একজন ঢাবি ক-ইউনিট পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার হলের স্মৃতিচারণ
May 5, 2017 | 13270
আমি নটর ডেম কলেজের বেশ প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম। সবসময়ই বেশ ভালো রেজাল্ট করতাম। 2011 সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক-ইউনিটে চান্স পাওয়া ছিলো আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। প্রস্তুতিও ছিলো অনেক ভালো। কিন্তু, 14 অক্টোবরের সেই পরীক্ষার অভিজ্ঞতা ছিলো ভয়াবহ!
হলে গিয়ে প্রথমে দেখলাম আমার সিটের উপর কাগজের স্লিপটা লাগানো নাই। দেখেই মেজাজ খারাপ। স্যারকে বললাম। স্যার অফিসে জানালেন। অফিসের লোকজন আরামে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। আমার মেজাজ তখন তুঙ্গে।
আমাদের সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যেতো। তাই আমি 991 ইএস মডেলের ক্যালকুলেটর নিয়ে গেলাম। স্যার বললেন প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর তো ব্যবহার করা যাবে না। আমি তাকে বললাম, এইটা তো নরমাল ক্যালকুলেটর। প্রোগ্রামেবল না। তিনি আস্বস্ত হলেন না। কিছুক্ষন ঝামেলা করে বসতে দিলেন। ততক্ষণে আমার মেজাজের অবস্থা খুবই খারাপ।
পরীক্ষা শুরু হলো। দেখলাম OMR ফর্মে সিরিয়াল নম্বর ভুল লিখেছি। এতো প্রশারে পড়ে অবস্থা নাজেহাল। তখন, ঠিক বৃত্তটাও ভরাট করে দিলাম। ভাবলাম, দুইটা বৃত্ত ভরাট হলে কম্পিউটার এই রোল ধরতে পারবে না। সুতরাং, এটাতে ম্যানুয়ালি তখন রোল ইনপুট হবে। তাই করলাম।
অংক করা শুরু করার পর প্রথম 5মিনিট ধরে সব উত্তর MATH ERROR আসতেসিলো। কারণ, গতরাতে MATRIX মোডে অংক করেছিলাম। সেটা চেঞ্জ করার কথা মনে ছিলো না।
আমাদের সময় পরীক্ষা হতো 1ঘন্টা 45মিনিট ধরে। প্রশ্ন মাত্র 120 টাই। এতো সময় ধরে পরীক্ষা দিয়েও আমি 12টা প্রশ্ন পড়েই দেখতে পারি নাই। বাসায় এসে তো আমার মনটাই ভেঙ্গে গেলো। যতই বন্ধুদের সাথে কথা বলি হতাশা যেন খালি বাড়েই।
পরবর্তী 7 দিন ছিল খু্বই কষ্টকর। প্রতি মুহুর্তেই মনে হতো বাকি সবাই চান্স পাবে কেবল আমি ছাড়া।
অবশেষে, রেজাল্ট আসলো। ৯৫তম হয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার সুযোগ পেলাম। পরে মনে হয়েছিল, সাতটা দিন কী দুশ্চিন্তটাই না করেছিলাম!
সবারই পরীক্ষা মন মত হয়নি। এটা খুবই স্বাভাবিক। পরীক্ষার পর খুশি থাকে সে যার প্রস্তুতি একেবারেই ছিলো না। সে হয়তো 50টা উত্তর পেরেই খুশি।
একটাই উপদেশ। পরীক্ষা দিয়ে তুমি খুশি না হলেও চান্স পেতে পারো। চান্স পেতে মনমতো পরীক্ষার দরকার হয় না। MCQ তে দাগিয়ে আসা সঠিক উত্তরের দরকার হয়। তুমি হয়তো জানোও না যে তোমার অনেক উত্তরই হয়েছে যেটা 95% মানুষই পারে নি।
সুতরাং, একটাই অনুরোধ: CHILL. It’s over! You can’t change
anything now. But, you can prevent an upcoming heart attack by NOT SOLVING the
question paper. Sleep Tight and Keep Calm.
শামীর মোন্তাজিদ
জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়