নীরব ঘাতকের গল্প
Science

নীরব ঘাতকের গল্প

May 27, 2020   |    6349


২০০০ সালের আগস্ট মাসে আমেরিকার অ‍্যারিজোনা রাজ‍্যের পাওয়েল লেকে ছুটি কাটাতে যায় এক পরিবার। দুই ছেলে আর তাদের বাবা-মা মিলে একটা বোট ভাড়া করে লেকের পানিতে ভেসে অসাধারণ এক সময় কাটাচ্ছিলো। ছোট ছেলেটার বয়স আট, বড়টার বয়স এগারো। দুইজনেই বেশ ভালো সাতাঁরু। দুপুরের দিকে বাবা-মা বোটের ভেতরে আরাম করছিলেন। তখনই দুই ভাই সিদ্ধান্ত নিলো তারা লেকের পানিতে সাঁতার কাটতে নামবে।


যেই কথা, সেই কাজ। দুই ভাই বোটের পাটাতন থেকে ঝুম শব্দে ঝাপিঁয়ে পড়লো পরিষ্কার পানিতে। মাত্র এক-দুই মিনিটের মাথায় ছোট ছেলেটা অচেতন অবস্থায় ভেসে উঠলো, তার মিনিট খানেকের মাথায় বড় ছেলেটার শ্বাসও বন্ধ হয়ে গেলো। ছুটির অনাবিল আনন্দের মাঝে অচেতন হয়ে দুই ভাই না ফেরার দেশে হারিয়ে গেলো। বোটের ভেতরে এসি ছেড়ে ঘুমাতে থাকা বাবা-মা তখনও জানতেন না এই দূর্ঘটনার কথা। 


পরদিন দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করা হলো। লাশ পাঠানো হলো ময়নাতদন্তে। বাবা-মা বিশ্বাসও করতে পারছিলেন না যে, তার দুই সাতারু ছেলে কীভাবে পানিতে ডুবে মারা গেলো। অবশেষে রহস‍্যের ধোঁয়াশা কাটলো ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। তাদের কেউই পানিতে ডুবে মারা যায়নি; বরং ম‍ৃত‍্যু হয়েছে কার্বন মনো অক্সাইডের বিষক্রিয়ায়!


কিন্ত কীভাবে?


দূর্ঘটনার শুরু সেই এসি থেকে। বোট-রুমের এসিটা চলছিলো ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ‍্যমে। সেই জেনারেটরের গ‍্যাস নির্গমনের পাইপটা বের হয়েছে বোটের ডাইভিং পাটাতনের ঠিক নিচ থেকে। আর এর কারণেই ঘটেছে এই মহা দূর্ঘটনা। কারণ, জেনারেটর থেকে প্রায়ই কার্বন মনো অক্সাইড গ‍্যাস বের হয়। সেই গ‍্যাস পাটাতনের নীচের পানিতে জমা হয়েছিলো অনেক পরিমাণে। দুই ভাই আসলে পাটাতন থেকে পানিতে নয় বরং কার্বন মনো অক্সাইডের এক সাগরে ঝাঁপ দিয়েছিলো। 


আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন নামক এক প্রোটিন থাকে যা অক্সিজেন পরিবহন করে। সেই প্রোটিন যখনই কার্বন মনো অক্সাইডের সংস্পর্শে আসে তখনই তার অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যারা ধূমপান করে তাদের শরীরেও এই গ‍্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কোনভাবে শরীরের অর্ধেক হিমোগ্লোবিন কার্বন মনো অক্সাইডের কবলে পরলেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত‍্যু সুনিশ্চিত হয়ে যায়। সেই দুই ভাইয়ের ময়নাতদন্তে রক্তে প্রায় ৫২-৫৯% কার্বোক্সি-হিমোগ্লোবিন পাওয়া গিয়েছিলো।


কার্বন মনো অক্সাইড এক নীরব ঘাতক। কারণ এর কোন গন্ধ নেই, বর্ণ নেই। কোথাও এর অস্তিত্ব টের পাবার উপায় নেই। উন্নত বিশ্বের বাড়ি-ঘর গুলোতে এই গ‍্যাস সনাক্ত করার জন‍্য যন্ত্র বসানো থাকে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা, কেউ এই গ‍্যাসের সংস্পর্শে আসলে হালকা মাথা ব‍্যথা অনুভব করতে করতে এক সময় অচেতন হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই গ‍্যাসের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে না নেয়া হলে মৃত‍্যু প্রায় অনিবার্য।


The greatest trick the devil ever pulled was convincing the world he didn’t exist. (The Usual Suspect, 1995)




Contact

Hi there! Please leave a message and I will try my best to reply.

© 2024 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.