ইচ্ছে ঘুড়ি
Personal Life

ইচ্ছে ঘুড়ি

May 27, 2020   |    3805


গল্পের শুরুটা ২০১০ সালে। দিনটা ছিল ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ। তখন আমি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। পরের দিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। বাঙালী আনন্দের দিনে এভাবে পড়তে মোটেও আমার ভালো লাগছিল না। আমার খুব ভালো এক বান্ধবী ছিল-সামিয়া। সকাল বেলা সামিয়া ফোন দিয়ে বের হতে বলল। গন্তব্য বেইলী রোড-কেএফসি। পহেলা বৈশাখেও পাশ্চাত্যের মুরগী চাবানোর অভ্যাস থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারলাম না। যাই হোক, সকাল বেলা আমি, সামিয়া, মীম, শুভ, নওশীন আসলাম নববর্ষ উৎযাপন করতে। সেদিন অনেক বছর পর প্রথম বারের মত দেখা হয় ফারিহার সাথে।


ফারিহা মেহজাবীন। স্কুলে ক্লাস ফাইভে আমার সাথে পড়তো। আমি ছোটবেলায় অনেক লাজুক প্রকৃতির ছিলাম। তাই, কখনোই কথা বলা হয়নি ওর সাথে। কিন্তু, সেদিন শাড়ি পড়া ফারিহাকে দেখে পুরোই অন্যরকম লাগছিল। মুখ ফুটে বলতে না পারলেও মনে মনে অসংখ্য বার বলেছি, “তুমি অনেক সুন্দর হয়ে গেছো।


এরপর থেকেই ফারিহা আমাদের গ্রুপের অনিয়মিত সংগী হয়ে গেলো। যতদূর মনে পড়ে আমার জন্মদিনের পার্টিতে এসেছিল। আর একদিন বিএফসিতে কলেজের ড্রেস পড়েই চলে এসেছিল সে। স্বভাবে একেবারেই চুপ-চাপ। তবে মাঝে মাঝে বুঝে শুনে একটা দুইটা কমেন্ট করে কাউকে একেবারে ধুয়ে দিতে পটু। আমাদের সবার ধারণা ছিল, খুবই ফাংকি টাইপ ছেলে ফারিহার পছন্দ। আমি মোটেও সেরকম ছেলে ছিলাম না।


এভাবেই মোটামুটি চলতে থাকে কলেজ পড়ুয়া কিছু কিশোর-কিশোরীর বন্ধুত্ব। তাতে প্রেম ভালোবাসার ছোঁয়া তখনো লাগেনি। সময়টা ছিল শুরুর আগের এক অনাড়ম্বর প্রস্তুতি। কলেজ জীবনের ব্যস্ততার মাঝে দ্রুত সময় কেটে যেতে থাকে। একসময় দরজায় কড়া নাড়ে এইচ এস সি পরীক্ষা। সে সময়টা ছিল অত্যন্ত কঠিন। পরীক্ষা শেষে শুরু হবে ভর্তি যুদ্ধ। পরীক্ষার আগেই আমরা সব বন্ধুরা মিলে কোচিং ভর্তি হয়ে গেলাম। ফারিহাও ছিল আমার ক্লাসে। বিধাতা এক অসাধারণ গল্পের ভূমিকা লেখার প্রস্তুতি নিলেন মাত্র। 


এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। কাছের বন্ধু হিসেবে সামিয়ার সাথে আমার প্রতিদিনই কথা হতো। হঠাৎ একদিন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই সামিয়া এসে বলল, শুভর সাথে ওর মধুর প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়েছে। আসলে বিনা মেঘে বজ্রপাত বলাটা ভুল হবে। এই মেঘের গুরু গুরু ডাক আগেই শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল। পরীক্ষার মাঝে এতো বড় ঘটনা ঘটে যাওয়াটা কেউ আশা করেনি। সামিয়ার হালকা সন্দেহ ছিল, ফারিহা এতে কষ্ট পাবে। কারণ, কলেজ জীবনে শুভকে নিয়ে ওকে পচানো হতো খুব। বাস্তবে ফারিহা ব‍্যাপারটাকে পাত্তাই দিলো না। বাবা-মায়ের আদরে বড় হওয়া অত্যন্ত নিখুত স্বভাবের মেয়ে ছিল ফারিহা। প্রতিভার অসামান্য সমাহার ছিল ওর মাঝে।


পরীক্ষা শেষে রীতিমত যুদ্ধ শুরু হলো। এই যুদ্ধের নাম ভর্তি যুদ্ধ। অতি আশার সাবজেক্টে চান্স পাওয়ার জন্য আট-ঘাট বেঁধে আমরা কোচিং শুরু করলাম। কয়েক সপ্তাহ আমার সব বন্ধুরা ক্লাস-গল্প-খাওয়া-দাওয়া করেই কাটিয়ে দিলাম। তৃতীয় সপ্তাহে ম্যাথ ক্লাসটা ছিল ধারা-দ্বিপদীর উপর। ক্লাস শেষে ফারিহা কিছুটা আশাহত! আমাকে এসে বলল, কিছুই বুঝতে পারে নাই। জিজ্ঞাসা করল, আমি কি ওকে সময় করে ক্লাসের পড়াগুলো বুঝিয়ে দিতে পারবো কিনা। হালকা হেসে সেদিন আমি বলেছিলাম, “তোকে বুঝাবো এক শর্তে, আমাকে গ্রিল খাওয়াবি...” 


ফারিহার বলল, ‘ঠিক আছে চল বেইলী রোডের এক দোকানে বসে আমি শুরু করলাম ম্যাট্রিক্স-নির্ণায়কের লেকচার। ছাত্র হিসেবে আমি মোটেও খারাপ ছিলাম না। বলতে গেলে একেবারে আদর্শ ছাত্র টাইপ। ফারিহাকে বুঝাতে আমাকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। আর বিনিময়ে গ্রিল খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার ব্যাপারটা ছিল আরো আনন্দের। তবে ওই দিন আমার সাথে ক্লাসের পর এভাবে পড়তে পড়তে বেশ সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফারিহা জীবনে প্রথমবারের মতো না বলে বাসায় ফিরতে দেরী করছে। ওর বাবা-মা তো বাসায় চিন্তায় অস্থির! যাই হোক, সামিয়ার ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে গেল। দিনটা ছিল সম্ভবত জুন ২০১১। একসাথে সময় কাটানোর সেটা ছিল শুরু। বিন্দু বিন্দু শিশির তখন কেবল জমতে শুরু করেছে!


সামিয়া-শুভর সম্পর্ক হওয়ার পর আমার বন্ধু সংকট দেখা দেয়। নয়া কপোত-কপোতী নিজেদের নিয়ে প্রেমে মজে থাকায় আমার কথাগুলো বলার মানুষের অভাব দেখা দিল। তাই মাঝে মধ্যেই কোচিং ছুটির পর ফারিহার সাথে ঘুরতে বের হতাম। আল-বাইকে, বিএফসিতে খেতে খেতে আমরা ভালো বন্ধু হতে শুরু করি। রাতে অনেক পড়াশুনা করে ঘুমানোর আগে আমি ফারিহাকে ফোন দিতাম। ফারিহাও ধীরে ধীরে আমাকে জানতে শুরু করে। মানুষ হিসেবে আমি ওর কাছে এক ধরণের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে থাকি। রাতের ফোন কলে, সারাদিনের মেসেজ আদান-প্রদানে কাছে আসতে থাকি আমি আর ফারিহা। ওর সাথে সময় কাটাতে আমরা বেশ ভালো লাগতে শুরু করে। মনে মনে আমি ফারিহাকে পছন্দ করতে শুরু করি।


বন্ধুত্বের আকাশে কালো মেঘের গুরু গুরু আগমনী বার্তা শুনতে পাচ্ছিলাম। কৈশোর জীবনের একেবারে শেষাংশে এসে হঠাৎ করেই সবার প্রেম ভালোবাসায় জড়ানোর একটা তীব্র আবেগ সৃষ্টি হয়। বিপরীত লিঙ্গের কারো কাছে বন্ধুত্বের স্থান পেলে তা একসময় সব ছেলেই ভালো লাগায় রূপান্তরিত করতে শুরু করে। বুঝতে পারছিলাম কৈশোরের সে উদ্দীপনা আমি আর দমিয়ে রাখতে পারবো না। ফারিহার প্রতি আমার এক তীব্র আকর্ষণ শুরু হতে থাকে। 


২৫ জুলাই ২০১১। সেদিন বায়োলজি ক্লাস। খুব বিরক্তিকর ভাবে ক্লাসে পড়ানো হচ্ছিল। সেদিন সামিয়া ক্লাসে আসেনি। আমি আর ফারিহা পাশা-পাশি দুই বেঞ্চে বসা। হঠাৎ বলে উঠে, “আজকে যদি এই ক্লাস তাড়াতাড়ি শেষ করাতে পারোস তাইলে তোকে খাওয়াবো শুনে আমি উঠে পড়ে লাগলাম টিচারককে বুঝাতে যে, এই ক্লাসের সব পড়া আমরা বাসায় পড়ে নিতে পারব... ইত্যাদি ইত্যাদি। উনি ক্লাস শেষ করে দিলেন। আমি আর ফারিহা আলবাইকে গেলাম। একটা বার্গার অর্ডার করা হলো। আমি খেতে থাকলাম।

আমার আর ফারিহার মাঝে কথা হচ্ছিল সামিয়া-শুভর রিলেশন নিয়ে। হঠাৎ ফারিহা জানতে চায় আমার পছন্দের কেউ আছে কিনা! আমি ফারিহার দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেশ কয়েকবার তাকালাম। সবুজ আর কালো প্রিন্টের সিল্কের একটা জামা পড়ে আছে মেয়েটা। পরিচিত চিরচেনা ভঙ্গিতে ওর চুল পেছনে বাধাঁ। খুব ভদ্র করে ওড়নাটা বুকের উপরে জড়ানো। নিজের এতো কাছের বন্ধুকে এভাবে দেখতে করতে কেমন যেন লাগছিল। হঠাৎ সাহস করে বলে ফেললাম, আমি একজনকে পছন্দ করি। ফারিহা জানতে চাইল কাকে? আমি উত্তরে বললাম, “তোকে!”

ফারিহা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে রইল। আমার কাছ থেকে এধরণের প্রস্তাব মনে হয় কখনোই আশা করেনি। তারপরও বন্ধুত্বের খাতিরে চিন্তা করার জন্য সময় চাইলো। আমি রাজি হলাম। দুজনে রাস্তায় নেমে এলাম। হাটতে হাটতে ওকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। যখন চলে যাচ্ছিল তখন আমি পেছন থেকে তাকিয়ে ছিলাম। আশা ছিল, হয়তো ঘুরে তাকাবে। হয়তো… 


২৬ জুলাই ২০১১। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলাম, মোবাইলে ফারিহার মেসেজ। দুশ্চিন্তা-উত্তেজনা-শিহরণ একসাথে শুরু হলো। বিশাল এক মেসেজে মেয়েটা অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত বন্ধুসুলভ ভাষায় আমার প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল। আমাকে আসাধারণ দক্ষতায় বোঝাতে সক্ষম হলো, আমাদের বন্ধুত্বটাই চালিয়ে যাওয়া উচিত। 


সত্যি কথা বলতে, ফারিহাকে প্রোপোজ করে আমি নিজেই কেমন যেন অস্বস্তিতে ভুগছিলাম। বুঝতে পারছিলাম অনেক তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে। ওর মেসেজ পেয়ে তাই নিজের দুই গালে দুটো চড় দিয়ে মাথা ঠিক করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, ফারিহাকে বন্ধু ছাড়া অন্যকোন ভাবে দেখব না। কাজটা যতটা কঠিন মনে হচ্ছিলো বাস্তবে সেটা আমরা অনেক সহজেই করে ফেলতে পেরেছিলাম। আমি আর ফারিহা ২৫ জুনের সে ঘটনা ভুলে গেলাম। 


২৭ জুলাই ২০১১। এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। আমি, সামিয়া, শুভআমরা গোল্ডেন + পেলাম। ফারিহা বাংলায় + মিস করল। এই খারাপ খবরটি ফোন করে ফারিহাকে আমিই জানিয়েছিলাম। আসলে ধীরে ধীরে আনন্দ-দু: সব ব্যাপারেই আমার দুজন কাছে আসতে থাকি। সেদিন ওকে আমি কোন ধরণের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করিনি। কারণ, আমি জানতাম ওর সেটার দরকারও নেই। ফারিহা এমনিতেই অসাধারণ।


ক্লাসে রেজাল্টের ভিত্তিতে ব্যাচ আলাদা করা হলো। আমি আর ফারিহা দুই ব্যাচে ক্লাস করা শুরু করলাম। দূরত্বটা আরো বাড়তে থাকলো। ফারিহা দিন দিন কেন যেন পড়াশোনার ব্যাপারে আশাহত হতে লাগলো। ব্যাপারটা আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি। একদিন ওকে ডেকে বললাম, আমাদের সবার একসাথে গ্রুপ স্টাডি করা উচিত। তখন রমজান মাস চলছিল। বিকালের দিকে সামিয়ার বাসায় ফিজিক্সের নানা জটিল বিষয়ে আমি জ্ঞানদান করতাম। ফারিহা, সামিয়া, নওশীন, শুভ, নিলয় ছিল আমার ছাত্র। এই সব পড়ালেখার চাপে ২৫ জুলাই এর ব্যাপারটা আমরা ভুলে গেলাম। আমি নিশ্চিত ফারিহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে এই তারিখটা বলতে পারবে না। এটা অবশ্যই কোন দোষ নয়।


ভর্তি যুদ্ধ শুরু হলো। প্রথমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। বিনা প্রস্তুতিতে পরীক্ষা দিয়ে আমি আর ফারিহা দুজনে মেডিকেলে চান্স পেলাম। আমি ঢাকা মেডিকেলে আর ফারিহা ঢাকা ডেন্টালে। অবশ্য আমরা দুজনের কেউই ডাক্তার হতে চাইতাম না। আমার লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ফারিহার ইচ্ছা ছিল বুয়েটে পড়া। আমি লক্ষে ঠিকভাবেই পৌছলাম। কিন্তু, ফারিহা বুয়েট ছাড়া আর সব জায়গায় চান্স পেল। পাঠক, এবার ভালো করে জেনে রাখুন, ফারিহা মেহজাবীন এমন একজন মানুষ যে নিজের ইচ্ছার বাহিরে কোন কিছু করে কখনোই খুশি থাকতে পারে না। বুয়েটের লক্ষ্যচ্যুত হয়ে ঠিক করতে পারছিল না ঢাবি নাকি মেডিকেলে পড়বে। প্রথমে মেডিকেলে ভর্তি হলো। সেখানে মন না বসায় ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগকে ফারিহা তার ঠিকানা করল। আমি আর ফারিহা আবারো একই ক্যাম্পাসে এসে পৌছলাম। পর্দার আড়াল থেকে একজন সেদিন কেবল মুচকি হেসেছিল!


ভর্তির পর ক্লাস শুরু হওয়ার বিশাল এক অপেক্ষা। আমার ছিল তখন স্বর্ণযুগ। বিশ্ববিদ‍্যালয় ভর্তির পর আমি তখন রীতিমতো আকাশে ভাসছি। অন্যান্য বন্ধু বান্ধবদের একের পর এক রিলেশনে যাওয়ার হিড়িক দেখে নিজের খারাপ লাগতে শুরু করল। কিন্তু, ফারিহার দিকে তাকাতে সাহস হলো না। নিজের এধরণের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ভালো বন্ধুটিকে মুক্তি দেবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক করে ফেললাম, অন্য কারো প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। কিশোর বয়সের অপ্রাপ্তবয়স্ক সিদ্ধান্ত গুলোর মধ‍্যে এইটা সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত ছিলো। যেই বলা সেই কাজ। হঠাৎ করে বেশ ভয়ানক রূপবতী এক মনসীর সাথে কফি খেতে যাবার মতো ভুল সিদ্ধান্তে পা মাড়ালাম। কারণ, প্রেম ভালোবাসা এভাবে সিদ্ধান্ত করে বাস্তবায়িত করার বিষয় না। এটা দুনিয়ার সবচেয়ে স্বত:স্ফূর্ত ব্যাপার। 


আমি যখন অন্য একজনের প্রতি কৃত্রিম আগ্রহ সৃষ্টিতে ব্যস্ত হলাম তখন অন্যদিকে বিধাতা তার অসাধারণ চাল চাললেন। ফারিহা রাতে ঘুমানোর সময় আমার ফোন করাকে মিস করতে লাগলো। আমাকে অনুভব করতে লাগলো। যে সব বিষয় সব সময়ই ওর কাছে বিরক্তিকর আবেগ মনে হয়েছে সেগুলো ওর কাছে ভালো লাগতে শুরু করল। নিজের এই অনিয়ন্ত্রিত চিন্তার কারণে মেয়েটা মাঝে মাঝেই নিজে হাসত আর ভাবত, “ধুর! আমি এগুলো কি চিন্তা করছি!” অন্যদিকে ওর এই ভেবে খারাপ লাগতো যে, আমাকে হয়তো কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। 


মানুষের এক অসাধারণ আজব বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মানুষ তাই পায় যা সে কখনোই চিন্তা করেনি। কারণ, কেউ একজন মানুষের সাথে এক আজব খেলা খেলেন। সে খেলার নামইচ্ছে ঘুড়ি মানুষের ইচ্ছেগুলোকে তিনি খুশিমতো আকাশে উড়তে দেন। কিন্তু, সবই তার কাছে সূতোয় বাধাঁ। চাইলেই তিনি টেনে ইচ্ছের ঘুড়িকে নিচে নামাতে পারেন, কখনো বা উপরে উঠান। ফারিহা কখনোই আমাকে বন্ধুর বাহিরে অন্য কিছু হিসেবে দেখেনি। অথচ তার ইচ্ছেঘুড়িকেই বিধাতা তখন উড়তে দিলেন সীমাহীন আকাশে।


অন্যদিকে অধম আমি সেই অসাধারণ রূপবতী নারীর কেবল রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রতি প্রেমনিবেদনে মনস্থির করে ফেলেছিলাম। অথচ, আমার অসাধারণ আগ্রহের মানুষটির মনের ঘুড়ি তখন আমার আকাশে উড়া কেবল মাত্র শুরু করেছিল। ভূল আমি করতে বসেছিলাম। কিন্তু, না... বিধাতার ইচ্ছা একটু অন্যরকম ছিল।


ডিসেম্বর ২০১১। রাত .০০টা। আমি সামিয়াকে ফোনে বললাম যে, ওই রূপবতী নারীও আমার প্রতি সাড়া দিতে পারে। সামিয়ার মাঝে এক ধরণের আনন্দ উত্তেজনা দেখা দিল। ফারিহা এবং শুভকে আমার সম্ভাব্য নতুন সম্পর্কের কথা বলল। সবাই খুশি হলো। শুধু একজনের মনে জমা হলো কান্নার কালো মেঘ। ফারিহার কাছে মনে হতে লাগলো, মানুষটাতো তারই হতে পারতো। হয়তো তার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে এখন অন্য কারো হতে চলেছে। বাহ! অসাধারণ এক খেলা খেললেন উপরের লোকটা। পরদিন সকালে আমার মোবাইলে সামিয়ার মেসেজ আসল—“দোস্ত, ওই রূপবতী থেকেও ভালো কোন মেয়ে যদি তোকে পছন্দ করে তাহলে কি তুই রাজি হবি?”


আমি—“এগুলা তুই কি বলছিস? কার কথা বলছিস?”

সামিয়া—“দোস্ত, ফারিহা তোকে পছন্দ করে। তোদের মধ্যে যা হয়েছে তা আমাদের বলেছে। চায় না তুই অন্য কারো সাথে কফি খেতে যাস...”

আমি—“দোস্ত, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।


সেদিন বিকালে আমি একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় মালিবাগে ক্যাপিটাল বেকারীতে খেতে বসলাম। হঠাৎ সামিয়ার ফোন আসল, “দোস্ত, তুই কোথায়?”

--“আমি ক্যাপিটালে

--“তুই অপেক্ষা কর। আমি আসতেসি


কিছুক্ষণ পর ওরা আসল, ফারিহাকে দেখতে পেলাম না। সামিয়া, শুভ আমাকে বোঝাতে শুরু করল ফারিহা আমাকে অনেক পছন্দ করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমি শুধু বললাম, “ফারিহা কই?”


সামিয়া বলল, “বাইরে দাড়িয়ে আছে


আমি বাইরে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসলাম। শীতকাল ছিল তখন। রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোস্টের আলোর নীচে চাদর মুড়ি দিয়ে একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে সিলভার কালারের চাদর ছিল সেটা। মেয়েটি আমার অতিপরিচিতা। কিন্তু, তার মুখে পরিচিত হাসিখানা নেই, চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতার ছাপ। আমার এতো পছন্দের বন্ধুটিকে এভাবে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। চিন্তা করা বন্ধ করে দিলাম। রিকশা ডেকে দুজনে উঠলাম। ওর হাতটা চেপে ধরে বলেই ফেললাম সেই পুরোনো ভালোবাসার কথাটা। ৯ ডিসেম্বর ২০১১। জীবনের শুরু হলো মাত্র। 


বি.দ্র: গল্পটি কল্পিত এবং গল্পের চরিত্রগুলোর সাথে কারো মিল খুজেঁ পাওয়া গেলে তা নিছক কাকতলীয়তা। গল্পটি প্রথম পুরুষে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও এই কৈশোরিক প্রেম কাহিনীর সফলতার বাহবা কিংবা ব‍্যর্থতার গ্লানি কোনটাই লেখকের ঘাড়ে বর্তাবে না।




Contact

Hi there! Please leave a message and I will try my best to reply.

© 2024 Shamir Montazid. All rights reserved.
Made with love Battery Low Interactive.