Truth can sometimes be stranger than fiction
May 5, 2017 | 11492
1989 সালের আমেরিকার সেন্ট লুইস রাজ্যের শিশু হাসপাতালে রাইয়ান নামের একটা বাচ্চাকে নিয়ে ছুটে আসে তার মা প্যাট্রিসিয়া। বাচ্চাটা খুব কষ্টে শ্বাস নিচ্ছে,
বমি করেছ একটু পর পর। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর ডাক্তার মতামত দিলেন যে,
রাইয়ানের শরীরে ইথিলিন গ্লাইকল নামক এক ধরণের ক্যামিকেল দ্বারা বিষক্রিয়া ঘটানো হয়েছে। নিত্যব্যবহার্য অনেক বস্তুতেই এই ক্যামিকেল থাকে। তাই,
সন্দেহের প্রথম তীর যায় রাইয়ানের বাবা-মার দিকে। সোশাল সার্ভিস বাবা-মার কাছ থেকে বাচ্চাটাকে সরিয়ে নেয়। একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে তারা কেবলমাত্র সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটি দিনে রাইয়ানকে দেখতে যেতে পারতো।
হঠাৎ, বাবা-মার সাথে এরকম এক সাক্ষাৎপর্বের পর রাইয়ানের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তে রাইয়ানের রক্তে ও দুধের বোতলে ইথিলিন গ্লাইকল ক্যামিকালের অস্তিত্ব মেলে। সাথে সাথে আটক করা হয় মা প্যাট্রিসিয়াকে। তার বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা,
অন্যদিকে সেই মৃত্যুর জন্য নিজে জেলে যাওয়ার ঘটনায় প্যাট্রিসিয়া একদম ভেঙে পড়ে।
এরকম হৃদয়বিদারক পরিস্থিতে
1990 সালের ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেয় প্যাট্রিসিয়ার দ্বিতীয় সন্তান ডেভিড। জন্মের সাথে সাথে ডেভিডকে বাবা-মার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু,
কিছুদিন পর ডেভিডও তার মৃত ভাই রাইয়ানের মতো রোগের লক্ষণ প্রদর্শন শুরু করে। এই ক্ষেত্রে সবাই নিশ্চিত ছিলো যে,
ডেভিডকে প্যাট্রিসিয়া কোনভাবেই বিষ খাওয়াতে পারেনি। তাই,
প্রশ্ন জাগলো ডেভিড কেন অসুস্থ হচ্ছে
?
ডাক্তারি পরীক্ষার পর বোঝা গেলো ডেভিড একধরণের জেনেটিক রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম মিথাইল ম্যালোনিক এসিডেমিয়া
(MMA)। প্রায় প্রতি
48,000 এ মাত্র
1জনের এই রোগ হয়। এই বিরল রোগটির কারণে বাচ্চার জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। যেহেতু ডেভিডের বড়ভাই রাইয়ান একই পিতা-মাতার সন্তান তাই আসামী পক্ষের আইনজীবীরা ধারণা করলো রাইয়ান আসলে বিষক্রিয়ার ফলে নয় বরং,
MMA এর কারণে মারা গিয়েছিলো। কিন্তু,
আদালত এই জেনেটিক ব্যাখ্যা বুঝলো না। কারণ,
রাইয়ানের রক্ত ও দুধের বোতলে তো ইথিলিক গ্লাইকল পাওয়া গিয়েছিলো!
নিজ সন্তান রাইয়ানকে বিষ খাইয়ে হত্যার অপরাধে প্যাট্রিসিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হলো।
টেলিভিশন খবরে এই বিচারের কথা শুনে আগ্রহী হলেন সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম স্লাই। উইলিয়াম তার গবেষণাগারে মৃত রাইয়ানের রক্ত পরীক্ষা করে তাতে মিথাইল ম্যালোনিক এসিডের অস্তিত্ব খুজেঁ পেলেন। অর্থাৎ,
বড় ভাই রাইয়ানও
MMAতে আক্রান্ত ছিলো!
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো,
সেই রক্তের নমুনায় ইথিলিন গ্লাইকলের কোন উপস্থিতি পাওয়া গেলো না। তাইলে,
প্রথম ময়নাতদন্তের সময়ের রিপোর্টে ইথিলিন গ্লাইকল কীভাবে আসলো?
তখন অধ্যাপক উইলিয়াম এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিনাল্ডো প্রমাণ করলেন প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছিলো ভুল!
প্রথম ডায়াগনস্টিক ল্যাবটি পরীক্ষা করে আসলে কোন কিছুই মেলাতে পারেনি। তাই,
অনেক আন্দাজের উপর ভিত্তি করেই রক্তে ইথিলিন গ্লাইকল আছে বলে তারা ধরে নিয়েছিলো। যেই আন্দাজের পরিণতিতে প্যাট্রিসিয়া তার নিজ সন্তান হত্যার অপরাধে জেলে!
অধ্যাপক রিনাল্ড তখন ব্যাপারটি একজন বিচারকের কাছে তুলে ধরেন।
1991 সালে প্যাট্রিসিয়া মুক্তি পায় কারাগার থেকে। কিন্তু,
আজীবনের জন্য সন্তান হারানোর ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে তাকে!
বিচারক জর্জ ম্যাকিলরি তখন বলেছিলেন
“আজ থেকে আমি আর কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাটা বিশ্বাস করবো না।” কারণ,
তাদের অনেকেই ব্যবসার খাতিরে অবৈজ্ঞানিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। তার ফলে দূর্ভোগ নেমে আসতে পারে কোন এক প্যাট্রিসিয়ার জীবনে।
Truth can sometimes be
stranger than fiction.