‘মেয়ে’ মানুষ হয়ে কেন জোরে কথা বলেন
May 4, 2017 | 13459
বাসে/রিকশায় ভাড়া নিয়ে তর্ক করার সময়;
অথবা কোন অপ্রীতিকর ঘটনার
প্রতিবাদ জানাতে গেলে মেয়েদেরকে এই
লাইনটা প্রায়ই শুনতে হয়। ব্যাপারটা
এমন যে, মেয়ে হলে
জোরে কথা বলাটা পাপ।
জোরে কথা বলাটা যেন
ছেলেদেরই অধিকার!
তুমি ‘ছেলে’
হয়ে
কেন
দায়িত্ব
নিতে
শিখো
নাই?
এ
জাতীয় কথা একটি ছেলে
প্রতিদিন তার মা/বউ/প্রেয়সীর কাছ থেকে হাজার
বার শুনে। এই বাক্যটিতে
দায়িত্ব নেয়া ছেলেদেরই কাজ- এজাতীয় একটা
আমেজ রয়েছে। কখনো কাউকে বলতে
শোনা যায় না, তুমি
‘মেয়ে’ হয়ে কেন দায়িত্ব
নিতে শিখো নাই?
“ডেটে গেলে মেয়েটার
জন্য
দরজাটা
টেনে
খুলে
দিতে
হবে।
ছেলেটাকে
বিল
দিতে
হবে।”
এই
ধারণাগুলোও সমাজে মেয়েদের অবস্থানকে দূর্বল করে। ছেলেরা ভাবে,
মেয়েদেরকে আদরে আদরে দেখে
দেখে রাখতে হয়। তারা একা
নিজের খেয়াল রাখতে পারে না। আর্থিক
দায়িত্ব বহন করা ছেলেটার
কাজ। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ মেয়েরা করতে
পারবে না। ইত্যাদি
ইত্যাদি…
এধরণের
হাজারো ধারণা আমরা মনের অজান্তে
লালন করি। চরম উৎসাহে
আমাদের ছেলে মেয়েরাও সেটা
শিখতে থাকে। ছেলেরা বড় হয় ‘দায়িত্ব’
নিতে শেখার জন্য। মেয়েরা
বড় হয় অন্যের
‘দায়িত্ব’ হয়ে উঠার জন্য। সমাজ সেটাকে
চূড়ান্তভাবে সমর্থন করে। একটা মেয়ে
স্বাধীন হতে গেলেই তাকে
উগ্রতার গালি শুনতে হয়।
নারী জাতির একটা বড় অংশ
আবার নিজেদের দাসত্বটাকে অনেকটা সাদরে মাথা পেতে নেয়।
যে পাখিটা সারা জীবন খাচাঁয়
কাটায় তাকে ছেড়ে দিতে
চাইলেও সে উড়ে যায়
না। খাচাঁটাই তখন তার দুনিয়া
বলে মনে হয়।
মনের
অজান্তে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার যে বীজ আপনি
নিজের সন্তানের মনে বপন করেছেন
তা নিয়ে ভেবে দেখুন। ছেলেটাকে শুধু
সুপারম্যান আর মেয়েটাকে
শুধু সিনড্রেলা কার্টুন দেখিয়ে আপনিও কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার সেই চারা গাছে
পানি ঢেলেছেন। সিনড্রেলার একমাত্র কাজ ছিলো নিজের
সৌন্দর্যগুণে রাজপুত্রের মন জিতে নেয়া।
ব্যাপারটা আপনার মেয়েকে কি শিক্ষা দেয়?
একবার ভেবে দেখুন।
ভবিষ্যতে আপনার
ছেলে জিমে ব্যায়াম
করে বডি বানিয়ে এলাকার
তথাকথিত ‘সুপারম্যান’ হয়ে যখন অতিসাধারণ
একটা ‘সিনড্রেলা’র জীবন ধ্বংস
করে তখন আপনার মনে
প্রশ্ন জাগে যে, আপনি
তো ছেলেকে এই শিক্ষা দেন
নি? হাহা!
ছেলেটাকে
যখন ক্রিকেট ব্যাট কিনে
দিয়ে মেয়েটাকে রান্নার চুলা-পাতিল ধরিয়ে
দিয়েছিলেন তখন মনের অজান্তেই
আপনি তাদের মাঝে একটা বীজ
বপন করেছেন। সেই বীজ পরে
মহীরুহ হয়ে মেয়েটাকে ছেলেটার
একটা “ভোগ্য বস্তু”
বানিয়েছে।
আজকে
থেকে “ছেলে হয়েছো বলে”
কিংবা “মেয়ে হয়েছো দেখে” জাতীয় বাক্য দিয়ে
কথা বলার আগে একবার
ভেবে দেখুন। যা বলতে যাচ্ছেন
সেটা কি শুধু ছেলে
বা শুধু মেয়েরই কাজ?
একবার
একটা ছাত্রীকে বৃষ্টির দিন পড়াতে গিয়েছি।
হাতে গোলাপী রঙের ছাতা। ছাত্রী
আমার ছাতা দেখে বললো
“আপনি মেয়েদের ছাতা নিয়ে কেন
ঘুরছেন?” আমি বললাম:
While other people were busy trying to be men, I was busy being a
human.