সাকিব বিন রশীদ
May 27, 2020 | 4076
সাকিব বিন রশীদ (ওরফে SBR) এক বিরক্তিকর চরিত্র। নেহায়েত ভালো একটা জোকস তৈরি করার জন্য ছেলেটা অসম্ভব পরিমাণ কষ্ট করতে পারে। ঠিক দুই বছর আগে আমার ব্রেক আপ হলো। আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের নতুন প্রেমের ছবি ছেলেটা রেগুলার ডাউনলোড করে তার ফোনে জমা করলো। মাস তিনেক পর বললাম, “I think I am over her.” সাথে সাথেই ফোনের অ্যালবামটা খুলে বললো, “বন্ধু, ঘটনাটা দেখো।” এই কাজটা করে সে কি মজা পায় আমার জানা নাই। তারপরও বলবো, ছেলেটার হিউমার সেন্স আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা! সম্প্রতি গেইম অফ থ্রোন্স নিয়ে বানানো তার ভিডিওটা দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। তবে এই ভিডিও তার আসল ট্যালেন্টের ১০% মাত্র। কাছের মানুষ ছেলেটাকে শুভ বলে ডাকে। শুভর বেস্ট জোকস শুরু হয় রাত ২ টার পর।
ঢাকায় আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্তগুলোর অন্যতম হলো শুভর সাথে নাইট চিল (অথবা নাইট হুড) করা। রাত বারোটার দিকে সে আমাদের সবাইকে বিরক্ত করে তার প্রেয়সীকে ফোন করতে যাবে। ফোন কল শেষ করে এসে কতক্ষণ প্রেয়সীর নামে গালিগালাজ করবে। বোঝানোর চেষ্টা করবে এই ফোনকলটা সে বাধ্য হয়ে করে। এরপর ঘন্টা খানেক নাক ডেকে ঘুমাবে। রাত ২টা বাজতেই হঠাৎ শুভ ঘুম থেকে উঠে কাথা মুড়ি দিয়ে বসবে। কিছুক্ষণ সে যে নাক ডাকে সেই ব্যাপারটা অস্বীকার করবে। এমনি ভিডিও করে রাখা ক্লিপকেও এডিটেড বলে উড়িয়ে দিবে। এরপর শুরু হবে গল্পের আসর।
অধিকাংশ গল্পের ৯৩% হচ্ছে নেহায়েত মিথ্যা কথা। বেশ খানিকটা বাড়ানো; আর বানানো। গল্পের আসল মজাটা হলো বলার ভঙ্গিতে। সেই গল্পের এক কোণা থেকে শুরু হবে আলোচনা। সেই আলোচনা প্রথমে সমাজ, অর্থনীতি, গেইম থিওরী, বিবর্তনবাদ পার করে ধর্মে যেয়ে ঠেকবে। একটা গীবতের আসর পরিণত হবে অসম্ভব মেধাপূর্ণ আড্ডায়। রাত বাড়বে, ১০ মিনিটের পুরোনো সেই রাত। গল্পের শেষ হবে না।
সকাল বেলা শামস-শুভ-শামীর যাবে স্টার কাবাবে কলিজা আর মগজ ফ্রাই খেতে। সেখানে শুভ খাবারের কোন প্রকার বিল দিতে চাবে না। আজ পর্যন্ত শুভর কাছ থেকে এক টাকার ট্রীটও আমি আদায় করতে পারি নাই। শুভর ভাষ্যমতে, “শুভর থেকে বড় ছোটলোক তার জানামতে আর একটাও নেই।”
আমি সত্যবাদী মানুষ (এটা আজকের দিনে আমার বলা ১৯ নম্বর মিথ্যা কথা)। তাই শুভর প্রশংসার পাশাপাশি বদনামটাও করবো। ছেলেটার ভালো দিক হলো সে অনেক ফান; খারাপ দিক হলো আঙ্গুল দিয়ে নাকের ময়লা খুটায়। তারপর সেটা দিয়ে ছোট ছোট বীচি বানিয়ে বিছানার পাশে রেখে দেয়। সে কখনোই পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ঘুরে না। রাত্রিবেলা অন্যের ফোনটা খুলে নিজেরটা চার্জ দেয়। সকালবেলা হাতে নাতে ধরার পরও সেটা অস্বীকার করে। ভিহিমেন্ট ডেনাইয়াল, ভাইয়া। কিচ্ছু করার নাই।
বন্ধু হিসেবে শুভর কাছে কিছু আশা করাটা লস্ট প্রজেক্ট। শুভর বান্ধবীর বার্থডে পার্টিটা আমি আয়োজন করলাম, সেখানে ইয়াসীন শাফিও একটা ফুলের তোড়া নিয়ে আসলো। শুভ আসলো খালি হাতে। কারণ, “শুভর সঙ্গ পাওয়াটাই নাকি একটা গিফট।”
জীবনে অনেক কিছুরই কাফফারা দেওয়া যায়। আপনি জোকস বলতে না পারলে অন্যের জোকসে পরিণত হবেন (হাই, অভিপ্সু!)। ভিলেজ ইডিয়টকেও মানুষ ভালোবাসে। একটা জিনিস রয়েছে যার কাফফারা দেয়া যায় না। সেটা হলো আনফান হওয়া। আমি আর শুভ ওয়াদা করেছি, আনফান মানুষ যতই জ্ঞানী হোক না কেন তাদের সাথে থাকা যাবে না। হ্যাপিনেস ইনডেক্স কমে যাবে।
ক্লাস ফাকিঁ দিয়ে দুই বন্ধু মিলে বান্ধবী বগলদাবা করে কতবার যে ধানমন্ডি-জিগাতলা-বেইলী রোড দাবিয়ে আড্ডা দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। ধানমন্ডির ম্যাডশেফে বসে বাংলাদেশের ইংল্যান্ড জয়ের দৃশ্য দেখলাম। জিগাতলার রাস্তায় দুজনে মিলে পাগলের মতো দৌড়ালাম। এশিয়া কাপের ফাইনাল হারার পর ভিহিমেন্ট ডিনাইয়ালে চলে গেলাম। রমজান মাসে শুভর বাসায় গিয়ে মুরগী কেনা বাবদ ধার্যকৃত ৩৫ টাকা দেয়ার বিনিময়ে সেহরী খেলাম। সলিমুল্লাহ রোডে শুভর তথাকথিত ৩০ টাকায় ৫ কেজি মাংস দেয়া মুরগীর স্যুপও খেলাম। জীবনটা আমাদের এক্কেবারে খারাপ যায় নাই।
গল্পের শেষটা হবে নেপালের ত্রিশুলি নদীতে। দলবলে রাফটিং করতে বের হয়েছি। শুভর ভীষণ জ্বর। কিছুক্ষণ আগে সে বাঞ্জি জাম্প করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মিনিট দশেক পর রাফটিং শুরু হলো। ৩০ সেকেন্ডের মাথায় নৌকায় উল্টে গেলো। আমি আর শুভ পানিতে। আমাদের পায়ের নিচে ডুবছে জিয়াউস শামস। হাল্কা অক্সিজেন পেতেই শুভ লাফ দিয়ে উঠে বললো, “শামীর আমি সরি! আমাকে লাখ টাকা দিয়েও আর নৌকায় উঠানো যাবে না। আমি বাকি জীবনটা এই পানিতে ভেসে বেড়াবো।” এরপর দুই বন্ধু মিলে ত্রিশুলির খরস্রোতা নদীতে ভাসতে ভাসতে গান গাইতে লাগলাম, “ও মোর রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ!”
শুভর সাথে কাটানো প্রতিটা দিনই একটা ঈদ।
শুভ জন্মদিন, শুভ। খুব শীঘ্রই মহাখালি এসে ফোন দিবো। মানুষজনকে উবারে হাইজ্যাক করে আমার বাসায় নিয়ে এসে চিল-এতেকাফ শুরু হবে। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাক, নাক খুটা…