হাইজেনবার্গ
Apr 27, 2018 | 12720
‘হাইজেনবার্গ’--
নামটা শুনলেই আমাদের বয়সের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের মনে
বিখ্যাত টিভি সিরিজ
“ব্রেকিং ব্যাড” এর
প্রধান চরিত্র ওয়াল্টার হোয়াইট সাহেবের ছবিই ভেসে উঠে।
ক্যান্সার আক্রান্ত এক হাইস্কুল কেমিস্ট্রি
টিচার কীভাবে তার নিজের ড্রাগ
সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন
সেই হৃদয়স্পর্শী গল্পটা আমরা অনেকেই জানি।
প্রথমবারের মতো তিনি “মেথ”
নামক ড্রাগ বিক্রি করতে যেয়ে স্বীয়
পরিচয় গোপন করতে একটা
কালো হ্যাট আর
চশমা লাগিয়ে বলেন, “আমার নাম হাইজেনবার্গ”। কিন্তু, এতো
কিছু থাকতে ওয়াল্টার কেন “হাইজেনবার্গ” নামটা
পছন্দ করলো? এমনকি ১০ মিনিট স্কুলের
প্রাথমিক দিনে এই লেখকেরও
পদবী ছিলো “হাইজেনবার্গ”। কে এই
হাইজেনবার্গ? আজ আমি আপনাদের
হাইজেনবার্গের গল্পটা বলবো।
Werner Heisenberg (1901-1976)
বিশ্বের
অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত
এবং বিতর্কিত পদার্থবিজ্ঞানীদের মাঝে হাইজেনবার্গ অন্যতম। জার্মান এই বিজ্ঞানী তার
পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেন সমারফিল্ড সাহেবের
সাথে গবেষণা করে। সমারফিল্ড তার
মেধাবী ছাত্র হাইজেনবার্গকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সমস্যা
“turbulence” নিয়ে গবেষণা করার জন্য
উপদেশ দেন।
বিজ্ঞানীদের
সম্পর্কে অনেক গল্পে শোনা
যায় যে, তারা ছেলেবেলায়
ভালো ছাত্র ছিলেন না; পরীক্ষায় ফেল
করতেন। কিন্তু, আমাদের হাইজেনবার্গ সেরকম ছিলেন না। জার্মানীর বিখ্যাত শিক্ষক অগাস্ট
হাইজেনবার্গের ছেলে ‘ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ’ ছোটবেলায় থেকেই তার মেধার পরিচয়
দিয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানে হাইজেনবার্গের অবদান বলে শেষ করা
যাবে না। পরমাণুর গঠনের
প্রথম মডেলের আবিষ্কারক নীলস বোর থেকে
শুরু করে ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম
মডেলের অন্যতম গুরু
পউলির সাথে হাইজেনবার্গের বৈজ্ঞানিক
সখ্যতা ছিলো। আধুনিক
পদার্থবিজ্ঞানের একটা বড় সমস্যা হলো বস্তুর
কণা ধর্ম এবং তরঙ্গ
ধর্মের মধ্যবর্তী বিরোধ।
আমাদের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হাইজেনবার্গ তখন গণিতকষেই বের
করে ফেললেন, ইলেকট্রন কণা এবং তরঙ্গ-
দুটো অবস্থাতেই থাকতে পারবে; কিন্তু একই সাথে ইলেকট্রনকে
কণা ও তরঙ্গ উভয়ই
বিবেচনা করা যাবে না।”
এই বিখ্যাত নীতিকে
সবাই “Heisenberg’s
Uncertainity Principle” তথা
হাইজেনবার্গের “অনিশ্চয়তা নীতি” বলে থাকে। কোয়ান্টাম
মেকানিক্সের জনক হিসেবে ১৯৩২
সালে হাইজেনবার্গ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
But,
Heisenberg was more than only science.
জার্মান
এই পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন বেশ প্রভাবশালী। জার্মানী
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে অবস্থান করছে। চারদিকে এডল্ফট হিটলারের জয়ধ্বনি। নাজ্জি জার্মানী তখন জাত্যাভিমানের
আশ্রয়ে jews তথা ইয়াহুদী নিধনে
উন্মত্ত। তখন হাইজেনবার্গ সাহেব
বলে বসলেন, “একজন বিজ্ঞানী ইয়াহুদী
হলেও তাকে অবশ্যই
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে দেয়া উচিত।”
এই কথা বলার সাথে
সাথে হাইজেনবার্গ পড়লেন নাজ্জিদের রোষানলে। সেসময় Deutsche Physik (জার্মান ফিজিক্স) নামের একটা আন্দোলন চলছিলো
যেখানে নাজ্জি পদার্থবিদরা প্রচন্ডভাবে ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো (এধরণের মানসিকতাকে anti-semitism বলে)। তাদের
কেউ কেউ (ইয়াহুদি) আইন্সটাইনকেও
গাল দিতে ছাড় দেননি।
Deutsche Physik এর অন্যতম মুখপাত্র
হেনরিক হিমলার তার পত্রিকায় হাইজেনবার্গকে
একজন “শ্বেতাঙ্গ ইয়াহুদি” (white jew) বলে চিহ্নিত করেন।
১৯৩৫ সালের দিকে হাইজেনবার্গের জীবনে
তাই বেশ বড়সড় বিপর্যয়
নেমে আসে। তার চাকুরির
পদান্নতি আটকে যায়। এমনি
হিটলারের রাজনৈতিক দল SS তখন হাইজেনবার্গের উপর
গুপ্তচর নিয়োগ করে। সব সমস্যার সমাধান অবশেষে
করেন হাইজেনবার্গের মা!
এই মহিলা তখন হিমলারের মায়ের
সাথে দেখা করতে যান।
হাইজেনবার্গের দাদা এবং হিমলারের
বাবা একই হাইকিং ক্লাবের
সদস্য হওয়ায় দুই
পরিবারের মাঝে ঘনিষ্ঠতা ছিলো।
দুই মায়ের মুলাকাতের পর হিমলার সাহেব
হাইজেনবার্গকে দমনের মিশনে ক্ষান্ত দেন দুটো চিঠি
লিখার মাধ্যমে। SS এর
একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রথম চিঠিটিতে
লিখেন, “ইয়াহুদি সম্পকে হাইজেনবার্গের মতামত যাই হোক না
কেন এই পদার্থবিজ্ঞানী অসাধারণ
মেধাবী একজন মানুষ। তাকে
অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে
গবেষণা এবং শিক্ষকতা করতে
দেয়া হোক।” দ্বিতীয় চিঠিটা হিমলার লিখেন আমাদের হাইজেনবার্গের কাছে। চিঠিটা মূলত ছিলো একটি
সতর্কতা বাণী। হাইজেনবার্গের মুখে লাগাম দেয়ার
জন্য নানা রকম
ঠান্ডা হুমকি দিয়ে চিঠির শেষাংশে হিমলার লিখেন— “Mit freundlichem
Gruss and, Heil Hitler!” (with friendly greetings and, Heil Hitler!)। ইতিহাসের পাতায়
এই গল্পকে The Heisenberg
Affair নামে অ্যাখ্যা
দেয়া হয়।
একটা
মজার গল্প এপর্যায়ে না
বললেই নয়। SS দল থেকে হাইজেনবার্গের
পেছনে তিনজন তদন্তকারী লেলিয়ে দেয়া হয়েছিলো। তাদের মধ্যে একজন
ছিলেন জোহানেস জুইল্ফ। জুইল্ফ ছিলেন লিইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পিএইচডির ছাত্র যার থিসিস ডিফেন্সে
পরীক্ষক হিসেবে ছিলেন হাইজেনবার্গ। জোহানেস পরবর্তী জীবনে হাইজেনবার্গের বিশাল ভক্তে পরিণত হন এবং ইয়াহুদিদের
সম্পর্কে তার মতামত পরিবর্তন
করেন।
১৯৩৯
সালে শুরু হলো দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ। আটলান্টিক মহাসাগরের অপরপাশে যুক্তরাষ্ট্র তার বিখ্যাত
“Manhattan Project” শুরু
করে যেখানে রবার্ট অপেনহাইমার সাহেবের নেতৃত্বে প্রথম মার্কিন পারমাণবিক বোমা তৈরির গবেষণা
চলছিলো। যুদ্ধে টিকে থাকতে হলো
হিটলারকেও বানাতে হবে জার্মান এটম
বোম! কিন্তু, কে বানাবে এই
মারণাস্ত্র?
হিটলার
কড়া নাড়লেন হাইজেনবার্গের দরজায়।গত চার দশক ধরে
যেই জার্মান নামকড়া বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
দিতে দিন-রাত এক
করে ফেলেছিলেন তারাই এবার শুরু করলেন
জার্মান নিউক্লিয়ার রিসার্চ টীম — ইউরেনিয়াম ক্লাব। হাইজেনবার্গ হিটলারের শত্রু থেকে পরিণত হলেন
মিত্রে। হিটলার ব্যক্তিগতভাবে হাইজেনবার্গের
বৈজ্ঞানিক মতবাদের উপর আস্থা রাখতেন।
১৯৪২ সালের দিকে জার্মান সরকারের
সামনে এক লেকচারে হাইজেনবার্গ
বলেন, “১৯৪৫ সালের মধ্যে পারমাণবিক বোমা
তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়
টাকা এবং জনবল জার্মানির
নেই।” পাচঁ দিনের মাথায়
হিটলার সেই এটম বোমা
বানানোর প্রজেক্টে ঢেলে দিলেন কাড়ি
কাড়ি টাকা।
সাগরের
ওপাড়ে আমেরিকায় তখন সবাই হাইজেনবার্গের
ভয়ে নির্ঘুম। কে উড়াবে তাদের
প্রথম বোমা? হাইজেনবার্গ? নাকি ওপেনহাইমার? ১৯৪৪
সালে হাইজেনবার্গ তার গবেষণার অগ্রগতি
নিয়ে কথা বলতে গেলেন
সুইজারল্যান্ডে । সুইজারল্যান্ডকে
বলা হয় নিউট্রাল ল্যান্ড। অর্থাৎ, যুদ্ধের প্রতিপক্ষ জার্মান ও মার্কিন উভয়েই
সেখানে ঢুকতে পারবে। আমেরিকার পরিকল্পনা সংস্থা OSS তখন মেজর লীগ
বেইসবল খেলোয়াড় মোও বার্গের হাতে
একটা পিস্তল ধরিয়ে দিয়ে তাকে গুপ্তচড় হিসেবে
পাঠিয়ে দিলো হাইজেনবার্গের লেকচারে।
তাকে বলা হলো, “যদি
হাইজেনবার্গ একবারও বলে যে জার্মানি
এটম বোমা বানানোর খুব
কাছাকাছি চলে এসেছে, তাহলে
সাথে সাথে তাকে গুলি
করে মেরে ফেলবে।” এই
সরকারি আদেশ থেকে আন্দাজ
করা যায় মার্কিনিরা হাইজেনবার্গের
গবেষণায় কতটা ভীত ছিলো।
ভাগ্য ভালো ছিলো
হাইজেনবার্গের। কারণ, সত্যিকার অর্থেই
হাইজেনবার্গের গবেষণা খুব একটা সামনে
এগুতে পারে নি। যার
ফলে, মোও বার্গ সেই
লেকচারে হাইজেনবার্গকে গুলি না করেই
চলে এসেছিলো। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বকর
অবস্থাকে মোও বার্গ তার
নিজের জীবনের “অনিশ্চয়তা নীতি” বলে অ্যাখ্যা দেন।
এবার
আসুন শুনি হাইজেনবার্গের ব্যর্থতার গল্পটা। হাইজেনবার্গ পারলেন না বানাতে জার্মানির
সেই হিটলার বোমা। যদিও নিউক্লিয়ার ফিশনের
উপর তার গবেষণা বোমা
বানানোর বেশ কাছাকাছি চলে
এসেছিলো। শেষ হাসিটা হাসলেন
কিন্তু রবার্ট অপেনহাইমার।
১৬ জুলাই ১৯৪৫। ভোর ৫টা বেজে
২৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে ওপেনহাইমার
ফাটালেন “gadget”— তার প্রথম টেস্ট
বোমা। আট সেকেন্ড পর
আমেরিকার নিউ মেক্সিকো রাজ্যের আলমোগোর্ডো টেস্ট
গ্রাউন্ড পরিণত হলো সত্যিকার
দোযোখে। হাসতে হাসতে ওপেনহাইমার তখন চরণ করলেন
ভগবত গীতার সেই লাইন—
Now I am become Death, the destroyer of worlds.
gadget বোমাটির
পরবর্তী ডিজাইনটিই ছিলো Fat Man. আর এই ফ্যাট ম্যান
সাহেবের কারণেই হিরোশিমা শব্দটা সারা দুনিয়ার মানুষ
ভয়ার্ত হৃদয়ে স্মরণ করে। হাইজেনবার্গ হারলেন
ওপেনহাইমারের কাছে। He was not the one who
knocked.
যুদ্ধে
হারলো জার্মানি। কিন্তু, চিন্তা করে দেখুন, যদি
হাইজেনবার্গ আসলেই বোমা বানিয়ে হিটলারের
হাতে তুলে দিতেন তাহলে
হয়তো আজোও সেই বিশ্বযুদ্ধ
শেষ হতো না!
১৯৪৫
সালে যুদ্ধ শেষ হবার পর
বিশ্বের চাবি চলে গেল
আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন
(আজকের রাশিয়া) এর হাতে। জার্মানির
নিউক্লিয়ার গবেষণার অগ্রগতি বুঝতে Alsos Mission নামে একটা প্রোগ্রাম
চালু করা হলো। ইংল্যান্ডে গ্রেফতার করা হলো হাইজেনবার্গ,
অটো হ্যানের মতো
বিখ্যাত ৯ বিজ্ঞানীকে।
এদের ভয়ে এতো দিন
আমেরিকানদের ঘুম হারাম ছিলো!
এখন কি করবে এদের
সাথে? আপনি হয়তো ভাবছেন
মেরে ফেলবে। কিন্তু, না…
মিলিটারি
ইন্টেলিজেন্স-সিক্স তাদেরকে নিয়ে গেলো Farm Hall নামের একটা গোপন জায়গায়।
সেখানে মাসের পর মাস বেশ
আদর-সোহাগে রাখা হলো জার্মান
বিজ্ঞানীদের সেই দলকে। ব্রিটিশরা
যে কত বুদ্ধিমান তা
এখন বুঝতে পারবেন। তারা দীর্ঘসময় ধরে
এই বিজ্ঞানীদের নিত্যদিনের কথোপকথন
গোপনে রেকর্ড করে। বেশ বিস্ময়
নিয়ে তখন তারা বুঝতে
পারে হাইজেনবার্গ ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর ভারী
আইসোটোপ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন! এতো
কাছে থেকেও কেন তিনি সফল
হতে পারলেন না তা অনেকেরই
বিস্ময়ের কারণ। তবে জার্মান বিজ্ঞানীদের
অনেকেই এই বোমা বানানের
যৌক্তিকতা এবং বিশ্বের উপর
এই বোমার ভয়ানক প্রভাবের কথা নিয়ে প্রায়ই
গল্প করতেন। ১৯৪৬ সালের ৩
জানুয়ারি এই সব বিজ্ঞানীদের
জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়।
মু্ক্তি পেলেন হাইজেনবার্গ।
যুদ্ধ
শেষে হাইজেনবার্গ কিন্তু অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সংস্থা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। বেশ
কিছুদিন তিনি কেম্ব্রিজ, ব্রিস্টল,
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দেন। সার্নে জার্মান
প্রতিনিধি দলের প্রধানও ছিলেন
হাইজেনবার্গ। ১৯৭৪ সালে তাকে
ধর্ম এবং বিজ্ঞানের সত্যতা নিয়ে চিন্তার
জন্য Romano Guardini পুরস্কার দেয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে
দেয়া ভাষণ থেকে হাইজেনবার্গের
ধর্ম নিয়ে বিস্তর চিন্তা-ভাবনার একটা আন্দাজ করা
যায়:
“পিসার হেলানো
টাওয়ারে গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সেই গবেষণা থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বিজ্ঞানের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, সবাই ধর্ম আর বিজ্ঞানের মাঝে বিদ্যমান দ্বন্দের কথাই বেশি বলে। বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে আমি কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না; একই
সাথে ধর্মের জ্ঞানকে মিথ্যা প্রমাণ করার মতো ক্ষমতাও আমার নেই। সারা জীবন ধরে আমি “ধর্ম আর বিজ্ঞান”— এই দুটো জগতের সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করেছি। এক মুহুর্তের জন্যও আমি কোনটারই অসাড়তা দেখতে পারি নি।
বিজ্ঞান
তো খালি পরিমাপের কথা বলে। কিন্তু, বিজ্ঞান কি পারবে মনুষ্যত্ব কিংবা নীতি পরিমাপ করতে? এই সকল মানবিক বিষয়ে যখন বিজ্ঞানের স্কেলের দাগগুলো আস্তে আস্তে মুছে যায় তখন আপনি দেখতে পারবেন ধর্মকে।” (ভাবানুবাদ, লেখক)
প্রচলিত
সমাজের সামনে হাইজেনবার্গ সাহেব বেশ বামপন্থী এবং
আপাতদৃষ্টিতে নাস্তিক বলে প্রচলিত থাকলেও
নিকটজনদের কাছে তিনি ছিলেন
ঈশ্বরের একনিষ্ঠ বিশ্বাসী। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে একবার হতাশ হয়ে বলেছিলেন:
When I meet God, I am going to ask
him two questions— why relativity? and why Turbulence? I really believe he will
have an answer for the first one.
যারা
হাইজেনবার্গকে কাছ থেকে চিনতেন
তারা জানতেন ঈশ্বরে তার বিশ্বাস কতটা
প্রকট। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬
সালে কিডনীতে ক্যান্সার আক্রান্ত
হয়ে এই বিখ্যাত
পদার্থবিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।
পরদিন সকালে তার বন্ধুরা হাইজেনবার্গের
অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত
হেটেঁ যান এবং সদর
দরজার বাহিরে মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখে আসেন। জার্মানির
মিউনিখে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। আমার
কল্পনার জগতে হাইজেনবার্গ আর
ঈশ্বর বেহেস্তে বসে প্রায়ই বিজ্ঞান
নিয়ে গল্প করেন। রিলেটিভিটি
টপিকটা হাইজেনবার্গের কাছে এখন অনেক
পরিষ্কার। ঈশ্বর বেশ ভালোই বোঝাতে
পারেন দেখি। টার্বুলেন্সের কথাটা তুলতেই হাইজেনবার্গ কেনো জানি এখনো
বেশ বিরক্ত হন…
The first gulp form the glass of
natural science will turn you into an atheist, but at the bottom of the glass
God is waiting for you. (Werner Heisenberg)