যারা Science পড়ে হতাশ
May 5, 2017 | 20296
আমার
অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী
এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। লাইভ ক্লাসের কারণে
মোটামুটি দেশের সবাইকেই এই রেঞ্জে অন্তর্ভূক্ত
করা যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
হাটঁতে গেলে প্রতি মিনিটে
অন্তত একজন প্রথম বর্ষীয়ানকে
পেয়ে যাই যে তার
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চলে আসে!
কিন্তু,
তাদের অধিকাংশের সাথে কথা বলার
সময়ই হতাশার ছায়া দেখতে পাই। বুয়েটে ভর্তি
হওয়া এক ছাত্রী বিপুল
পরিমাণ হতাশ। সে প্রাথমিকভাবে ঢাবিতে
ভর্তি হয়েছিলো। বাবা-মা টেনে
তাকে বুয়েটে নিয়ে তার অপছন্দের সাবজেক্টে
ভর্তি করালো। এখন ক্লাসে তার
মন বসে না।
গত
সপ্তাহে ঢাবির ফার্মেসীর একজন ছাত্রের সাথে কথা হচ্ছিলো। সে হতাশার সুরে
বললো, “ভাইয়া, ক্লাসের পড়া কিছুই বুঝি
না। বাসায় গিয়ে ১০ মিনিট স্কুলের
কেমিস্ট্রি ভিডিও দেখি। স্যার এই
ভিডিওগুলো ক্লাসে দেখালেই পারে!”
গত রাতে কথা হচ্ছিলো
সদ্য মেডিকেলে ভর্তি
হওয়া এক ছাত্রীর সাথে।
তার ছোট বেলার ইচ্ছা
ছিলো ডাক্তার হওয়া। চান্সও পেলো ঢাকা মেডিকেল
কলেজে। কিন্তু, প্রথম তিন মাসের ক্লাস
করেই তার অন্তর আত্মার
প্রায় মৃত্যু ঘটতে
চলেছে। সে বললো:
“ভাইয়া! গত
সপ্তাহে মনে হয় হাতে গুণে মাত্র ৩ বার ঘুমাতে পেরেছি।”
সুখের
আভাস পেলাম বিজ্ঞান ছেড়ে ব্যবসায় শিক্ষায়
ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীর কন্ঠে। আইবিএর এক স্টুডেন্ট বললো,
“ভাইয়া! সায়েন্স পড়াটা আমার জীবনে বড়
ভুল ছিলো। এখন, মার্কেটিং জিনিসটা
অনেক ভালো লাগে। বিজনেস
কম্পিটিশনের বদৌলতে ইতোমধ্যে মাসে ২
রাত রেডিসনে ডিনার করেছি। চাকরি নিয়ে চিন্তা নাই!”
থিওরিটিকাল
ফিজিক্সের এক ছাত্র বললো,
“সাবজেক্টটা এতোটাই কঠিন যে মাঝে
মাঝে মনে হয় প্রফেসররাও
বেশ কনফিউসড!”
আমাকে
বেশ অবাক করে দিলো
কাঠখোট্টা পরিসংখ্যানের এক ছাত্র। তার
ভাষ্যমতে, “জীবনে কোন কিছু পড়ে
এর থেকে বেশি মজা
আর কখনো পাই নাই।”
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা হয় কলা
ভবনকে। সেখানে গেলেই দেখা মেলে কপোত-কপোতীর জোড়ার। তারা শুধু বাদাম
খেয়েই দিব্যি একটা
দিন পার করে দিতে
পারে। কলা ভবনের আশে
পাশে চায়ের দোকানে গেলে দেখা পাবেন
চে-গুয়েভারার গেঞ্জি পরিহিত এক গোছের যুবকের।
কমিউনিজমের বাতাস তাদের গায়ে লাগতে শুরু করেছে। এরাও
চারুকলা-শাহবাগ ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনটা বেশ উপভোগ করে।
মাঝে
মধ্যে দুই একটা
হতভাগা মেলে অর্থনীতি বিভাগের।
এরা ভেবেছিলো সায়েন্স ছেড়ে বেচেঁ গেছি। কিন্তু, ক্লাসে যখন ক্যালকুলাসের
ধামাকা শুরু হলো তখন
তাদের জীবনশক্তি যায় যায়।
ভর্তি
পরীক্ষার সময় বুয়েট-মেডিকেলে
চান্স পাওয়াটা হলো সবচেয়ে কঠিন!
কিন্তু, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীগুলোকেই কেন যেন সবচেয়ে
হতাশ বলে মনে হলো।
যে যতো বেশি কম্পিটিশনে
জিতে ভর্তি হয়েছে, তার হতাশার পাল্লাটা
যেন তত বেশী ভারী।
কত সিজিপিএ রাখলে চাকরী পাওয়া যাবে? বিসিএস এর জন্য
কোন বই কিনবো? জিআরই-
এর প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু
করবো? কোন ক্লাবে যোগ
দিবো? ক্লাসমেটের সাথে প্রেম করা
কি ঠিক? ইত্যাদি
হাজারো প্রশ্নে এদের জীবন জর্জরিত।
এই দলের সদস্য
সংখ্যা বেশ ভারী।
সবশেষে
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: “সায়েন্স পড়া স্টুডেন্টরা কি অন্যদের তুলনায় বেশী হতাশ?”
উত্তরটা
হ্যাঁ! তাদের অপেক্ষাকৃত বেশী কষ্ট করে
ক্লাস, প্রজেক্ট-থিসিস করতে হয়। বইয়ের
পাতায় মাথা গুজে কাটাতে
হয় রাতের পর রাত। কিন্তু,
পাশ করার পর কি
তাদের এই কষ্টের প্রতিদান
মেলে?
অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই না! কারণ, চাকরীর
বাজারে এসে সে পাল্লা
দিবে সেই বাদাম খাওয়া
কপোত-কপোতী কিংবা নব্য চে-গুয়েভারার সাথে। সায়েন্স পড়ে একটা বড়
অংশই পরে বিসিএস ফরেন
কিংবা এডমিনের চাকুরী খোজেঁ। কারণ, দেশে মর্যাদা ও
নিশ্চয়তা।
বুয়েট
পাশ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার যখন কূটনীতিক হিসেবে
২০ বছর চাকুরির পর
একদিন ধূলোয় জমা নিজের ব্যাচেলর থিসিস বইটা হাতে নেন
তখন তার একট লম্বা
দীর্ঘশ্বাস বের হয়।
ব্যাপারটা যে শুধু বাংলাদেশে
এমন তা কিন্তু নয়।
বিশ্বজুড়েই সায়েন্স স্টুডেন্টদের এরকমই দশা। তাহলে মানুষ
কেন সায়েন্স পড়বে? Science is a crazy
bitch who does not love you back!
মানুষ
সায়েন্স পড়ে প্যাশনের
জন্য। আমি ছোট
বেলায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
চ্যানেলের ডকুমেন্টারি না দেখলে ভাত
খেতাম না। তখন আমার
বয়স মাত্র ৫ বছর। আমার
কৈশোর কেটেছে এই একটা চ্যানেলেই। একটা রঙিন বইতে
কিছু জীবজন্তুর ছবি দেখলেই আমার
মনটা ভরে উঠতো। সৌরজগতের
ছবি দেখলেই আমি বিস্ময় নিয়ে
তাকিয়ে থাকতাম।
আমার
মতো মানুষের সংখ্যা নেহায়েত
কম না। কিন্তু, এর
লাভ কি? একজন বিজ্ঞানীর আয়ই বা কতটুকু?
সত্যিকথা হচ্ছে, অনেক কম! অনেক
অনেক কম। এর থেকে
বিবিএ পড়লে বেশি আয় করা
সম্ভব। স্টীভ জবস যতটা না
ছিলেন সায়েন্টিস্ট তার থেকে অনেক
বেশি সফল একজন মার্কেটার।
তাই, কম্পিউটার সায়েন্সের ক্লাস অপেক্ষা বিবিএর ক্লাসে উনি বেশি হাততালি
পান। ইঞ্জিনিয়াররা তালি দেন স্টীভ
ওয়াজনিয়াক নামের একজন ব্যক্তিকে
যার নাম আমরা অনেকেই
শুনি নাই। তিনি মূলতো
অ্যাপেলের অধিকাংশ জিনিস আবিষ্কার করতেন। জবসের কাজ ছিলো মূলতো
বেচা-বিক্রি।
কিন্তু,
সত্যি কথা হলো,
আজ থেকে ২০০ বছর
পর স্টীভ জবসকে কেউ মনে রাখবে
না। আজ থেকে ২০০
বছর আগের কোন ফেমাস
বিজনেস পার্সোনেলের কথা আপনার মনে
আছে?
না!
কিন্তু বিজ্ঞানী?
অবশ্যই আছে। দ্য ভিঞ্চি, নিউটন, গ্যালেলিও, ম্যাক্সওয়েল, আইন্সটাইনদের দাম কখনোই শেষ হবে না। এরা বাচেঁ যুগের
পর যুগ। যদিও এদের
জীবনদশায় টাকা-পয়সা-সম্মান
কোনটাই তেমন ছিলো না।
তবুও এরাই অমরত্ব লাভ
করেছে।
যারা
আমার মতো স্বপ্ন ভরা
চোখে সায়েন্স পড়ছো তাদের বলছি: বিজ্ঞান তোমাদের মানুষের মাঝে বাচিঁয়ে রাখবে
বছরের পর বছর ধরে।
তোমাদের আবিষ্কার করা সূত্র ব্যবহার করে কোম্পানিগুলো প্রোডাক্ট
বানাবে। সেই প্রডাক্ট মার্কেটে
এনে সবার ব্যবসা
চলবে। তোমার আবিষ্কার ছাড়া বাকিটুকুর অস্তিত্বই থাকবে না।
আমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বড় ফ্যানগার্ল! কারণ, এখানে শুধু চাকরী পাওয়ার
বিষয় পড়ানো হয়না। এখানে চাইলে পালি সাহিত্য
থেকে শুরু করে ফলিত
গণিতবিদ্যাও পড়া যায়।
যারা
মনে করে, দল বেধেঁ
চাকরী পাওয়ার জন্য আমাদের
উচিত Applied
Subject/BBA পড়া তারা অসম্ভব ভুল
করছেন। ৫০ বছর পর
দেখবেন আপনার দেশে সেরা মাথার
বিজনেসম্যান/ মার্কেটারদের অভাব নেই। কিন্তু,
আবিষ্কারকদের অনেক অভাব। USA-UK-Russia অনেক এগিয়ে
কারণ তাদের বিজ্ঞানীরা দিন রাত গবেষণায়
ব্যস্ত থাকেন। আমাদেরও কিছু আবিষ্কারক, কিছু
বিজ্ঞানী দরকার। নাইলে, সারা জীবন আমেরিকার মাল হাওলাতে এনে অথবা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির সিগারেট বেচেঁ চলতে হবে।
Scientists are the most passionate human beings on earth. Because
no one else would work days and nights to be paid next to nothing. They are
paid in immortality.