যাদের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি তাদের কথা
May 5, 2017 | 13908
SSC/HSC পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যায় সবাই জিপিএ-5.00 প্রাপ্তির আনন্দে আত্মহারা; কেউ পেয়েছে সোনার হরিণ “Golden”. টেলিভিশন খুললেই দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণবন্ত উল্লাস! কী সুন্দর একটা চিত্র!
অথচ এই আনন্দ উৎসবের মাঝে একটা করুণ দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। স্কুলের সিড়িঁর নীচে বসে কেউ বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় আত্মহননের মত মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিবছরই খবরে দেখা যায়। জিপিএ-5.00 না পেলে যেন জীবনটার কোন অর্থই থাকে না।
এই ধারণা কতটা যৌক্তিক?
প্রথমত, HSC/SSC পরীক্ষার GPA কতটা গুরুত্বপূর্ণ? অনেকেই বলবে প্রচন্ড! কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের একটা বড় অংশ আসে এই প্রাপ্ত GPA থেকে। তাই, যারা ডাবল গোল্ডেন পেয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় ভর্তি যুদ্ধে এগিয়ে থাকবে তা সত্যি। কিন্তু, যাদের GPA এর ঝুলি কিছুটা ফাকাঁ তাদের কি কোন গতি নেই?
গতি অবশ্যই আছে!
যারা আশানুরূপ ফলাফল করতে পারো নাই তাদের জন্য কিছু কথা:
1. নিজেকে সামলাও। তোমার জীবনটা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। জীবন তো মাত্র শুরু হয়েছে। এই রকম ছোট-খাটো ব্যর্থতা জীবনের পদে পদে আসবে। এখন থেকেই সেটা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নাও। প্রাথমিক মন খারাপটা কাটিয়ে উঠে নতুন করে যুদ্ধ শুরু করার দৃঢ়তা সঞ্চয় করো।
2. তোমার আশ-পাশের কিছু মানুষজন থাকবে যারা তোমাকে সান্ত্বনা দেয়ার নামে আরো বেশি খারাপ ফিল করানোর চেষ্টা করবে। এই সকল মানুষ থেকে কিছুদিন দূরে থাকো। ভবিষ্যৎ সফলতা দিয়ে এদের উত্তর দিবে। এখনই কিছু বলতে যেয়ো না।
3. তোমার হয়তো মনে হবে ভালো ফলাফল না করায় তোমার বন্ধুরা তোমাকে এড়িয়ে চলছে, তোমাকে ছাড়া কোচিং এ যাচ্ছে, গ্রুপ স্টাডিতে তোমাকে ডাকছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধারণাটা তোমার আশাহত হৃদয়ের অভিমানমাত্র। তুমি যদি একটু সাহস করে বন্ধুদের সাথে মিশতে চেষ্টা করো তাহলে দেখবে সবই আগের মতই রয়েছে। আসলে তুমিই বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখছো। দয়া করে, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসো। নিজেকে প্রিয়জনদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলো না। প্রকৃতপক্ষে, এই সময়েই প্রিয়জনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
4. আশা ভঙ্গের প্রথম পর্বে অনেকে এতোটাই আহত হয় যে, তারা পুনরায় চেষ্টা করার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলে। মনে রেখো, হোঁচট খাওয়া মানেই হেরে যাওয়া নয়। বরং, জয়ের অনীহা থেকেই পরাজয়ের শুরু হয়। ছোট বাচ্চা যখন নতুন নতুন হাটঁতে শেখে তখন বার বার পড়ে যায়। কিন্তু, তারপরও সে উঠে দাড়াঁয়। তোমাকেও আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি অর্জন করতে হবে।
Try once again. Maybe you will fail again. But, then, you
will try again! That’s life.
5. আজকে থেকে পাচঁ বছর পর পেছনে ফিরে আজকের দিনের কথা মনে করে তুমি হাসবে। কারণ, জীবন তোমাকে দেখিয়ে দেবে সামান্য GPA এর কারণে তোমার জীবন শেষ হয়ে যায়নি। বরং, সাময়িক এই ব্যর্থতা তোমার লড়াই করার শক্তিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
6. অনেকেরই হয়তো বুয়েট বা ঢাবিতে পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজনীয় জিপিএ আসে নি! তোমাদের এখন নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারণে নামতে হবে। সেটা হতে পারে ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। সত্যি কথা হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে পড়লেই মানুষ যে জীবনে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে যায় এমনটা কিন্তু নয়। তুমি একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়েও জীবনে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সফলতা পেতে পারো। University doesn’t matter. What
matters is your excellence. নিজের সেই এক্সিলেন্স অর্জনটা করতে নতুন করে লেগে যাও।
7. অযথা দুশ্চিন্ত করতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের অবনতি ডেকে আনবে না! ইতোমধ্যে তুমি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছো। এখন তোমার অন্তত লড়াই করার শারীরিক শক্তিটা দরকার। তাই, স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখবে।
8. যে ফলাফল এসেছে তা চাইলেও তুমি পরিবর্তন করতে পারবে না। সেটা এখন অতীত। কিন্তু, সামনে যে ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে চাইলে সেখানে এখনও অসাধারণ ফলাফল করে দেখাতে পারো। সেই লক্ষ্যে পরিশ্রম করাই কি অধিকতর যুক্তিযুক্ত কাজ নয়? তো দেরী কেন? চোখের পানি মুছে বইটা নিয়ে আজকে রাতেই কি বসতে পারি না? অবশ্যই পারি…
9. বাবা-মা-পরিবার হয়তো তোমার উপর সাময়িকভাবে আশাহত। তাদেরকে সরাসরি বোঝাও যে, তুমি নতুন করে শুরু করতে চাও। তোমার এখন সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের মানসিক সাপোর্ট।
10. একবার একটা লোক প্রায় 10,000 বার চেষ্টা করেও কারেন্ট থেকে আলো তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। তাকে যখন মানুষ তার ব্যর্থতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো তখন তার উত্তর ছিলো “আমি তো 10,000 বার ব্যর্থ হয়নি! আমি 10,000 টা উপায় আবিষ্কার করেছি যা কাজ করে না।” এই মানুষটার নাম টমাস আলভার এডিসন। তিনি প্রথম লাইট বাল্ব আবিষ্কার করেন। সুতরাং, ব্যর্থতা কিন্তু অসাধারণ জিনিস! যদি সেটাকে তুমি পজিটিভলি নিতে পারো।
শেষ করবো এপিজে আবুল কালামের এক বিখ্যাত উক্তি দিয়ে। জীবনে আসা কঠিন সময় সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন: Difficulties come to your life
not to destroy you; but to discover your latent potentialities.
So, let difficulties know that you are too DIFFICULT! You
will never break.