তোমাদের প্রশ্ন-আমার উত্তর
May 27, 2020 | 25542
অক্সফোর্ডে আসার পর থেকেই হাজারটা ইমেইল আর ফেইসবুক মেসেজ পেয়েছি। সময়ের অভাবে তার সিংহভাগই খুলে দেখতে পারিনি। আজকে এক বসায় সবচেয়ে বেশী পাওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। আশা করি, এতে করে আমার ঘাড়ের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
প্রশ্ন-০১: ভাইয়া, আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে কি অ্যাড হওয়া যাবে?
উত্তর: আমার প্রোফাইলে সবকিছুই পাবলিকভাবে দেয়া হয়। তাই ফ্রেন্ডলিস্টে যোগ হওয়ার আলাদা কোন সুবিধা নেই। আমার ফলোয়ার অপশনটাও খোলা আছে। ফলো করে রাখলেই আমার সব পোস্টের আপডেট পাওয়া যাবে। আর ফেইসবুক মেসেঞ্জারে আমি একেবারেই নিয়মিত নই। তাই সেখানে আমার কাছ থেকে উত্তর আশা না করাটাই ভালো। আমার সাথে যোগাযোগ করার সব থেকে ভালো উপায় আমার ওয়েব সাইটের contact form পূরণ করা। সেখানে পাঠানো ভালো মেসেজের উত্তর আমি নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু ফেইসবুক একটি প্রোফাইলে ৫,০০০ এর বেশী ফ্রেন্ড রাখতে দেয় না, তাই আমি কারো রিকোয়েস্টই আর গ্রহণ করতে পারি না।
প্রশ্ন-০২: ভাইয়া, অক্সফোর্ডে চান্স পেতে কত সিজিপিএ দরকার?
উত্তর: একেক বিভাগে এর চাহিদা একেক রকম। তবে গড়ে ৩.৬ সিজিপিএ হলো এখানকার জন্য মানদন্ড। আমার বিভাগে ৩.৮ এর নীচের স্টুডেন্ট নেয় না। সেটা তারা তাদের ওয়েব সাইটে ভালো করেই বলে দেয়। তাই, তুমি যেই বিভাগে আবেদন করতে চাও সেই বিভাগের ওয়েব পেইজটা পড়ে দেখো।
প্রশ্ন-০৩: স্নাতক পর্যায়ে অক্সফোর্ডে পড়তে কি কি যোগ্যতা লাগে?
উত্তর: আমি অক্সফোর্ডে এসছি স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য। তাই স্নাতক পর্যায় নিয়ে আমার জ্ঞান শূণ্যের কাছাকাছি। যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে আমি কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করি। তাই, স্নাতক নিয়ে জানতে চাইলে অক্সফোর্ডে ওয়েব সাইট www.ox.ac.uk ঘেঁটে দেখো। সেখানেই সব কিছু বলা থাকবে।
প্রশ্ন-০৪: ভাইয়া আমার সিজিপিএ ৩.১। অক্সফোর্ডে পড়া আমার স্বপ্ন। আমি কীভাবে চান্স পেতে পারি?
উত্তর: সম্ভবত চান্স পাবে না। অক্সফোর্ডে সব বাঘা সিজিপিএ-ওয়ালার আবেদন করে। তাই, ৩.৫-৩.৬ না থাকলে এখানে আবেদন করাটা আমি যুক্তিসংগত মনে করি না। তবে, অবশ্যই আমার কথাই সব না। খুজঁলে হয়তো দেখা যাবে কেউ ৩.০ সিজি নিয়েও হয়তো অক্সফোর্ডে চান্স পেয়েছে।
প্রশ্ন-০৫: অক্সফোর্ডে চান্স পেতে এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটি কতটা জরুরী?
উত্তর: স্নাতক পর্যায়ে অনেক বেশী জরুরী। স্নাতকোত্তরে বিশেষ করে পিএইচডিতে খুব একটা জরুরী নয়। রিসার্চ কোর্সে মূলত পূর্ববর্তী রিসার্চ অভিজ্ঞতা বেশী কাজে লাগে। ক্লাস-পরীক্ষা নির্ভর কোর্স (taught course) গুলোতে একট্রা-কারিকুলার একটিভিটি বেশি দেখা হয়।
প্রশ্ন-০৬: ভাইয়া, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এখন থেকে কীভাবে প্রস্তুতি নিলে আমি অক্সফোর্ডে পড়তে পারবো?
উত্তর: তোমার জন্য কোন রাস্তাটা কাজ করবে আমার জানা নেই। আমি কি করেছি তা তোমাদের বলতে পারি। আমি চেষ্টা করেছি যাতে করে আমার সিজিপিএ সবসময় ৩.৯+ থাকে। সাথে সাথে আমি ১০ মিনিট স্কুলের মতো সোশাল বিজনেসের সাথে যুক্ত হয়েছি। এগুলো সিভিকে অনেক বুস্ট করে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই আমি অক্সফোর্ডের সাইটের আনাচে-কানাচে ঘেটেঁ দেখেছি। কারো কাছে না যেয়ে আগে নিজ থেকে পড়ে সবকিছু বুঝেছি। এমনকি ভিসা কীভাবে পেতে হয় তাও জেনে রেখেছিলাম।চতুর্থ বর্ষের শেষদিকে অক্সফোর্ড পড়ুয়া ভাইয়াদের সাথে যোগাযোগ করি এবং আবেদনপত্র তৈরি করে ফেলি। সুতরাং, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, নিজে নিজে সার্চ করে প্রশ্নের উত্তর বের করা। তোমাকে যদি আমার প্রতিটা পদে পদে উপায় বাতলে দিতে হয় তাহলে হয়তো তুমি অক্সফোর্ডে আসার যোগ্য না। কারণ, এখানে আসার পর খুবই স্বাধীনভাবে নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে হয়।
প্রশ্ন-০৭: ভাইয়া, অক্সফোর্ডে আবেদন করার জন্য আপনি কি আমার মেন্টর হবেন?
উত্তর: তুমি যদি অক্সফোর্ডে আবেদন করতে চাও, তোমার যদি সম্ভাব্য কোর্সে আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতা থাকে, এবং নিজ থেকে সার্চ করে রাস্তা বের করার আগ্রহ এবং ইচ্ছা থেকে থাকে তাহলে আমি তোমার মেন্টর হতে চাই। আমি অক্সফোর্ডে চান্স পেয়েছি আমার কিছু কাছের মানুষের উপদেশ মেনে। তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। তবে আমি পারত পক্ষে তাদেরকে কোন প্রশ্ন করতাম না। আগে নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজের বের করতাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিতাম নিজ থেকেই। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে আমার মেন্টরদের কাছে পরামর্শ চাইতাম। সুতরাং, তুমি যদি সেইভাবে যোগাযোগ করতে পারো আমি অবশ্যই তোমার মেন্টর হবো।
প্রশ্ন-০৮: ভাইয়া, আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? (অনেক ছেলেও কেন এই প্রশ্নটা করেছে সেটা আমার কাছে এখনো বোধগম্য নয়।)
উত্তর: না। রিলেশনশিপে অনেক সময় দিতে হয়। অনেক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হয়। দুটোর কোনটাই আমাকে দিয়ে হয় না।
প্রশ্ন-০৯: ভাইয়া, আপনি কীভাবে রুটিন মেনে সব কাজ করেন?
উত্তর: আমি প্রতি রবিবার রাতে বসে গুগল ক্যালেন্ডারে পুরো সপ্তাহের সব কাজগুলো লিখে ফেলি। ল্যাবের এক্সপেরিমেন্ট থেকে শুরু করে কারো সাথে কফি খেতে যাওয়ার প্ল্যানটাও ইলেকট্রনিকভাবে লেখা থাকে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে পরেরদিনের কাজগুলো কি তা দেখে রাখি। যা রুটিনে লেখা নেই সেই কাজ ওই সপ্তাহে কোনভাবেই আমি করবো না। নতুন কাজের আইডিয়া আসলে তার লিস্ট বানিয়ে গুগল নোটে রেখে দেই। পরের সপ্তাহের রুটিন বানানোর সময় সেগুলো যোগ করে দেই আমার কর্মতালিকায়। প্রতিদিন অন্তত ১ ঘন্টা সময় রাখি বই পড়া/ নেটফ্লিক্স দেখার জন্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভুলেই পড়াশোনা/গবেষণার কাজ করি না। এই দুটো দিন পুরোটাই কাটে রান্না বান্না করে আর আড্ডা দিয়ে।
প্রশ্ন-১০: ভাইয়া, ক্যান্সারের কি কোন প্রতিকার আছে?
উত্তর: ক্যান্সার একটা রোগ নয়। একেক অঙ্গের ক্যান্সার একেক কারণে হয়। শুধু ব্লাড ক্যান্সারই আছে ৮-১০ ধরণের। প্রতিটার প্রতিকার ভিন্ন। সুতরাং, এই প্রশ্নের সোজা উত্তর নেই। কিছু কিছু ক্যান্সার, যেমন বাচ্চাদের ব্লাড ক্যান্সারের ভালো ওষুধ আছে যা রোগীর জীবন বাচাঁতে পারে। অন্যদিকে কোলন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারের প্রতিকার করাটা অপেক্ষাকৃত কঠিন।
তোমাদের প্রশ্নগুলো পাঠাতে থাকো। ভবিষ্যতে আরো কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর এইভাবে একটা ব্লগে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। সবার জন্য অনেক ভালোবাসা রইলো।