।
হিউমের কাছেই
আছে স্কটদের
বিখ্যাত
কফিশপ The Real Mary King’s Close. কিন্তু, আমাদের
মতো সকালের
পাখিদের জন্য দোকানটা
একটু দেরি
করে খোলে।
আমি আর
ইফতি তখন
বামদিকের রাস্তায়
হাটাঁ দিলাম।
রাস্তাটাকে বলে
স্কট রয়াল
ব্যাংকের
রাস্তা। চোখের
সামনে দেখা
মিললো ওদের
বিখ্যাত
লাইব্রেরীর। প্রতিটি
বিল্ডিং ভিন্টেজ
কালারের এবং
অসামান্য
কারু-কার্যমন্ডিত।
হাতের ডানদিকে
তাকাতে শরীরের
ভিতরে একটা
শিহরণ দিয়ে
গেলো। সাইনবোর্ডে
লেখা- The Elephant House. পাশে ছোট করে
লেখা ‘The birthplace of Harry Potter’. .
জেকে রাউলিং
যখন হ্যারি পটার লেখা
শুরু করেন
তখন তার
আর্থিক অবস্থা
খুবই খারাপ
ছিলো। প্রতিদিন
সকালে তিনি
এলিফেন্ট হাউসে
এসে কফি
অর্ডার করে
সারাদিন বসে
বসে বইটা
লিখতেন। এই
বিখ্যাত
জায়গায় ইফতি
আর আমি
নিজেদের মন
ভরিয়ে ছবি
তুলে নিলাম।
কিন্তু, ক্যাফেটা খুলবে
সকাল সাড়ে
নয়টায়। আমাদের
হাতে তখনো
কিছুটা সময়
ছিলো। আমরা
এডিনবার্গের উপরের
তলা থেকে
তখন নিচের
তলার রাস্তাগুলো
দেখতে থাকলাম।
এক পর্যায়ে
আবিষ্কার করলাম,
এক তলা
থেকে অন্য তলায় নামার
জন্য
সিড়ি পর্যন্ত
আছে। এ
কি! এসেছিলাম
একটা শহর
দেখতে। এখন
দেখছি এর
তলায় তলায়
কয়েকটা শহর।
সাড়ে নয়টায়
আবার ফেরত
এসে দেখি
ইতোমধ্যে
এলিফেন্ট ক্যাফের সামনে
দীর্ঘ লাইন
পড়ে গেছে।
আমাদের জন্য ছোট একটা
টেবিলে দুটো
চেয়ার জুড়ে
দেয়া হলো।
ক্যাফের
ভেতরটায় হাতির
ছোট ছোট
মূর্তি দেখে
নামকরণের স্বার্থকতা
উপলব্ধি করলাম।
মেন্যু
দেখে ইফতি
অর্ডার করলো
স্যামন-ব্রেড-স্ক্যাম্বল্ড
এগ; আমি
প্রায় আট
পাউন্ড গুনে
নিয়ে নিলাম
তাদের ফুল স্কটিশ ব্রেকফাস্ট মিল। তাতে
সসেজ-ডিম-পাউরুটি আর
তাদের জাতীয়
খাবার হ্যাগিসের দেখা
মিললো। আমাদের
দেশে খাবারের
পর আমরা
সাধারণত কফি
খাই। এদের
কালচারে কফি
আগে আসে,
খাবার আসে
পড়ে। সকাল
দশটার মধ্যেই আমি আর
ইফতি যেন
ঘুরে বেশ
সন্তুষ্ট হয়ে
গেছি। এপর্যায়ে
ইফতি টয়লেটে
গেলো। ফিরে
এসে সে
আমাকে টেনে
নিয়ে গেলো।
সারা বিশ্বের
হ্যারি
পটার ফ্যানরা এই
টয়লেটের দেয়ালে
মার্কার দিয়ে
তাদের প্রিয়
লাইনগুলো লিখে
রেখে গেছে।
আমরাও বাথরুমের
হাতলের উপর
নিজেদের চিহ্ন
রেখে যেতে
লিখলাম-
“Shamir
was here. So was Saad.”
বেলা সাড়ে
দশটায় আমরা
আবার নেমে
আসলাম রয়াল
মাইলে। এবার
হাটঁতে হাঁটতে
এক্কেবারে প্রাসাদের
কাছে চলে
এসেছি। হঠাৎ
চোখ গেলো
হাতের বাঁ
দিকে। The Scottish Wishkey Experience- স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত মদের দোকান।
অন্তত দেখার
জন্য
হলেও ভেতরে
ঢুকলাম ইফতি
আর আমি।
প্রায় ১২
থেকে ৮০
বছর পুরোনো
হুইস্কি পাওয়া
যায় দোকানটাতে।
দুই তলা
এই দোকানের
পুরোভাগ জুড়েই
আছে বিশ্বের
সেরা হুইস্কি।
নীচের তলায়
রয়েছে একটা
বার যেখানে
সবাই এক-দুই শট করে
হুইস্কি চেখে
দেখে। সকাল
সকাল সেই
বারের ভীড়
দেখে স্কটিশদের
হুইস্কি প্রীতি
ভালোভাবেই টের
পেলাম।
হুইস্কির দোকানটার
ঠিক উল্টা
পাশেই ঠাঁয়
দাড়িঁয়ে আছে
আমাদের অন্যতম গন্তব্য-
“The Camera Obscura”. সহজ বাংলায়
বলতে গেলে
এটা হচ্ছে
দৃষ্টিভ্রমের একটা
মিউজিয়াম। আলো-আধাঁরির হাজারটা
খেল দেখা
যায় এর
ভেতর। ছাত্রত্বের
প্রমাণ দেখাতে
পারলে মাত্র
সাত পাউন্ড
খরচ করেই
টিকেট কেটে
ফেলতে পারবেন
আপনি। মোট
তিনটি তলায়
এর পসরা
সাজানো। দ্বিতীয়
তলায় রয়েছে-
The Rotating Tunnel. সোজা একটা
অন্ধকার রাস্তার
মধ্য
দিয়ে আপনাকে
হেঁটে যেতে
হবে। কিন্তু,
তার চারপাশে
ছোট ছোট
আলোর বিন্দু
বৃত্তাকার পথে
ঘুরতে থাকবে।
এতে মস্তিষ্কের
ভেতরে মনে
হবে, এই
পুরো টানেলটাই
যেন ঘুরছে।
একবার এর
মধ্য
দিয়ে হেঁটে
যাওয়ার পর
আর এতে
ফেরত যেতে
ইচ্ছে হবে
না। তৃতীয়
তলায় আমার
সবচেয়ে ভালো
লেগেছে- “The Infinity Corridor”. এই পথটার দুইপাশেই
রয়েছে আয়না।
সেই আয়নার
কোন এক
পাশে জ্বলছে
মিট মিট
মরিচা বাতি।
সেটার প্রতিবিম্ব
পরে অপর
পাশের আয়নায়;
সেই বিম্বের
প্রতিবিম্ব পরে
অন্য
পাশের আয়নায়…. এভাবে
চলতে থাকে
অনন্তকাল। এই
করিডোর দিয়ে
হেঁটে যাওয়ার
সময় মনে
হবে আপনার
দুপাশে অসীম
অন্ধকারের রাজ্য; সত্যিকার
অর্থেই তা
অসীম।
Camera
Obscura-র সবচেয়ে
বড় আকর্ষণ
এর ছাদের
৩৬০ ভিউ।
আমাদের শো-শুরু হবে বেলা
১১.১৫
মিনিটে। যথাসময়ে
আমরা উপস্থিত।
জিল নামের
বেশ সুন্দরী
এক স্কটিশ
নারী আমাদেরকে
ছাদের একটা
অন্ধকার রুমে
নিয়ে গেলো।
চারপাশে বেশীর
ভাগই পিচ্চি
বাচ্চা-কাচ্চা।
জিল আমাদেরকে
সুন্দর করে
ব্যাখ্যা করলো এই
মিউজিয়ামের ইতিহাস।
উনিশ শতকের
শেষ দিকে
একজন অপটিশিয়ান
পেরিস্কোপের আইডিয়া
ব্যবহার
করে তৈরি
করেন এই
৩৬০ ডিগ্রী
ক্যামেরা।
জিলের অসাধারণ
বর্ণনায় আমরা
উপভোগ করলাম
এডিনবার্গের ইতিহাস।
প্রদর্শনীর শেষভাগে
এসে জিল
বললো- “If you have liked my show,
remember, my name is Gill. But, if you did not like it, then my name is Jhon.” বের হবার সময়
লক্ষ্য
করলাম, অনেক
পিচ্চিই মজা
করার জন্য জিলকে ‘জন’ বলে
বিদায় জানাচ্ছে।
Camera
Obscura-র ভালো
দিক হলো
একবার টিকেট
কাটলে সারাদিন
যতবার খুশি
এতে প্রবেশ
করা যাবে।
তাই, আমরা
দিনের আলোয়
বাকী এডিনবার্গ
দেখার জন্য তখন বাইরে
বের হয়ে
আসলাম। এবার
আমরা দাড়িঁয়ে
আছি রয়াল
মাইলের শেষ
প্রান্তে। আমাদের
সামনে ইতিহাসের
সব গল্প
নিয়ে দম্ভিত
ভঙ্গিতে তাকিয়ে
আছে- “এডিনবার্গ
ক্যাসেল”। বিখ্যাত
টিভি শো
“গেইম অফ
থ্রোন্স”
দেখার সময়
আমি প্রাসাদের
ভক্তে পরিণত
হই। কিন্তু,
এডিনবার্গ ক্যাসেলটা টিভিতে
দেখা সব
প্রাসাদকেই হার
মানাবে। পুরো
প্রাসাদটার একটা
ছবি তুলতে
হলে আপনাকে
মোটামুটি ৫০০
মিটার দূরে
যেতে হবে।
প্রাসাদের সামনে
ছবি তোলার
জন্য
হাজার মানুষের
ভিড়। এই
সুযোগে দেখলাম
আমাদের বন্ধু
ইফতি এক
সুন্দরী টুরিস্ট
গ্রুপের ফটোগ্রাফার
হয়ে গেলেন।
আমি পাশের
টং দোকান
(ফুড কার্ট)
থেকে এক
কাপ কফি
কিনে গলা
ভিজালাম। বেলা
বাজে তখন
বারোটা। বেশ
উচুঁতে দাড়িয়ে
আমি এডিনবার্গের
সৌন্দর্য দেখছি।
প্রাসাদে ঢুকবার
লাইনটা বেশ
লম্বা। টিকেটও
প্রায় ১৫
পাউন্ডের মতো।
সময়ের অভাবে
তাই আমরা
উল্টো পথে
হাটাঁ দিলাম।
পথে দেখলাম
একটা লোক
স্কটল্যান্ডে
ঐতিহ্যবাহী
পোশাক পরিহিত
অবস্থায় “ব্যাগপাইপ”
বাজাচ্ছে। এই
যন্ত্রটার আওয়াজ
বেশীক্ষণ সহ্য করা কঠিন।
অনেক ভ্রমণকারীকেই
দেখলাম মিনি
স্কার্ট পরা
সেই ব্যাগপাইপারের সাথে
ছবি তুলছে।
পরবর্তী এক
ঘন্টা জুড়ে
আমরা রয়াল
মাইলের অন্য প্রান্তের দিকে
ছু্টলাম। পথে
বেশ মজার
কিছু জিনিস
লক্ষ্য
করলাম। এডিনবার্গের
হোটেল র্যাডিসনটাকে আশেপাশের
বিল্ডিং-এর
সাথে ম্যাচ করাতে পুরাতন-ইটের-প্রাসাদের মতো
করে বানানো।
বাহির থেকে
দেখে মনেই
হবে না
যে, এইটা
একটা পাচঁ
তারকা হোটেল।
ইফতি হঠাৎ
করে একটা
গাড়ির দিকে
আমার দৃষ্টি
আকর্ষণ করলো।
লক্ষ্য
করে দেখলাম,
অনেকেই গাড়িটার
সামনে থমকে
দাড়াঁচ্ছে। বুঝতে
বাকি রইলো
না, ইহা
পৃথিবীর সবচেয়ে
অভিজাত গাড়ি-
The Rolls Royce.
বেলা প্রায়
দেড়টার দিকে
আমরা দুজন
একটা পাহাড়ের
গোঁড়ায় গিয়ে
পৌঁছলাম। Trip Advisor এর মতে, এটি
এডিনবার্গের নম্বর
ওয়ান আকর্ষণ-
“The Arthur’s Seat”. মৃত এই
আগ্নেয়গিরি বেয়ে
উঠতে প্রায়
ঘন্টা খানেক
সময় লাগে।
পুরোটা পথ
জুড়ে রয়েছে
পাথর আর
কাদা। দুপুরের
খাবার বাদ
দিয়ে পাহাড়ে
উঠাটা কতটা
যৌক্তিক সিদ্ধান্ত
ছিলো তা
নিয়ে মনে
মনে প্রশ্ন
করতে থাকলাম।
কিন্তু, বেলা
আড়াইটার দিকে
যখন ইফতি
আর আমি
আর্থার্স সীটের
চূড়োয় গিয়ে
বসলাম তখন
সব কষ্ট
পালিয়ে গেলো।
আমরা আক্ষরিক
অর্থে এডিনবার্গের
চূড়োয় বসে
আছি। চারপাশে
অসম্ভব ঠান্ডা
বাতাস; সেই
বাতাসে গা
এলিয়ে উড়ছে
Raven নামক একধরণের
কাঁক। আমাদের
চোখের সামনে
নর্থ সী;
পায়ের নীচে
এডিনবার্গ শহর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের
এই মহাসমারোহে
আমরা দুজন
মোটামুটি বাকহীন
হয়ে গেলাম।
হঠাৎ পেটের
খুদোটা একটা
জোর-লাথি
মারলো। তাকে
শান্ত করতে
ব্যাগের
ভিতর থেকে
দুটো কলা
বের করলাম।
ইফতি আর
আমি একটা
মৃত আগ্নেয়গিরি
চূড়োয় হাড়-কাপাঁনো বাতাসের
মধ্যে
বসে এডিনবার্গের
সবচেয়ে সুন্দর
দৃশ্য
দেখতে দেখতে
কলা খাচ্ছি।
If
this is not life, I don’t know what is.
বেলা প্রায়
চারটা নাগাদ
আমরা আবার
শহরে ফেরত
গেলাম। সকাল
বেলা বাস
থেকে নামার
পর থেকে
শুরু করে
এতোক্ষণ পর্যন্ত
আমরা কেবল
পায়ে হেটেঁই
চলছি। শক্তিও
বেশ কমে
এসেছে। দুজনেই
বুঝতে পারলাম,
খুব ভালো
একটা মিল
হওয়া দরকার।
যেই চিন্তা,
সেই কাজ।
আমরা ঢুকলাম
নিকটবর্তী একটা
পাবে। সেখানকার
বিশেষ মেন্যু হলো- Buffalo Burger. মহিষের মাংসের
নাম শুনলে
আমাদের দেশের
মানুষ নাক
সিটঁকালেও পাশ্চাত্যে এর বেশ
কদর। দুইটা
প্যাটি,
চিজ আর
ফ্রাইস সহ
বার্গারটায় কামড়
বসাতেই শরীরে
আবার শক্তি
ফিরে এলো।
দিনটা ছিলো
শনিবার। ইংলিশ
প্রিমিয়ার লীগের
ম্যাচ
ডে। সুতরাং,
বেলা চারটার
দিকে পাবে
তখন উপচে
পড়া ভীড়।
আড়-বুড়ো
মানুষেরা বিয়ারে
চুমুক দিতে
দিতে তাদের
প্রিয় দলকে
সমর্থন করতে
এসেছে। ইউরোপের
এই পাব-কালচারটা আমার
বেশ ভালো
লাগে।
ইতোমধ্যে
সূর্য ডুবে
পুরো শহর
নিথর হয়ে
গেছে। রাতের
রয়াল মাইল
দেখতে কেমন
তা বের
করতে আমরা
আবার হাটাঁ
দিলাম এডিনবার্গ
ক্যাসেলের
দিকে। এবার
আর ভীড়
নেই, আছে
শুধুই অন্ধকার।
সেই অন্ধকারে
জ্বল জ্বল
করছে এডিনবার্গের
প্রাসাদ। কিছুক্ষণ
এদিক সেদিক
করে আমরা
আবার Camera Obscura-য় ঢুকে টিকেটের
পয়সা উসুঁল
করলাম। দিনের
শেষটা করলাম
একটা ক্যাফেতে। বেশ
লাস্যময়ী
একজন ওয়েটার
অনেক সময়
নিয়ে আমাদের
জন্য
দুটো “হট
চকোলেট”
বানিয়ে নিয়ে
আসলো। তাতে
চুমুক দিতে
দিতেই আমরা
“আমাদের ড্রিংক
এবং ওয়েটারের
মধ্যে
কোনটা বেশী
উষ্ণ”-
সেই বিতর্কে
মাতলাম। অবশেষে
বাসে চেপে
বাসায় আসলাম
রাত দশটার
দিকে। ডিকেন্স
ভাই ও
ফ্যান্সি
আপু যথারীতি
এডিনবার্গের “Best Host” খেতাব জিততে উঠে
পড়ে লাগলেন।
আজকের রাতে
সার্ভ হলো-
চিকেন বিরিয়ানী।
বাংলাদেশ থেকে
ছয় হাজার
মাইল দূরে
এডিনবার্গের একটা
ছোট বাসায়
চার বাঙালী
আবার মাতলো
খোশগল্পে। সেই
গল্প শেষ
হলো ঘুমের
রাজ্যে।
রবিবার সকাল
৬টা। যথারীতি
আমি আর
ইফতি আবার
এলার্মের আগে
ঘুম থেকে
উঠলাম। সাড়ে
সাতটার মধ্যে বাসে চেপে
ছুটলাম শহরের
অন্য
দিকটায়। আজকের
প্রধান গন্তব্য- The Roslynn Chapel. ড্যান ব্রাউন সাহেবের
ভিঞ্চি কোড
বইটা পড়ে
থাকলে রোসলিন
চ্যাপেলের
নাম আপনি
অবশ্যই
শুনে থাকবেন।
Holy Grail এর খোঁজে
হার্ভার্ড প্রফেসর
রবার্ট ল্যাংগডন শেষটায়
এসে থামেন
এই চ্যাপেলের ভিতরে।
Costa-র কফি
এবং ব্রেডে
নাস্তা করে
আমরা ভদ্র
বাচ্চার মতো
সকাল ৯টায়
গিয়ে উপস্থিত।
সামনের সাইনবোর্ডে
বড় করে
লেখা- “আজ
১২ টায়
খুলবে চ্যাপেলের দরজা।” আমরা
আবার বাসে
চড়ে একটা
শপিং মলে
গেলাম সময়ক্ষেপন
করতে। সেখানে
বিখ্যাত
স্পোর্টস ব্র্যান্ড
নাইকির বিশাল একটা শোরুম।
আমার চোখ
তখন কপালে।
৯০ পাউন্ডের
একটা জুতো
ছাড়ে দিচ্ছে
মাত্র ৫৫
পাউন্ডে। নিজেকে
সামলাতে না
পেরে অবশেষে
একজোড় জুতো
কিনেই ফেললাম।
সময় হয়েছে
আবার Roslynn Chapel এ ফেরত যাবার।
জায়গাটা বেশ
গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। খেতের
পর খেত;
তার মধ্য দিয়ে ৪০
মিনিট বাসে
যেতে হয়।
৭ পাউন্ডে
টিকেট কেটে
ভেতরে ঢুকতেই
বুঝলাম কেন
এই চ্যাপেল এতো
বিখ্যাত।
ড্যান
ব্রাউন সাহেবের
লেখাগুলো তখন
চোখের সামনে
জীবন্ত হয়ে
উঠলো। চ্যাপেলের উপরে
বড় বড়
ভয়ানক দৈত্যের মাথা। ভেতরের
প্রার্থনা কক্ষে
তখন আয়োজন
শুরু হয়েছে।
একটা খাড়া
সিড়িঁ দিয়ে
মাটির নিচের
কক্ষে নেমে
দেখলাম খ্রিস্ট
ধর্মের বেশ
কিছু প্রাচীন
নিদর্শন। চ্যাপেলের বাহিরের
উঠানটাও বেশ
উপভোগ্য।
বেলা দুটো
নাগাদ আমরা
আবার ফেরত
গেলাম শহরের
কেন্দ্রে। Maki & Ramen নামক একটা জাপানিজ
দোকানে যেয়ে
আমরা রামেন
নামক বস্তুটা
অর্ডার করলাম।
রামেন এক
ধরণের নুডুলস
স্যুপ।
এর ঝোলে
থাকে মূল
স্বাদ। আমারটা
ছিলো The Hell
Ramen. এতে ছিলো
বড় বড়
তিন পিস
মাংসের ঢুকরা,
কিছু নুডুলস
আর অসাধারণ
রকমের ঝাল
একটা স্যুপ। দশ পাউন্ড
খরচে খাওয়া
এই রামেন
আমার জীবনে
খাওয়া শ্রেষ্ঠ
রামেন। ইফতিও
তার রামেনের
প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
পাঠক, এতোক্ষণ
ধরে যে
এডিনবার্গের গল্প
আপনার পড়লেন
তা এডিনবার্গের
“ওল্ড টাউন”। আমরা সিদ্ধান্ত
নিলাম এবার
তার “নিউ
টাউন”
ঘুরে দেখার।
The new town of Edinburgh is older than the United States. কারণ, নিউ টাউটনটা
প্রায় ২৫০
বছর পুরোনো।
একবার চিন্তা
করে দেখুন,
এডিনবার্গের ইতিহাস
কতটা সমৃদ্ধ।
বাসে চেপে
নিউ টাউনের
বীচের কাছাকাছি
একটা জায়গায়
এসে এবার
পেলাম ভিন্ন
একটা স্বাদ।
এই জায়গাটা
হলো মধ্যবিত্তের বাসস্থান।
চোখে পড়লো
আমাদের দেশের
মতো বড়
বড় বিল্ডিং;
যার ছোট
ছোট এপার্টমেন্টে
বাসা বেধেঁছে
কিছু মানুষ।
রাস্তায় পলিথিন
উড়ছে। রবিবার
সাপ্তাহিক ছুটি
হওয়ায় কোন
দোকান পাট
খোলা নেই।
মূত্র বিসর্জনের
প্রাকৃতিক ডাকে
সাড়া দিতে
আমরা প্রায়
আধা ঘন্টা
হেটেঁ অবশেষে
জুয়ো খেলার
এক দোকানের
টয়লেটে ঢুকলাম।
সেখান থেকে
বের হয়ে
আমরা আবার
৪০ মিনিট
বাসে চড়ে
গেলাম- The Portobello Beach.
এডিনবার্গের একটা
শহরে আছে
সবই- পাহাড়
থেকে শুরু
করে সমুদ্র,
আভিজাত্য
থেকে শুরু
করে দারিদ্র্য। পোর্টোবেলো বীচে
হালকা বৃষ্টি
পড়ছে। পাশেই
একটা অস্ট্রেলিয়ান
পাব। ইফতি
আর আমি
ভেতরে গিয়ে
ঢুকলাম। কফি
খেতে খেতে
আমাদের এই
অসাধারণ উইকেন্ডের
গল্পগুলোর সারমর্ম
আলোচনা করলাম।
বৃষ্টি কমার
পর বীচের
পাশের বাঁধানো
রাস্তা ধরে
প্রায় ঘন্টা
খানেক দুজনে
হেটেঁ বেরালাম।
আহ! কি
যে শান্তি।
বিশ্বভ্রমণের মজা
ততক্ষণে আমাদের
পেয়ে বসেছে।
অবশেষে বাসায়
ফিরে আসলাম।
ফ্যান্সি
আপুর আজকের
আয়োজন গ্রীলড
ফিস। এই
হোস্টদের বদান্যতায় আমাদের
এডিনবার্গ সফরের
মজা বেড়ে
গিয়েছিলো কয়েকগুণ।
তাদের ধন্যবাদ দিয়ে শেষ
করা যাবে
না। আজ
আমরা প্রায়
১১ টার
মধ্যেই
ঘুমিয়ে গেলাম।
রাত তিনটায়
উঠে রেডি
হয়ে ডিকেন্স
ভাইয়ার গাড়িতে
চড়ে এয়ারপোর্টের
উদ্দেশ্যে
রওয়ানা দিলাম।
বেলা সাড়ে
পাচঁটায় আমাদের
ফ্লাইট। ঘুম
কাতর চোখে
বিরূপ আবহাওয়ায়
হাজারো স্মৃতি
বুকে নিয়ে
আমরা উড়াল
দিলাম লন্ডনের
উদ্দেশ্যে।
বেলা নয়টার
বাসে চড়ে
লন্ডন থেকে
অক্সফোর্ড। বেলা
বারোটায় ঢুকলাম
ল্যাবে।
শুরু হলো
নতুন একটা
সপ্তাহ। ক্যান্সার কোষগুলো
দ্রুত বাড়তে
শুরু করেছে
বোতলের ভিতরে।
তাদের খাতির
যত্ন করতে
হবে। রাত
১০ টা
পর্যন্ত চললো
সেই কাজ।
ক্লান্ত শরীরে
বাসায় ফেরতে
আসতে আসতে
খালি একটা
লাইনই মনে
পড়লো-
There’s
no leaving Edinburgh, no shifting it around. It stays with you. Always. (Alan
Bold)