আরবের রাত: মক্কা-মদীনা
Travel Stories

আরবের রাত: মক্কা-মদীনা

May 27, 2020   |    19339


ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে আমার জ্ঞান মোটামুটি শূণ‍্যের কাছাকাছি। জীবনে কোনদিন মক্কার মাটিতে পা রাখার সৌভাগ‍্য হবে তা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। ২০১৮ এর এপ্রিল মাসে মোটামুটি ঠিক হয়ে গেলো যে, আমি অন্তত বছরের জন‍্য অক্সফোর্ডবাসী হতে যাচ্ছি। বিলেত গমন কালে বঙ্গমাতারা নানা ধরণের সংবেদনশীল আবদার করে থাকে। সেই লিস্টে প্রথম স্থানে থাকে বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশ যাওয়া। কারণ, সবার ধারণা, অবিবাহিত ছেলে বিদেশে গেলে অধ:পাতে যাবে (ধারণা খানিকটা সত‍্য) আমার মায়ের মাথায় সেই চিন্তা সম্ভবত আসে নাই। তার একমাত্র আবদার ছিলো, রমজানের শেষ দশদিন মসজিদুল হারামে কাটিয়ে আসা। নানা অনুনয়-বিনয়, নাটকের পর সফরসঙ্গী হিসেবে যেতে আমি রাজি হয়ে গেলাম।


আমাদের পুরো সফরের আয়ুষ্কাল হবে মোট ১৮ দিন। তার মধ‍্যে ১৬ দিনই কাটবে মক্কায়, মাত্র দিন মদীনার মাটিতে। উমরাহ করার উদ্দেশ‍্যে যেতে চাইলে অবশ‍্যই বিভিন্ন এজেন্টের মাধ‍্যমে ভিসার জন‍্য আবেদন করতে হয়। ভিসা, হোটেল ভাড়া, বিমান ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া সহ জনপ্রতি প্রায় লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। তবে অবশ‍্যই প্রত‍্যেকের নিজস্ব চাহিদার উপর ভিত্তি করে এই খরচটা উঠা-নামা করে।


উমরাহ করা বেশ সওয়াবের কাজ। রমজান মাসে উমরাহ করলে মহানবী (.) এর সাথে হজ্জ করার সমপরিমাণ নেকী দেয়া হয়। ইসলামের এইনেকীব‍্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে। সব কিছুই quantify করা যায়। ধরুন, আপনি সালাম দিলে ৯০ নেকী, সালামের উত্তর দিলে ৩০ নেকী। সুতরাং, আগে সালাম দেয়া উত্তর দেয়ার থেকে তিনগুণ ভালো কাজ। আমার কয়েকজন বন্ধু ভবিষ‍্যতেনেকী কাউন্টারনামে একটা অ‍্যাপ বানানোর চেষ্টায় আছে। আমার ধারণা, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে পপুলার অ‍্যাপগুলোর একটিতে পরিণত হবে।


যাই হোক, উমরাহর নিয়ম-কানুন জানতে প্রথমেই মসজিদে কয়েকটা ওয়ার্কশপ করলাম। আমি ইউ-টিউব টিউটরিয়ালও দেখে ফেললাম। হজ্জ অপেক্ষা উমরাহ করাটা সহজ। মাত্র দিনেই মূল কাজ শেষ করে ফেলা যায়। আমি এবং মামনি যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অবশেষে জুন সকাল :৩০ মিনিটে সেহরীর পর ফজরের নামাজ আদায় করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ‍্যে রওয়ানা হলাম। পরণে দুটি সেলাই বিহীন কাপড়এহরামহিসেবে জড়ানো। সেসময় নিজেকে আসলেই ভিখারী মনে হচ্ছিলো। এহরাম বাঁধার অন‍্যতম কারণও হলো সবাইকে একই কাতারে নামিয়ে আনা। গরীব-বড়লোক দূরত্ব কমানো। 


ভাইয়া আমাদের গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গেলো। ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। জীবনে এই প্রথম “priority check in” করার সুযোগ পেলাম। এহরাম বাঁধা সবার উদ্দেশ‍্যে একজন অফিসার এসে বললেন, “হাজী সাহেবরা আগে যাবেন। বাকী সবাই পড়ে।” 


আমার মায়ের এটা প্রথম বিমান ভ্রমণ। অন‍্যদিকে, তার সহিত এটা আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা। এর আগে সবসময় বিদেশ যাওয়া হয়েছে গবেষণা অথবা চিল করার উদ্দেশ‍্যে। এবারের ভ্রমণটা ছিলো একেবারেই অন‍্যরকম। যেকোন সাধারণ বিদেশ যাত্রার পূর্বে আমি চিন্তা করতাম, স্ট্রিট ফুডটা কেমন হবে। কিন্তু, এবার প্লেনে উঠলাম রোজা রেখে, খালি পেটে। পরণে swag t-shirt এর বদলে কাফনের কাপড় জড়ানো। একটু পর পর সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে বলে উঠছে, “লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক।


প্লেনে উঠার পর এয়ারহোস্ট্রেসরা খাবার সার্ভ করলো। একে একে সবাই সেই খাবার ফেরত দিয়ে দিলো। কারণ, এই প্লেনের সবাই রোজা রাখা, এহরাম বাধাঁ। এয়ারলাইনের কর্মীরা তখন সুন্দর একটা আইডিয়া বের করলেন। তারা সবার খাবারটা প‍্যাকট করে দিয়ে দিলেন। বললেন, ইফতারের সময় খেয়ে নিবেন। তাদের এই ব‍্যবহার দেখে বেশ ভালো লাগলো।


প্লেনটা চলছে পৃথিবীর গতির সাথে পাল্লা দিয়ে। ১৬ ঘন্টার রোজা তাই আমাদের জন‍্য সেদিন ২১ ঘন্টায় দিয়ে দাঁড়ালো। সৌদি বেলা দুটোর সময় আমরা জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। প্রথম কাজমোবাইল সীম কেনা। Zein নামক কোম্পানির দুটো সীম কিনে আমি আর মামনি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম। সীমের প‍্যাকেটে বাংলা লেখা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম। অনুমান করলাম, এখানে বাংলাদেশীর সংখ‍্যা হয়তো অনেক।


জেদ্দা থেকে একটা বাসে চড়ে আমরা যাত্রা করলাম মক্কার উদ্দেশ‍্যে। জানলার পাশে বসে আমি তাকিয়ে রইলাম মরুর প্রান্তরে। এয়ারপোর্টের আশে পাশে দেখা মিললো দুই একটা ফুল গাছের। তারপর মাইলের পর মাইল কেবল ফাকাঁ মরুভূমি। সেই মরুর বুক চিড়ে বানানো হয়েছে রাস্তা; রাস্তার দুধারে গড়ে উঠেছে জনপদ। প্রায় দুই ঘন্টার যাত্রা শেষে আমরাহারেম শরীফএর ভিতর প্রবেশ করলাম। কাবার চারপাশের ২৫ কিলোমিটার এই জায়গাটা বেশ পবিত্র। এখানে মশা মারাটাও না-জায়েজ। হারেম শরীফের দরজার ওপাশে অমুসলমানের প্রবেশ করাটা নিষেধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ। এই ব‍্যাপারটা আমার একটু কেমন যেনো মনে হলো। কেউ যদি ট‍্যুরিজমের উদ্দেশ‍্য আসতে চায় তাহলে তাকে কেন বাধাঁ দেয়া হবে? কোন অমুসলিম গবেষক হয়তো ইসলামের উপর পড়াশোনা করতে মক্কায় যেতে চায়। তাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়াটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়।


হারেম শরীফে প্রবেশে আগেই দূর থেকে যেই ইমারাতটা চোখে পড়ে তার নামজমজম টাওয়ার মক্কার সবচেয়ে আলিশান হোটেল। কাবার পাশে ঠায় দাড়াঁনো এই সুবিশাল হোটেলটা ইসলামিক আর্কিটেকচারের সমগ্র ঐতিহ‍্যকে আঁকড়ে ধরে আছে। এই ব্লগ পড়ে কেউ মক্কায় যেতে চাইলে আমি অনুরোধ করবো জম জম টাওয়ারে থাকার জন‍্য। বুকিং.কমে প্রায়ই ভালো ডিল পাওয়া যায়।


মক্কার হোটেল বিজনেসটা অসম্ভব মাত্রায় জাতীয়তাবাদী। বাঙ্গালি উমরাহ এজেন্টরা কেবল বাঙ্গালী মালিকের হোটেল বুক করে। যথারীতি বাঙ্গালিদের আতিথেয়তাটা প্রফেশনালিজমের তলানীতে ঠেকে। আমাদের হোটেলটাও কোন অংশে কম না। পৃথিবীর যত দেশে গিয়ে হোটেলে থেকেছি তার মধ‍্যে মক্কার এই হোটেলটা সম্ভবত সবচেয়ে বাজে। কিন্তু, কোন কিছু নিয়েই অভিযোগ করার সুযোগ নেই। কারণ একটাই- “আপনি আসছেন আল্লাহর দরবারে। হোটেলের কোয়ালিটি নিয়ে কেনো এতো অভিমান?” ভাই, আল্লাহর নাম বেঁচে এরা ব‍্যবসাটা ঠিকই করে যায়। উমরাহ এজেন্টরা মক্কার মাটিতে দাঁড়িয়ে রেগুলার মিথ‍্যা কথা বলে। আমার অনুরোধ, শুধুমাত্র ভিসাটা তাদের দিয়ে করিয়ে বাকী সবকিছু নিজে ইন্টারনেট ঘেঁটে বুক করবেন। আমাদের দেশের উমরাহ এজেন্টরা সবাইকে অশিক্ষিতের মতো ট্রীট করে। এই ব‍্যাপারটায় আমি অসম্ভব বিরক্ত ছিলাম।


হোটেলে পৌঁছেই সবাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ততক্ষণে বেলা ছয়টা বাজে। ইফতারের সময় হতে চলেছে। আমি খাবার কেনার উদ্দেশ‍্যে বের হলাম। একটা গলিতে ঢুকে বেশ অবাক হয়ে লক্ষ‍্য করলাম যে, এখানকার সবাই বাঙ্গালী। এমনকি দোকানপাটের সাইনবোর্ডও বাংলায় লেখা। তবে দোকানদারদের প্রথম সংলাপের ভাষাটা হলো হিন্দী। কারণ, হিন্দীভাষী মানুষের সংখ‍্যা সৌদের শহরগুলোতে অনেক। এক দোকানে ঢুকে খেজুর কেনার পুরো সংলাপ হিন্দীতে করার পর শেষ মুহুর্তে আমি এবং দোকানী উভয়ই বুঝতে পারলাম যে, আমরা দুজনেই বাঙ্গালী


আল-বাইক নামক একটা ফ্রাইড চিকেনের দোকান মোটামুটি মক্কার অলিতে গলিতে সব জায়গায় পাওয়া যায়। প্রতি দোকানে ফল ভিত্তিক আইটেম- সালাদ, জুসের পসরাটা বেশ জাঁকালো। সৌদির একটা ব‍্যাপার আমার বেশ ভালো লেগেছে। এদের খাবারে মাংসের আধিক‍্যটা প্রচুর। মক্কায় প্রতিবেলা জনপ্রতি খাবারের খরচ ২৫০ থেকে ৫০০ টাকার মতো। আমি কিছু ফলমূল, জুস আর শর্মা কিনে ফেরত এলাম হোটেলে। মাগরীবের আজান শোনা গেলো। আমি আর মামনি রোজা ভাঙ্গলাম। সাধারণত ইফতারের পর একধরণের ক্লান্তি এসে ভড় করে শরীরে। কিন্তু, আমাদের মাথায় তখন অন‍্য চিন্তা। হোটেলে বসে সময় না কাটিয়ে মক্কার মাটিতে হেটেঁ বেড়ানোটা উত্তম সিদ্ধান্ত।


রাত আট-টা নাগাদ আমরা মক্কার রাস্তায় হাঁটছি। কাবা থেকে আমাদের হোটেলের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিট। এই ব‍্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মক্কায় অসম্ভব জ‍্যাম; ট‍্যাক্সির খরচ একটু বেশি। তাই হোটেলটা কাবার কাছে-ভিতরে নিলে জীবনটা সহজ হয়ে যায়। পথিমধ‍্যে চোখে পড়লো অনেকগুলো পাচঁ তারকা হোটেল। আমরা একটার লবিতে বসে কিছুক্ষণ কফি খেয়ে সতেজ হয়ে নিলাম। মিনিট দশেক পর মা-ছেলে দুজনেবাবে আজিজনামক দরজার সামনে গিয়ে উপস্থিত হলাম।


ছোট বেলায় ইসলাম শিক্ষা বই পড়ে আমার মনে মক্কার যে ছবিটা ভেসে উঠতো সেটা ছিলো মোটামুটি এরকমমরুভূমির বালির উপর একটা কালো রঙের মসজিদ দেখা যাবে। চারপাশে এক-দুইটা খেজুর গাছ থাকবে। মানুষজন খালি পায়ে সেই বালির উপর হেঁটে প্রভুর ইবাদাত করতে মসজিদে হাজির হবে। কিন্তু, সেরাতে চোখের সামনে যে দৃশ‍্য দেখতে পেলাম তা ছিলো পুরোপুরি ভিন্ন। 


কাবার সংলগ্ন এক কিলোমিটার এলাকা মোটামুটি আভিজাত‍্যের মোড়কে চকচক করছে। সবগুলো হোটেলই পাঁচ তারকা খচিত। প্রতিটা হোটেলের নিচের তিন-চার তলা শপিং মল। সেখানকার ফুড কোর্টে খাবারের পসরা সাজিয়ে আছে সব আমেরিকান ফুড চেইন- ম‍্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, ডমিনো, ফাইভ গাইস! কি নেই এখানে? রমজানে ইফরাতের পর পর সমগ্র মক্কা হঠাৎ করে যেন জেগে উঠে। রাতভর চলে ইবাদাত, খাবার-দাবার, কেনা-কাটা। ফজরের পর সময় ঘুমাতে যায়।


Mecca is the city that never sleeps.


মামনি আর আমি অবশেষে প্রবেশ করলাম কাবার প্রাঙ্গনে। ছোটবেলা থেকে টিভিতে আজানের ভিডিওতে এই দৃশ‍্য দেখে এসেছি। আজ সেটা সামনে থেকে দেখছি। করিডোর পেরিয়ে কয়েকটা সিড়ি নীচে নেমে যেতেই দেখলাম সেই অসম্ভব বিখ‍্যাত মসজিদদ‍্যা গ্রেইট মস্ক অফ কাবা! কালো বাক্সটার চারদিকে মানুষ খুব সুন্দর একটা ফ্লুইডিক মোশনে তাওয়াফ করছে। নামাজের সময় সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়াকে আমাদের দেশে বড় ধরণের গুণাহের কাজ মনে করা হয়। কাবার প্রাঙ্গণে এটা বেশ কমন দৃশ‍্য। তারা ব‍্যাপারটাতে মন খারাপ করে না মোটেও। নারী-পুরুষ একত্রে নামাজ পড়াটাও এখানে জায়েজ।


আমি মামনিকে বললাম, চলো মসজিদটাকে কাছে যেয়ে ধরে দেখি। সমস‍্যা হলো, বৃত্তের পরিধি থেকে যতই কেন্দ্রের দিকে যাওয়া যায় ততই জনসংখ‍্যার ঘনত্ব নন-লিনিয়ার হারে বাড়তে থাকে। কাবার গায়ের কাছে মানুষজন মোটামুটি ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। কেউ তার অপর মুসলমান ভাইয়ের তোয়াক্কা করে না। একবার পড়ে গেলে পায়ের চাপায় মৃত‍্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমি মামনিকে বললাম, তুমি সামনে যাও। আমি পেছন থেকে তোমাকে গার্ড দিবো। সারাজীবন এই মহিলা আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। তাকে গার্ড দিয়ে কাবার কাছে নিয়ে যাওয়টাকে বেশ দায়িত্ব বলে মনে হলো। অবশেষে মা জননী তার মিশনে সফল হলেন। কাবার গিলাফ ধরে তিনি অঝোড়ে কাঁদছেন। নিজ মা-কে কাঁদতে দেখে কোন ছেলে হয়তো জীবনে এর থেকে বেশী খুশি আর কোনদিন হয়নি।  


টাচ-ডাউন অফ কাবা”—মিশন শেষে আমরা খানিকটা পরিধিতে গিয়ে বসলাম। বেশ শান্ত মনে উপভোগ করতে থাকলাম সারা বিশ্বের . বিলিয়ন মানুষের প্রার্থণার তীর্থস্থানটা। মেঝেটা টাইলস ঢাকা এবং অসম্ভব ঠান্ডা। অনেকেই এটাকে মরুভূমিতে আল্লাহর কুদরত বলে আখ‍্যা দিতে চায়। আমি তাপ শোষণ আর বিকিরণের সূত্রটা আওড়াতে আওড়াতে মনে মনে হাসলাম। তবে একটা কথা স্বীকার করতে কোন বাধা নেই, কাবার প্রাঙ্গণটা মনে অসম্ভব প্রশান্তির একটা অনুভূতি এনে দেয়। চারদিক থেকে হিউমিডিফায়ারে করে পানি ছিটানো হচ্ছে। চাইলেই জমজমের ঠান্ডা পানি আপনি কল থেকে খেতে পারবেন। এতো বিশাল একটা জায়গার পাবলিক টয়লেটগুলো অসম্ভব পরিষ্কার। কাবা প্রাঙ্গনে আপনি হেঁটে বেড়াতে পারবেন খালি পায়েএকদল যুবক প্রতি ঘন্টায় এসে সাবান দিয়ে ঘঁষে মেঝে পরিস্কার করে দিয়ে যাচ্ছে। রমজানের শেষ দশদিনের এই অসম্ভব ভীড়ের মাঝেও তাদের পরিচ্ছন্নতটা বেশ চোখে পড়ার মতো।


রাত দুটো নাগাদ আমরা আবার মক্কার রাস্তায় নেমে আসলাম। হোটেলে ফেরার পথে একটা গ্রীল চিকেন কিনে নিলাম। আমার সেহরীটার বন্দোবস্ত হয়ে গেলো। কিন্তু, আমার জননীর খাদ‍্যাভাস বেশ বাঙ্গালী ঘরণার। তার জন‍্য একটা বাংলাদেশী হোটেল থেকে প্রায়ই পরোটা, মাংস, ভাত/মাছ নিয়ে আসতে হতো। সেই দোকানে আমার অন‍্যরকম এক অভিজ্ঞতা হলো। বাংলাদেশ-পাকিস্তান শত্রুতাটা তাদের মাঝে অসম্ভব মাত্রায় প্রকট। বাঙ্গালী হোটেলটা কোন পাকিস্তানিকে খাবার বিক্রি করতে চায় না। আমি নিজেও একটা পাকিস্তানি কাবাবের দোকান থেকে খাবার কিনতে গিয়ে বেশ বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীণ হয়েছি।


মক্কা রাতের নগরী। দিনের বেলায় এখানে শুধু পাথরের পাহাড় দেখা যায়। তাপমাত্রা এতটাই বেশী থাকে যে, মনে হবে গায়ে আগুনের হল্কা লাগছে। তাই আমরা ঠিক করলাম ফজরের পর পরই উমরাহ পালন করবো। নির্দিষ্ট প্রহরে কাবার চারদিকে সাত-তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইবরাহীম বরাবর দাড়িয়ে নামাজ আদায় করলাম। তারপর সাফা আর মারওয়াহ পর্বতের মাঝে বার দৌড় দিতে হয়। অ‍্যাপেল ওয়াচের ভাস‍্যমতে, এক উমরাহতে ১২৪৩ কিলোক‍্যালোরী একটিভ এনার্জি বার্ন হয়। আমার মা সম্ভবত মোট - বার এই উমরাহ করেছেন। সেই শক্তি উনি কই পেয়েছেন তা বেশ রহস‍্যজনক।


সাফা-মারওয়াহ পর্বত আরোহণ আপনার কাছে কঠিন মনে হতে পারে। এককালে তা কঠিনই ছিলো। এখন মানুষ দুই পাহাড়ের মাঝে একটা সুন্দর আলিশান টানেল বানিয়েছে। সেই টাইলসে মোড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় আপনি হাল্কা দৌড় দেয়ার ভান করবেন। আমরা যে ধর্মের উপসনাগুলোর মর্মার্থ ভুলে কেবল আক্ষরিক অর্থে বেশী মনোযোগ দেই তার অন‍্যতম বড় একটা প্রমাণ এটি। ইবরাহীম () এর স্ত্রীর পানির জন‍্য হাহাকারের সেই বেদনার কতটা আমরা সহ‍্য করেছি তা বলাটা বেশ মুশকিল।


প্রায় ঘন্টা তিনেক পর উমরাহ শেষ হলো। আমরা ফেতর এলাম হোটেলে। এহরাম খোলা হলো। যেই ইবাদাত করতে ঢাকা থেকে মক্কায় এসেছি তা অবশেষে পূর্ণ হলো। এবার আমার উদ্দেশ‍্য হলো শহরটা ঘুরে দেখা। কিন্তু, দিনের বেলা সেটা অসম্ভব। আমি গরম সহ‍্য করতে পারি না। তাই আমার দিন কাটলো হোটেলের এসিতে বই পড়ে। আর রাতটা কেটেছে মক্কার কফিশপ আর রাস্তায়।


মক্কার স্টারবাক্স মোটামুটি আমার জন‍্য দ্বিতীয় বাসা হয়ে গেলো। প্রতিদিন ইফতার করে আমি স্টার বাক্সে যেতাম। তখন বিশ্বকাপ ফুটবল মাত্র শুরু হয়েছে। ফ্রি ওয়াই ফাই কাজে লাগিয়ে যতটুকু পারা যায় ম‍্যাচ দেখতাম। CR07 এর সেই বিখ‍্যাত হ‍্যাটট্রিক এখনো মনে আছে। একটা ব‍্যাপারে আমি অসম্ভব বিরক্ত ছিলাম। কোন সৌদি বাসিন্দাই খেলা দেখতে আগ্রহী নন; যদিও তাদের দেশ বিশ্বকাপে খেলছে! আমি এই স্টারবাক্স বসে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্লগ লিখেছি, অপরিচিত মানুষের সাথে গল্প করেছি। এদের মধ‍্য একটা ক‍্যাটাগরী আমার খুব পছন্দের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম্ভব সফল মানুষ তাদের জীবনের হতাশা মোচনের জন‍্য আল্লাহর দরবারে এসেছেন। তাদের জীবনের গল্প শুনে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিটা একটু বাড়িয়ে নিয়েছি। কফিশপের ওয়েটারগুলো একসময়ে আমার বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। তাদের মধ‍্যে একজন ছিলো বাংলাদেশী। পড়াশোনার জন‍্য সৌদে গিয়ে এখন ফুলটাইম কাজ করে টাকা কামাচ্ছে। চট্রগ্রামের সেই ছেলে আমার কফিতে সবসময় একটু বেশী হুইপ ক্রীম দিয়ে দিতো। দেশী ভ্রাতা বলে কথা!


মক্কার সব দোকানের একটা বৈশিষ্ট‍্য বেশ চোখে পড়ার মতো। তা হলো, আজান হওয়া মাত্র দোকানের শাটার নেমে যাবে। আপনি পানি কিনতে চাইলেও সবাই বলবে, “বাদআস সালাহ (নামাজের পর)” জামাত শুরু হওয়া মাত্র যে যেখানেই আছে সেখানেই নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে। কেউ পশ্চিম মুখী, কেউ পূর্বমুখী, কেউবা দক্ষিণমুখী। কিন্তু সবার সামনেই আছে কাবা। ব‍্যবসাপাতি আবার শুরু হয় নামাজের পর। 


আমার দৈনিক রুটিনটা মোটামুটি এরকমদুপুর নাগাদ ঘুম থেকে উঠা, বই পড়া। বিকেলে ইফতার কিনতে বের হওয়া। মাগরিবের পর থেকে ফজর পর্যন্ত মক্কার জনসমুদ্র অবলোকন। সবচেয়ে বেশী ভীড় চোখে পড়লো লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে। কাবার দুই কিলোমিটার দূরের রাস্তাতেও নামাজ পড়ার জায়গা পাওয়াটা বেশ মুশকিল। শেষ শুক্রবারজুমাতুল বিদা দিন মক্কার রাস্তায় জায়নামাজ রাখার জায়গাও পাওয়া গেলো না। দোখা-ভীরু মানুষের এই ঢল বেশ হৃদয়স্পর্শী।


মক্কার নাইটলাইফে স্ট্রীট ফুড খুব একটা দেখা গেলো না। খাবারের জন‍্য যেতে হয় বিভিন্ন পাচঁ তারা হোটেলের ফুড কোর্টে। সবচেয়ে মজা লাগলো ডমিনো পিজ্জার দোকানের লোকেশন দেখে। ডমিনো জানলা দিয়ে তাকিয়ে পিজ্জা খেতে খেতে কাবা দেখা যায়। DK-72 নামের একটা দোকানে জমপেশ ডোনোর কাবাব পাওয়া যায়। কিন্তু, সবকিছুর দামই ৫০০-৬০০ টাকার মতো। 


এই সব আয়োজনের মাঝে দেখা মিললো এক শ্রেণীর ফ্রডের। এরা প্রতিদিন বিভিন্ন শপিং মলে ঘুরে বেড়ায় আর বলে যে, তারা উমরাহ করতে এসে সব টাকা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের সাহায‍্য দরকার। কাবার নিটকবর্তী এলাকায় মানুষের মন বেশ নরম থাকে। সেই কোমল মানুষদের কাছ থেকে এরা প্রতিদিন হাজার হাজার রিয়েল হাতিয়ে নিচ্ছে।


সৌদি আরবের নারী-পুরুষ মেলামেশাটা দেখা যায় না। খাবারের দোকানে দুটো সেকশন থাকে- পুরুষ এবং পরিবার/মহিলা। একটা বিষয় আমার চোখে অসম্ভব খারাপ ঠেকলোপুরো মক্কায় একটা সুপার শপ ছাড়া আর কোন জায়গায় কোন নারীকে কাজ করতে দেখলাম না। তাদের আর্থিক স্বাধীনতার ব‍্যাপারটা চিন্তা করে বেশ খারাপ লাগলো।


সফরের ৭ম দিনে আমরা বের হলাম মক্কা পরিভ্রমণে। প্রথম গেলাম হেরা পর্বতের পাদদেশে। এই গুহায় ধ‍্যানমগ্ন অবস্থায় জিবরাঈল () প্রথম কোরআন নিয়ে আসেন। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময় মুহাম্মদ () আর আব বকর (রা) যে গুহাতে লুকিয়ে ছিলেন সেটার দেখাও মিললো। সবচেয়ে ভালো লাগলো আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে। বিশাল এক প্রান্তর; তার এক কোণায় দাঁড়িয়ে ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ () তার বিখ‍্যাত বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। একটা বিশাল পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত এই প্রান্তরের বিশালতটা বেশ উপভোগ করার মতো। 


আরাফাতের ময়দান থেকে গেলাম মীনার প্রান্তরে। হজের পর এখানে কুরবানী করা হয়। শয়তানকে পাথর মারার স্তম্ভটাও এইখানে অবস্থিত। অসম্ভব গরমের মাঝে এই ভ্রমণটা খুব বেশীক্ষণ নিতে পারছিলাম না। শরীরটা ঘামে ভিজে যাচ্ছিলো। অবশেষে আমাদের যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো ওহুদের প্রান্তরে। এই যুদ্ধ ময়দানে কাফিরদের পাল্টা আক্রমণে অনেক সাহাবী শহীদ হয়েছিলেন। মহানবী () তার দুটো দাঁত হারিয়েছিলেন। যুদ্ধাহত নবী তখন যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সেটাও ঘুরে দেখা যায়। 


অবশেষে আমরা ফেরত আসলাম মক্কার প্রাণকেন্দ্রে। কাবার ঠিক পাশেই নবীর পৈতৃক বাড়ি। সেটা এখন একটা মিউজিয়াম। সবচেয়ে হাসির ব‍্যাপার হলো, মক্কার বিখ‍্যাত কাফির আবু জেহেলের বাড়িকে এখন পাবলিক টয়লেটে পরিণত করা হয়েছে।


এভাবে দেখতে দেখতে পার হয়ে গেলো ১২ দিন। অবশেষে আসলো খুশীর ঈদআমার জীবনে কাটানো অন‍্যতম বোরিং ঈদ। ঢাকা ছাড়া অন‍্য কোথাও ঈদ উদযাপনের কথা আমি চিন্তাই করতে পারি না। অসম্ভব হোম সিক লাগছিলো তখন। মক্কার কালচারে ঈদের নামাজ হয় ফজরের নামাজের সাথে সাথেই। সুতরাং, আলাদা করে ঈদের জামাতে যাওয়ার আনন্দ এরা উপভোগ করতে পারে না। সেমাই, জর্দার স্বাদ তখন টেক আউট ফুড দিয়ে মেটাতে হলো। 


অবশেষে ঈদের ৩য় দিন বাসে চড়ে আমরা রওয়ানা হলাম মদীনার উদ্দেশ‍্যে। সেই বাসে পড়ে শেষ করলাম লেসলী হেজলেটনের লেখা “After the Prophet” বইটা। নবীর মৃত‍্যুর পর আয়েশা (রা) আর আলী (রা) এর সংঘর্ষ কীভাবে মুসলিম উম্মাহকে সুন্নী আর শীয়া জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত করে ফেলে সেই ইতিহাস পড়ে গা শিহরে উঠলো। নবীর লাশ দাফন না করেই কীভাবে আরবের নেতারা পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের রাজনীতিতে মেতে উঠে তা জানতে পেরে একদিন থেকে বেশ খারাপই লাগছিলো। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের লাশ সেইটা হয়তো ডিজার্ভ করে না।


মদীনা মক্কা থেকে বেশ ভিন্ন। মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিলে এই মদীনা। এখানের মসজিদুল নববীতে বসেই মুহাম্মদ (সা) তার সাম্রাজ‍্য পরিচালনা করেছিলেন। সেই মসজিদের একটা অংশকে বলা হয়রিয়াদুল জান্নাহবা জান্নাতের বাগান। সেখানে নামাজ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহর এয়ারপোর্টে priority check in পাওয়া যায়। আমি প্রথম দিন মদীনা পৌঁছে হাঁটতে হাঁটতে জায়গা পেয়ে গেলাম। সেই মসজিদের একটা গম্বুজ সবুজ রং-এর। এর সংলগ্ন দরজাটার নামবাবে জিবরাইল জিবরাঈল () ওহী নিয়ে সাধারণত এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। মহানবী এখন শায়িত আছেন এই গম্বুজেরই নীচে। সাথে আছেন প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা (রা) আর ব্রো আবু বকর (রা)


১৫ মিনিট হাঁটলেই আপনি দেখতে পাবেনজান্নাতুল বাকী এখানে যাদের কবর দেয়া হয় তাদের জন‍্য জান্নাত সুনিশ্চিত। ব‍্যাপারটা অনেকটা VIP Lounge Access পাওয়ার মতো ব‍্যাপার। এরা আল্লাহর দরবারের platinum card holder. অনেক বিখ‍্যাত সাহাবীর কবর এখানে। মজার ব‍্যাপার হলো, আমাদের দেশে কবরকে বাঁধিয়ে নামফলক লাগিয়ে রাখা হয়। জান্নাতুল বাকী একটা ময়দান। আপনি কোন কবরকে নির্দিষ্টভাবে আলাদা করতে পারবেন না। আমাদের মাজার ব‍্যবসায়ীরা এই খবর জানতে পারলে বেশ হতাশ হবেন।


মক্কায় কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চোখে পড়বে না। কিন্তু, মদীনা বেশ আধুনিক। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলো একটু পর পর পরিষ্কার রাস্তার উপর দাঁড়ানো স্টপেজ গুলোতে থামবে। রুট মাফিক সব বাস নিজ নিজ গন্তব‍্যে ছুটে যায়। মদীনাকে আমার বেশ ইউরোপ ইউরোপ লাগছিলো। 


সফরের ১৭ নম্বর দিন আমরা গেলাম মসজিদুল কুবায়। সেখানে দুরাকাত নামাজ পড়লে উমরাহ এর সমপরিমাণ সওয়াব মিলে। ব‍্যাপারটা বাউন্টি বক্সের মতো। সব ইবাদাত কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। ইসলামের এই গাণিতিক সেন্সটা বেশ অ‍্যাপস্টোর বান্ধব। নেকী কাউন্টারের ভবিষ‍্যত বেশ উজ্জ্বল হবে।


মদীনায় আমাদের শেষ গন্তব‍্য ছিলোদুই কিবলা মসজিদ ইসলামের প্রথম যুগে নামাজ পড়া হতো জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা করে। মহানবীর মনের আশা পূরণ করতে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহ কিবলা পরিবর্তন করে কাবার দিকে করে দেন। এই মসজিদ সেই ঐতিহাসিক rotation shift এর সাক্ষী হয়ে আছে।


যেকোন জায়গায় ১৮ দিন থাকলে তার প্রতি একটা মায়া কাজ করে। ব‍্যক্তিগতভাবে মদীনা আমার কাছে বেশী ভালো লেগেছে। কারণটা স্বাভাবিকভীড় কম, ইতিহাসটা সমৃদ্ধ, খাবারটা বেশী মজাদার। মদীনার টার্কিশ দোকানে অসম্ভব ভালো কাবাব পাওয়া যায়। দামটাও একটু সাধ‍্যের মধ‍্যে।


অবশেষে বিদায় ঘন্টা বাজলো। ২০ জুন ভোরবেলা মদীনা এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। জায়গাটা বেশ চোখে পড়ার মতো। অসম্ভব সুন্দর করে খেজুর গাছের আদলে তার ছাদটাকে সাজানো হয়েছে। মনে হবে যেন আপনি খেজুঁর বাগানে বসে আছেন। মদীনা আরব বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত এয়ারপোর্ট। সেখানে অপেক্ষার লগ্নটুকু চাইলেই কফির সাথে উপভোগ করা সম্ভব। ভাের ৩টায় ফ্লাইট ধরে মদীনা থেকে রিয়াদ পৌছঁলাম। সেখানে প্লেন বদল করে পাড়ি দিলাম ঢাকার উদ্দেশ‍্যে। প্লেনে উঠার আগে বিমানবন্দর থেকে জমজমের পানি কিনে নিতে হয়। আপনি চাইলেই বোতলে ভরে পানি নিয়ে উঠতে পারবেন না। 


রাত :০০-টায় ঢাকায় নামলাম। ভাইয়া আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো; সেই আবার নিতে আসলো। ১৮ দিনের সফর শেষে বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। তবে সবচেয়ে বেশী ছিলো ভালোলাগার দিকটা। মামনির দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছে পূরণ করে ফেললাম। আমি অক্সফোর্ড চান্স পাওয়ার পরও এতো খুশি হয়নি। কাবার গিলাফ ধরে মা-কে কাঁদতে দেখার আনন্দটা তার থেকেও বেশী।


জাযাকাল্লাহি খাঈর।


Sometimes you need to dress up as a dead body just to realise that all human beings are equal.





Contact

Hi there! Please leave a message and I will try my best to reply.

© 2024 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.