ডিজিটাল গুজব
Aug 9, 2017 | 10301
এবছর জুন
মাসের কথা।
টেন মিনিট
স্কুলের সাঙ্গো-পাঙ্গো সমেত
নেপাল যাবো
বলে ঠিক
করলাম। প্লেনে
উঠার তিন
দিন আগে
আমাদের সিইও
সাহেব বেকেঁ
বসলেন। তার
কথা:
“দোস্ত, আমার
অনেক কাজ
আছে। ঈদের
তিনদিন আগে
আমার পক্ষে
নেপাল যাওয়া
সম্ভব না।
রবির সাথে
মিটিং আছে।”
আয়মানের শেষ
মুহুর্তের Pulling Out মেথডে আমরা বেশ
বিরক্ত ছিলাম।
সবাই মিলে
ঠিক করলাম
যে, একটা
গুজব রটাবো:
“আয়মানের বিয়ে হচ্ছে। আমরা নেপালে যাচ্ছি ওর ব্যাচেলর ট্রিপ উদযাপন করতে।
প্রথমেই আমাদের
মার্কেটিং হেড
জিহান বললো,
“গুজব রটানোর
রেসিপিটা কি
জানেন, শোমীর
ভাই?” (এইটা
টাইপো না।
জিহান আমাকে
shomir ভাই বলেই
ডাকে)
আমি: তুই
থাকতে নিশ্চয়ই
আমাকে এই
জিনিসটা নিয়ে
চিন্তা করতে
হবে না।
একটা পূর্ণাঙ্গ
প্ল্যান
তৈরি কর।
দুইমাসে অন্তত
৩০% মানুষের
মনে এই
ধারণাটা স্থাপন
করতে হবে।
শামস, জিহান,
সিকদার, সাকিব,
জুবায়ের আর
আমি মিলে
ষড়যন্ত্রের নীল
নকশা তৈরি
করলাম। তার
সারাংশ এইখানে
তুলে ধরা
হলো:
প্রথমে আমার
বিভিন্ন ছবির
কমেন্টে অত্যন্ত ক্যাজুয়ালি
আয়মানের বিয়ের
কথা মেনশন
করতে হবে।
কেউ প্রশ্ন
করলে সেটা
এড়িয়ে যাবো।
ইনবক্সে বিশেষ
করে সুন্দরী
আপুদের মেসেজের
উত্তরে বলতে
হবে, “বিয়েটা বেশ গোপনে হচ্ছে। সেলিব্রিটি মানুষ তোহ! কাউকে বইলো না কিন্তু।”
আমাদের দৃঢ়
বিশ্বাস ছিলো
যখন “কাউকে
বইলো না কিন্তু”
বলা হয়,
তখন সে
মাইক নিয়ে
সেইটা প্রচার
করা শুরু
করে। বাস্তবেও
তাই হলো।
প্রথমে আমি
আয়মানের ওয়ালে
ওর বিয়ে
নিয়ে একটা
পোস্ট দিলাম।
আমাদের মিউচুয়াল
ফ্রেন্ডরা সেটা
দেখলো। সেই
পোস্টের কিছু
কমেন্ট একটু
তুলে ধরা
দরকার:
“আরে ভাই,
আপনি বিয়ে
করে কেন
জীবন নষ্ট
করবেন?”
“ভাই, প্লিজ
বিয়ে করবেন
না। আপনি
দেশের সম্পদ।”
সুন্দরী গোছের
এক আপুমনি
তো বেশ
জেদ করেই
বললেন:
“ভাইয়া, এই
কাজটা তুমি
কীভাবে করতে
পারলা?”
শেষ জনের
কমেন্ট দেখে
আমার মনে
হলো উনি
আয়মানের প্রথম
স্ত্রী ছিলেন।
আয়মান তাকে
ধোকাঁ দিয়ে
দ্বিতীয় বিয়ে
করছে। একজনের
ব্যক্তিগত
ব্যাপারে
মানুষের নাক
গলানোর প্রচন্ড
আগ্রহ দেখে
প্রথমে আমি
বেশ অবাক
হলাম।
যাই হোক,
ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয়
চালে আমি
নিজের প্রোফাইল
থেকে বিয়ে
সংক্রান্ত একটা
স্ট্যাটাস
দিলাম। সেই
স্ট্যাটাসে
আয়মানের কোন
যোগসাজশ নেই।
তারপরও কমেন্টে
অনেকই জানতে
চাইলো:
“ভাই, আয়মান
ভাইয়ের পর
আপনিও বিয়ে
করছেন?”
সাথে সাথেই
সাকিব বিন
রশীদ ফোন
দিয়ে বললো:
“আমাদের গুজবটা
এলাকায় চাউড়
হইসে। তোর
স্ট্যাটসের
কমেন্টে মানুষ
এইটা নিয়ে
প্রশ্ন করতেসে।
আগুনে একটু
তেলটা ঢাল।”
আমি সাথে
সাথেই কমেন্টে
উত্তর দিলাম
“হুম। আসলে
আয়মানের বিয়ের
পর পরই
বাসা থেকে
আমাকে বিয়ের
জন্য
প্রেশার দেয়া
হচ্ছে।”
রাত না
গড়াতেই গুজব
সত্যে
পরিণত হলো।
আয়মান ১৫-২০ টা মেইল
পেল। অনেকেই
তাকে শুভেচ্ছা
জানাচ্ছে। এদের
মধ্যে
রয়েছে অনেক
গুণীমানী ব্যক্তিবর্গ। অবশ্যই বিশাল একটা
অংশ হলো
সুন্দরী ফ্যান বাহিনী।
সবচেয়ে মজা
পেলাম আয়মানের
পেইজের একটা
কমেন্ট দেখে:
“আয়মান ভাই,
আপনার বিয়ের
পর শামীর
ভাইয়ের মতো
একটা ব্রিলিয়ান্ট
মানুষকেও এখন
পারিবারিক চাপে
পড়ে বিয়ে
করতে হচ্ছে।
আপনি কেন
এমন করলেন?”
এ পর্যায়ে
হাজারো তরুণীর
হৃদয়ের আকাশে
কালো মেঘের
ঘনঘটা। মেঘ
থেকে বৃষ্টিটা
ঘটাতে আমরা
প্ল্যানের
তৃতীয় স্তরটা
উন্মোচিত করলাম।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক
বান্ধবীর বিয়ে
হবে আর্মি
গলফ ক্লাবে।
আয়মানের বাবাও
আর্মিতে।
তাই, আমি
আর সাকিব
বিন রশীদ
ওই বান্ধবীর
বিয়েতে গিয়ে
চেকইন দিলাম
At the most waited 10 Minute Wedding। কোন
রকম তথ্য যাচাই না
করেই মানুষজন
বিশ্বাস করলো
এইটাই আয়মানের
বিয়ের ছবি।
যদিও সেখানে
জামাই-বউ
কারো চেহারাই
দেখা যাচ্ছিলো
না।
সেদিন রাতে
বাসায় আসার
পর বুঝলাম,
ব্যক্তিগত
জীবনে আয়মান
‘অবিবাহিত’
হলেও সামাজিক
যোগযোগ মাধ্যমে সে
একজন ‘বিবাহিত’ পুরুষ।
এই বিয়েটা
করতে তার
কিছুই করা
লাগে নাই।
শুধু মাত্র
আমাদের মতো
ছয়জন হারামীকে
কয়েক ঘন্টা
সময় ব্যয় করে কিছু
কমেন্ট করতে
হয়েছে। বাহ!
কত সহজ?
তখন চিন্তা
করে দেখলাম,
এইটা তো
ভয়ংকর কথা।
মানুষ কোন
ধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়াই যেকোন
স্ট্যাটাস
বিশ্বাস করে
নেয়। একজন
ভালো মানুষের
সম্পর্কে গুজব
রটানো তো
কোন ব্যাপারই না!
আমি যখন
ফরেনসিক ডিএনএ
ল্যাবে
কাজ করতাম
তখন প্রায়ই
পারফেক্ট মার্ডার
কীভাবে করা
যায় সেইটা
চিন্তা করতাম।
ঠিক একইভাবে,
পারফেক্ট ডিজিটাল
গুজব রটানোরও
বিভিন্ন প্ল্যান তৈরি করলাম।
ভবিষ্যতে
নানা সময়
যে কারো
ইজ্জত ধসানোর
জন্য
আপনারা এই
প্ল্যানগুলো
ব্যবহার
করতে পারেন।
রেসিপি ১: লুইচ্চামি
যেকোন সুশীল
সমাজের মানুষ
যে ইনবক্সে
একজন চরিত্রহীন
লুইচ্চা সেইটা
প্রমাণ করতে
হবে। কিন্তু,
যেই মানুষটা
চরিত্রহীন না
তাকে কিভাবে
আপনি চরিত্রহীন
প্রমাণ করবেন?
খুবই সহজ
কাজ। Remember, seeing is believing. আপনি দুইটা ফেইক
ফেইসবুক মেসেজঞ্জার
আইডি খুলবেন।
একটা থাকবে
সেই সুশীল
ব্যক্তির
নামে; উদাহরণস্বরূপ:
Ayman Sadiq. এইবার আয়মানের
ফেইসবুক থেকে
তার প্রোফাইল
পিকটা ডাউনলোড
করে সেইটা
ফেইক Ayman Sadiq এর প্রোফাইল পিক
বানিয়ে দিন।
এবার খুব
সুন্দরী একটা
মেয়ের একাউন্ট
থেকে তার
কিছু ছবি
ডাউনলোড করে
দ্বিতীয় ফেইক
আইডিটা খুলুন।
সেই আইডিটার
একটা আকর্ষণীয়
নাম দিন।
উদাহরণস্বরূপ: Mehzabeen Ahmed
এইবার দুইটা
ডিভাইস থেকে
এই দুইটা
ফেইক মেসেঞ্জার
আইডি দিয়ে
চ্যাট
করা শুরু
করুন। আপনিই
আয়মান, আপনিই
মেহজাবীন। উদাহরণস্বরূপ:
Mehzabeen:
ayman, bhiya! You are so cute! <3
Ayman: Aww
<3 I think you are cuter! <3
Mehzabeen:
Bhaiya, ki bolo? ami toh khushi te mara jabo.
Ayman:
tumi more gele amar ki hobe? :P
Mehzabeen:
Bhaiya!!! ami onek bhalo cheese cake banate pari
Ayman: ek
din amake khawaba na?
এইভাবে আলোচনাটা
মোটামুটি দুইদিন
চালিয়ে যান।
এক পর্যায়ে
ইন্টারনেট থেকে
ডাউনলোড করে
ডিক পিকচার
পাঠাতে পারেন।
যাতে, সেলিব্রিটির
নামে একটা-দুইটা নারী নির্যাতনের
কেইস পর্যন্ত
করা যায়।
তারপর কি করবেন?
স্ক্রীণশট সন্ত্রাস।
এই পুরো
কনভারসেশনটার স্ক্রীণশট
নিয়ে ফেলুন
মেয়েটার মেসেঞ্জার
আইডি থেকে।
তারপর সেই
মেয়েটার মেসেঞ্জার
থেকে সোশাল
অ্যাক্টিভিস্ট
পেইজ গুলোতে
মেসেজ পাঠান:
“আয়মান সাদিক
আমার মতো
অনেক মেয়ের
জীবন নষ্ট
করেছে। প্লিজ
আমাকে সাহায্য করুন। এই
লোকটার আসল
মুখোশ খুলে
দিন।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেইসবুক ভেঙ্গে
পড়বে। ‘মজা
নিচ্ছি’
থেকে শুরু
করে ‘আলু
ডট কম’— সবাই
পাল্লা দিয়ে
আপনার দেয়া
স্ক্রীণশট প্রচার
করবে।
আরে কেন
করবে না?
দুইজনের ছবি
দেখা যাচ্ছে।
দুইজনের নাম
দেখা যাচ্ছে।
তার থেকে
সবচেয়ে বড়
কথা, যেই
মানুষটার আকাশচুম্বী
জনপ্রিয়তায় আপনি
এতোদিন জেলাস
ছিলেন তাকে
চরিত্রহীন প্রমাণ
করার একটা
সুন্দর সুযোগ
দেখা যাচ্ছে।
আপনি কি
এই সুযোগ
ছেড়ে দিবেন?
কখনোই নয়।
আপনার জন্ম
তো এই
দেশেই হয়েছে?
তাই না?
আপনিও তাই
শেয়ার দিবেন।
আপনার মনে
এতোদিনের যতো
ঈর্ষা ছিলো
সেইগুলো দিয়ে
একটা কল্পিত
ক্যাপশন
লিখবেন। ভদ্র,
সুন্দর একটা
লোকের প্যান্টটা ভরা
মজলিশে খুলে
যাবে। ভাবতেই
ভালো লাগছে
না?
আপনি শেয়ার
দিয়ে শেষ
করা মাত্রই
দেখবেন অনেকেই
তাদের ইনবক্সের
চ্যাট
প্রকাশ শুরু
করেছে। ধরুন
Zoa নামের একটা
মেয়ের সাথে
Ayman এর চ্যাট ছিলো এই
রকম:
Zoa: Ayman
bhaiya, you have taught me some great values.
Ayman: I
am glad to hear that.
Zoa: I
think you are like the brother I never had.
I Love you <3
Ayman: I
love you too <3
এইবার জোয়া
তার এই
কথোপকথনটা স্ক্রল
করে এমন
ভাবে একটা
স্ক্রীনশট নিবে
যাতে করে
চ্যাট-টা এমন দেখায়:
Zoa: I
love you <3
Ayman: I
love you too <3
এই স্ক্রীণশটের
ক্যাপশনে
লেখা থাকবে:
একসাথে ১০টা
সম্পর্ক রাখেন
১০ মিনিট
স্কুলের সিইও
আয়মান সাদিক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সুপ্রিয়.কম
এই নিউজ
ছেপে দিবে।
আর যা
একবার সুপ্রিয়.কমে ছাপা হয়
তাই তো
সত্য।
দ্বিতীয় আলু,
বাংলাখবর, ফাজিল
ডট কমই
তো সত্য নির্ভর নিউজ।
মানুষ কি
সার্কাজম আর
সত্যের
পার্থক্য
বুঝে?
আপনার কাছে
কি এসব
অসম্ভব মনে
হচ্ছে? একবার
চিন্তা করে
দেখুন সোশাল
মিডিয়ার শেষ
দশটা আলোচিত
স্ক্যান্ডালের
কথা। যেই
মানুষগুলোর প্যান্ট আপনি
ভরা মজলিশে
জাঙ্গিয়া সহকারে
খুলে দিয়েছিলেন
তাদের বিরুদ্ধে
কি প্রমাণ
ছিলো?
কিছু স্ক্রীণশট,
কিছু out of the context উক্তি, কিছু ফাজিল.কম নিউজ, কিছু
ফটোশপ।
আপনি সেগুলোই
বিশ্বাস করেছেন।
আর বিশ্বাস
না করলেও
অন্তত সেই
মানুষটাকে এড়িয়ে
চলেছেন। মানুষটার
কথা একবার
চিন্তা করেছেন?
তার একজন
শত্রু আমার
দেয়া এই
রেসিপিটা কাজে
লাগিয়ে সুন্দর
একটা স্ক্যান্ডাল বাজারে
ছেড়ে তার
সুনামের বারোটা
বাজিয়ে দিতে
পারে। যেই
মানুষগুলো বছরের
পর বছর
পরিশ্রম করে
খ্যাতি
অর্জন করেছেন,
তাদের সকল
ভালো কাজ
কিন্তু একটামাত্র
গুজবে ধ্বংস
হয়ে যাবে।
আড়ং বেশি
দামে কাপড়
বেচেঁ—
এই নিউজ
প্রচার হওয়ার
পর লোকজন
Brac এর প্রতিষ্ঠাতা
স্যার
ফজলে আবেদ
হাসানের মতো
মানুষের নামে
গালি-গালাজ
শুরু করলো।
আড়ং Brac এর অঙ্গসংগঠন। এই
ছুতোয় আমরা
সবাই মিলে
স্যার
আবেদ হাসান
কতগুলো বিয়ে
করেছেন সেইটা
নিয়ে পর্যন্ত
নিউজ শেয়ার
দিলাম। আরে
ভাই, একটা
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন
নিয়ে আমাদের
এতো আগ্রহ
কেন?
ধরুন, রহমান
সাহেব প্রতি
বছর ১০০০
গাছ লাগান।
তাই, সমাজে
তার ভালো
সুনাম। কিন্তু,
প্রথম স্ত্রীর
মৃত্যুর
পর ৫
মাসের মাথায়
তিনি দ্বিতীয়
বিয়ে করলেন।
সাথে সাথে
তার লাগানো
১০০০ গাছের
সামাজিক মৃত্যু ঘটবে। কারণ,
আপনি আর
আমি মিলে
রহমান সাহেবের
“বুড়ো বয়সের
ভীমরুতি”
সংক্রান্ত রসিক
pun শেয়ার দিবো।
সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম আসার পর
গুজব ছড়ানো
এখন আমাদের
হবি। এককালে
my favourite hobby প্যারাগ্রাফে
আমরা কয়েন
জমানো, বাগান
করা ইত্যাদি লিখতাম। এখন
আমাদের লিখা
উচিত “making internet trolls”.
অ্যাপেলের
বর্তমান সিইও
টিম কুক
এবছর MIT বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন
বক্তৃতায় বলেছেন:
“Don’t listen to Trolls. And, don’t become one.” কুক
সাহেব কেন
এই কথার
উপর এতো
জোর দিয়েছেন
গতকাল বিকালে
তা হারে
হারে বুঝতে
পেরেছি।
টেন মিনিট
স্কুলের বিশেষত
ছোট পোলাপান
গুলো আমাকে
বেশ ভয়
পায়। গত
১ মাস
ধরে ভিডিও
শুটিং-এর সময়ে প্রতিদিনই
একটা ভুল
হচ্ছিল ।
আমার কমন
ডায়লগ হলো
“আর একবার
এই ভুলটা
হলে গলা
চাইপা ধরবো”। যথারীতি ভুলটা
আবার হলো।
গতকাল বিকেলে
আয়মানের বাসায়
জুনিয়র প্রোডাকশন
ম্যানেজার
অভিপ্সুর গলাটা
আমি চেপে
ধরলাম। কিছুক্ষণের
মধ্যেই
ছেলেটার শ্বাসকষ্ট
শুরু হলো।
গলা দিয়ে
আওয়াজ বের
হচ্ছে না।
যতটুকু শক্তি
আছে তা
দিয়ে সে
শুধু একটা
লাইন বললো:
“রাকিন, এইটা
ভিডিও কর।
ভালো একটা
মিম বানানো
যাবে।”
যেই জেনারেশনটা
নিজের শ্বাস
নেয়ার আগে
ফেইসবুকে ভাইরাল
মিম বানানোর
ব্যাপারে
বেশি চিন্তিত
সেই জেনারেশন
একটা ফেইক
স্ক্রীণশটকেই Hard Evidence মনে করবে এটাই
স্বাভাবিক। যদি
আমার এই
আড়াই হাজার
শব্দের রচনা
পড়ার পরেও
আপনার চোখ
না খুলে
তাইলে শুধু
একটাই অনুরোধ
করবো:
কারো নামে
একটা নিউজ/গুজব ভাইরাল হলেই
লোকটাকে এড়িয়ে
চলবেন না,
তাকে খারাপ
মনে করবেন
না। যদি
সে কোন
অপরাধ করেই
থাকে সেইটা
নিয়ে কেউ
আদালতে যাক।
মামলা হোক।
যদি রায়ে
তাকে দোষী
সাব্যস্ত
করা হয়
তাহলে আপনি
তাকে খারাপ
ভাবুন। অন্যথায় তাকে
আবার বন্ধুর
আসনটা ফিরিয়ে
দিন।
শেষ করবো
আবারো ফরেন্সিক
ল্যাবের
একটা অভিজ্ঞতার
কথা শেয়ার
করে। বাংলাদেশে
অনেক ধর্ষণ
মামলা সুরাহার
জন্য
ডিএনএ টেস্ট
করা হয়।
এই পরীক্ষা
করার পর
কে সত্য, কে মিথ্যা বলছে তা
অনেকটাই বেশ
পরিস্কার হয়ে
যায়। এইরকম
এক ধর্ষণ
মামলায় একবার
এক ছেলে
গ্রেফতার হলো।
ডিএনএ টেস্টে
বুঝা গেলো
মেয়েটা বেশ
মিথ্যা
কথা বলেছে।
ছেলেটাকে ছেড়ে
দেয়া হলো।
আমার মনে
প্রায়ই প্রশ্ন
জাগে, তার
বন্ধুরা কি
তাকে এখনো
“রেপিস্ট”
বলে ডাকে
না? তার
ফেইসবুকের কমেন্টে
আমরা কি
subtle pun করি না?
প্রায়ই মনে
হয়, বাংলাদেশে
এখন দুই
ক্যাটাগরীর
মানুষ থাকে।
একদল সমাজটা
বদলানোর জন্য মাঠ-ঘাটে
খেটে বেড়ায়।
কিছু একটা
করার চেষ্টা
করে। আর
অন্যদলটা
প্রথম দলের
মানুষের হাজারটা
খুতঁ ধরে
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে।
আর কোন
খুতঁ না
পেলে লুইচ্চামি
রেসিপিটা ফলো
করে তার
নামে একটা
হালকা গুজব
ছড়ায়। সেইটাই
সপ্তাহান্তে সামাজিক
সত্যে
পরিণত হয়।
আসুন ‘সামাজিক সত্য’ পরিহার করি।