The Ostrich Algorithm
Aug 2, 2017 | 7821
“উটপাখি নয়, মানুষের জীবন চাই”— এই শিরোনামে আমাদের বিখ্যাত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো বেশ কয়েক বছর আগে একটা প্রচারণা ক্যাম্পেইন করে। পত্রিকা খুলে প্রথম যখন এই লাইনটা দেখি তখনই আগ্রহ জাগে ব্যাপারটা ঘেটে দেখার। উটপাখি এমন কি করে যার কারণে তার এহেন মানহানি করা হলো?
প্রচলিত পপ-কালচার ঘেটেঁ যা বুঝতে পারলাম, উটপাখি নাকি বিপদ দেখলে মাটি খুড়ে মাথা ঢুকিয়ে রাখে। বিপদের মোকাবিলা না করে মাথা লুকিয়ে রেখেই সে খুশি থাকে; যদিও তার সমগ্র দেহ বিপদের মধ্যে পড়ে আছে। প্রথম আলোও হয়তো আমাদের সমাজের মানুষের বিবেককে উটপাখির এই আচরণের সাথে তুলনা করেছিলো। আমরা প্রায়শই সমাজের সমস্যাগুলোর মোকাবিলা না করে সেগুলো এড়িয়ে চলে যাই; যা পরবর্তীতে আরো বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
এখন কথা হলো, উটপাখি কেন বালিতে মাথা গুজেঁ রাখে?
প্রথমেই আপনাকে নিরাশ করি। উটপাখি বিপদ থেকে পালিয়ে বেড়াতে কখনোই বালিতে মাথা গুজেঁ রাখে না। এই পুরো ব্যাপারটাই একটা মিথ/ভ্রান্তধারণা। উটপাখির কোন বাসা থাকে না। এরা বালিতে ডিম পাড়ে। বিভিন্ন পশু এই ডিম নষ্ট করে ফেলার ধান্ধায় থাকে। তাই, উটপাখি বালিতে গর্ত করে ডিম গুলো লুকিয়ে রাখে। তাছাড়া, বালির নীচের উষ্ণ পরিবেশে ডিমের তা-দেয়ার কাজটাও কিছুটা হয়ে যায়।
মা উটপাখি প্রায়ই বালির নীচের গর্তে মাথা ঢুকিয়ে ডিমগুলো নাড়া-চাড়া করে। সেই দৃশ্য দূর থেকে দেখলে মনে হবে যে, উটপাখিটা বালির মধ্যে মাথা গুজেঁ রেখেছে। যদিও বাস্তবে সে বিপদ থেকে পালাতে কখনোই এই কাজ করে না।
কিছু গবেষকদের মতে, উটপাখির হজমে সহায়তার জন্য ছোট-ছোট নুড়ি পাথর খেয়ে থাকে। তাই যেকোন বয়সের উটপাখিকেও মাঝে মাঝে বালির মধ্যে গর্ত করে পাথর খুজঁতে দেখা যায়। কিন্তু, বিপদ এড়াতে মাথা লুকিয়ে থাকার নিদর্শন কোন প্রাণিবিদ আজ পর্যন্ত লক্ষ করেননি।
যদি উটপাখি এমনটা নাই করে তাহলে এই পপ-কালচারের উদ্ভব কীভাবে হলো?
রোমান পরিবেশবিদ ও লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার (২৩-৭৯ খ্রিস্টাব্দ) তার বইতে একবার লিখেছিলেন “imagine, when they have thrust
their head and neck into a bush, that the whole of their body is concealed.” এই লাইনের সূত্র ধরেই পপ-কালচারে উটপাখি সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণার সূত্রপাত ঘটে। আমাদের মিডিয়া ও টকশো-তে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় মানুষের বিবেককে উটপাখির এই (কাল্পনিক) আচরণের সাথে তুলনা করে অনেকেই নিজের জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করেন।
উটপাখি সমাজের মান বাচাঁতে হঠাৎ আমি কেন উঠে পড়ে লাগলাম?
বেশ কিছুদিন আগে এক প্রোগ্রামার বান্ধবীর সাথে গল্প করছিলাম। বিশাল বার্তালাপের মাঝে কোন এক সূত্রে সে বলে উঠে, “আমাদের কম্পিউটার সায়েন্সে Ostrich Algorithm নামের একটা ব্যাপার আছে। কোন প্রোগ্রামে যদি একটা সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে তাকে Ostrich Algorithm বলে আখ্যা দেয়া হয়।”
এই কথা শুনে উটপাখি সমাজের জন্য আমার খারাপ লাগাটা আরো একগুণ বেড়ে গেলো। একে তো বেচারাগুলো মোটেই বিপদে মাথা গুজেঁ রাখে না; বরং বেশ কিছু ক্ষেত্রে তারা পাল্টা আক্রমণও করে। তাই, উটপাখি সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণাটার গভীরতা কতটুকু সেটা নিয়ে গুগলে সার্চ দিলাম।
Ostrich
Algorithm
প্রোগ্রামারবৃন্দকে কোড করার সময় হাজারো সমস্যার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। একদিকে তাদের কোডকে দ্রুত কাজ করাতে হবে, অন্যদিকে সেটাকে নির্ভুল হতে হবে। যারা কোডিং করে তারা জানে এই দুই ব্যাপারের সমন্বয় করা কতটা কঠিন কাজ।
ধরুণ একটা প্রোগ্রামে এমন একটা ভুল আছে যেটা শুধরানোর জন্য প্রোগ্রামারকে অনেক লম্বা সময় ধরে কাজ করতে হবে। এই ভুলটা থেকে গেলে কম্পিউটার Hang করবে (deadlock). কিন্তু, মজার ব্যাপার হলো এই ডেডলক হয়তো প্রতি দশ বছরে মাত্র একবার হবে। এবং কম্পিউটার হ্যাং করলে সেটা মাত্র একবার রিস্টার্স দিলেই কিন্তু ঠিক হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, প্রোগ্রামার কি সেই ভুলটা শুধরানোর জন্য রাতের পর রাত খেটে যাবে?
Convenience
vs Accuracy এর যুদ্ধে Convenience কে অনেক সময়ই বেছে নিতে হয়। এরকম ক্ষেত্রে প্রায়ই কোডারবৃন্দ সেই ভুলটাকে এড়িয়ে যান বা ignore করেন। এই আচরণকেই উটপাখির কাল্পনিক coward আচরণের সাথে তুলনা করে Ostrich Algorithm বলে আখ্যা দেয়া হয়।
কম্পিউটার সায়েন্সেই কিন্তু শেষ না। এই উটপাখির রেফারেন্স রয়েছে বিজনেস স্টাডিসেও!
Ostrich Effect
শেয়ার বাজারে ধস!— কথাটা শুনলেই ব্যবসায়ীদের আত্মায় কামড় লাগে। শেয়ার বাজারের অবস্থা তাই সবসময়ই ব্যবসায়ীদের অবলোকন করতে হয়। বাজারের অবস্থা বুঝে তারা নিজের শেয়ার কেনা-বেচা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই আচরণকে বলা হয় “The Meerkat Behavior”. কারণ মিয়ারক্যাট নামক স্তন্যপায়ীরা (দেখতে বেজির মতো) অত্যন্ত সতর্ক থাকে এবং যেকোন বিপদে সুন্দর সিদ্ধান্ত নেয়।
শেয়ার বাজারে যখন ধস নামে তখন Scandinavian দেশগুলোতে (ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ইত্যাদি) ব্যবসায়ীরা খবর দেখা বন্ধ করে দেন। বাজার ধসের কোন প্রকার সংবাদ না নিয়েই তারা তখন নিজেদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নিজেদের বিনিয়োগের আহুত বিপদের কথা চিন্তা না করেই এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়াকে গালাই ও সেড নামক দুজন গবেষক “The Ostrich Effect” বলে আখ্যা দেন।
একটা পপুলার মিথ/ভ্রান্তধারণা থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এমনিক শেয়ার বাজারেও উটপাখি সমাজের নামে এমন মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানাই। উটপাখিরা বেশ গোবেচারা। তাদের নামে অপমানজনক পরিস্থিতির নামকরণ করা বন্ধ করুন।
If you really want to rename a coward situation, call it “the
human effect”. Because no other species has ignored its problems better than
us!