কীভাবে পাবো ড্রাইভিং লাইসেন্স
Nov 10, 2017 | 37263
যেকোন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরই ড্রাইভিং শিখে নেয়াটা জরুরী। সাতাঁর কাটা, সাইকেল চালানোর মতো “ড্রাইভিং”ও একটি অত্যন্ত জরুরী লাইফ স্কিল। বিগত ৫ মাস ব্যয় করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আমি বুঝতে পেরেছি। এই ব্লগে আমি শুরু থেকে ধাপে ধাপে আলোচনা করবো বাংলাদেশী ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির উপায়। আগেই বলে রাখছি, প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দীর্ঘ। আর্জেন্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার কোন উপায় নেই। অন্তত ৩-৫ মাস হাতে রেখে এই যুদ্ধে নামতে হবে।
এই ব্লগটির বিভিন্ন অংশ আপনার ভবিষ্যতে দরকার হবে। তাই এই লিংকটি: http://www.shamirmontazid.com/blog/কীভাবে-পাবো-ড্রাইভিং-লাইসেন্স সেভ করে রাখতে পারেন।
ধাপ-০১: লার্নার্স পারমিট সংগ্রহ
লার্নার্স পারমিট হলো শিক্ষানবীশ চালকের অনুমতি পত্র। আপনি গাড়ি চালানো শেখার পূর্বে এই লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হবে। একই সাথে মোটরসাইকেল ও হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এর জন্য ফর্মের নির্ধারিত অংশে দুটি টিক চিহ্ন দিলেই হবে।
১. প্রথমে এই লিংক থেকে লার্নার্স লাইসেন্স এর ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো পূরণ করুন। এই ফর্মে একজন প্রশিক্ষকের তথ্য দিতে হয়। আপনার পরিচিত যেকোন ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে তার লাইসেন্স নম্বর জেনে নিয়ে তাকেই আপনি প্রশিক্ষক হিসেবে ফর্মে দাবী করতে পারবেন।
২. ফর্মের সাথে একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকে যা আপনি যেকোন রেজিষ্ট্রার্ড ডাক্তারের কাছ থেকে পূরণ করাতে পারবেন। আপনার মোড়ের ফার্মেসীতে যে জেনারেল প্র্যাক্টিশনার বসেন তার কাছে গেলেই এই সার্টিফিকেট পূরণ করতে পারবেন। অবশ্যই সার্টিফিকেটের ফর্মে ছবি লাগিয়ে নিয়ে যাবেন। ডাক্তার সাহেব আপনার ছবির উপর স্বাক্ষর করে দিবেন।
৩. নিজের তথ্য গুলোর সত্যতা প্রমাণের জন্য আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড/জন্ম সনদ/পাসপোর্টের একটি সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
৪. নিজের বর্তমান ঠিকানা প্রমাণের জন্য আপনার বাসার গতমাসের ইলেকট্রিক বিলের একটি ফটোকপি সংগ্রহ করুন।
৫. সকল কাগজ-পত্র সংগ্রহ করার পর লার্নার্স লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পালা। এজন্য আপনাকে নির্ধারিত BRTA এর অফিসে যেতে হবে। আপনার পছন্দমত যেকোন অফিসে গেলে হবে না। আপনার বর্তমান ঠিকানার উপর ভিত্তি করে কোন অফিসে যাবেন তা নির্ধারিত হবে। এখানে সেই লিস্টটি দেয়া হলো:
ঢাকা মেট্রো-১: মিরপুর BRTA অফিস, মিরপুর-১৩. (গুগল ম্যাপ)
অধিভুক্ত থানা: রমনা, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, বাড্ডা, কাফরুল, ক্যান্টনমেন্ট, হাজারীবাগ এবং ঢাকা জেলার অন্তর্ভূক্ত সাভার ও ধামরাই।
ঢাকা মেট্রো-২: কেরানীগঞ্জ BRTA, বুড়িগঙ্গা ব্রীজের অপর পাশে, ইকোরিয়া (গুগল ম্যাপ)
অধিভুক্ত থানা: ডেমরা, সূত্রাপুর, কোতয়ালী, লালবাগ, কামরাংগীচর, শ্যামপুর, মতিফিল, সবুজবাগ, খিলগাও এবং ঢাকা জেলার অন্তর্ভূক্ত কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা।
হ্যাক: ধরুন আপনি থাকেন ঢাকার খিলগাঁও-এ। তাহলে আপনাকে কেরানীগঞ্জ শাখায় যেতে হবে। কিন্তু, আপনি যেতে চান মিরপুর অফিসে। তাহলে কি করবেন?
মিরপুরে আপনার কোন আত্মীয়/বন্ধুর বাসা থাকলে তার কাছ থেকে কারেন্ট বিলের একটি কপি সংগ্রহ করুন। তারপর, নিজের বর্তমান ঠিকানার জায়গায় সেই আত্মীয়/বন্ধুর ঠিকানা লিখে আপনি মিরপুর অফিসে জমা দিতে পারবেন। স্থায়ী ঠিকানা এক্ষেত্রে কোন গুরুত্ব বহন করে না।
৬. লার্নার্স লাইসেন্স পেতে একটি ফি জমা দিতে হয়। আপনার ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড থাকলে আপনি এই লিংকে গিয়ে অনলাইনে ফি জমা দিতে পারবেন। এতে আপনার অনেক সময় বাচঁবে। অন্যথায়, আপনার নিকটতম BRTA অনুমোদিত ব্যাংকের শাখায় এই ফি জমা দেয়া যাবে। এমনকি প্রত্যেকটি BRTA শাখায় একটি ব্যাংক বুথ থাকে যেখানেও আপনি এই ফি জমা দিতে পারবেন। তবে BRTA শাখায় বুথে অনেক ভিড় হয়। সুতরাং, সময় বাচাঁতে ফর্ম জমা দেয়ার আগেই ফি জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করুন। লার্নার্স পারমিটের ফি হলো: এক ক্যাটাগরী ৩৪৫ টাকা, বাইক+গাড়ি=৫১৮ টাকা।
৭. পূরণকৃত লার্নার্স ফর্ম, ফি জমা দেয়ার রশিদ, ভোটার আইডির-ফটোকপি, বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি, মেডিকেল সার্টিফিকেট, ১টি পাসপোর্ট ও ৩টি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি সাথে নিয়ে আপনার জন্য নির্ধারিত BRTA অফিসে চলে যান। সময় বাচাঁতে চাইলে সকাল ৮:০০ টার আগে উপস্থিত হন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অনেক ভীড় হবে।
৮. লার্নার্স ফর্ম জমা দেয়ার নির্ধারিত বুথে কাগজপত্র জমা দিন। সব কিছু ঠিক থাকলে আপনার ফি-জমা দেয়ার রশীদে একটি তারিখ লিখে দিবে যেদিন আপনি নিজের লার্নার্স পারমিট সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত যেদিন ফর্ম জমা দিবেন তার পরবর্তী কার্য দিবসে এই পারমিট দেয়া হয়। (দালালরা চাইলে ওই দিনই এই লাইসেন্স বের করতে আনতে পারে। এদের কারণে সাধারণ মানুষের লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক কষ্টকর হয়।)
৯. নির্ধারিত দিনে রিসিপশন বুথ থেকে নিজের লার্নার্স পারমিট ও আবেদন ফর্মটি সংগ্রহ করুন। সংগ্রহ করার পর BRTA অফিসের নির্ধারিত কক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে হয়। স্বাক্ষর করানোর পর ফর্মটিকে আবার রিসিপশন বুথে জমা দিয়ে যেতে হবে। আর লার্নার্স পারমিট আপনি নিয়ে যাবেন। এই পারমিটেই আপনার ড্রাইভিং টেস্টের তারিখ, স্থান লেখা থাকবে। সাধারণত এই তারিখ এক বছর পরে হয়। দালাল/পরিচিত BRTA অফিসারগণকে ধরে এই তারিখ সবাই এগিয়ে নিয়ে আসতে পারে।
১০. এরপর একটি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে যান অথবা পরিচিত কারো কাছে ড্রাইভিং শিখে ফেলুন। মাত্র এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ড্রাইভিং করলেই আপনি প্রক্রিয়াটি বুঝে যাবেন।
ধাপ-০২: ড্রাইভিং টেস্ট
হাস্যকর হলেও সত্য, এই ধাপটি সবচেয়ে সহজ। কারণ, বাংলাদেশে কাউকেই এই টেস্ট কড়াকড়িভাবে দিতে হয় না। অধিকাংশের জন্যই এটি একটি পরিহাস মাত্র। আমাদের দেশে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটার অন্যতম কারণও এটি। অধিকাংশ মানুষই ড্রাইভিং না শিখেই এই টেস্ট পাস করে যায়। যাই হোক, এই পরীক্ষার জন্য করণীয়:
১. ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল গুলোতে ড্রাইভিং টেস্টের অনেক গুলো বই পাওয়া যায়। এরকম একটি বই পড়লেই রাস্তার সংকেতগুলো সম্পর্কে ভালো আইডিয়া পাবেন।
২. ড্রাইভিং টেস্টের দিনে নির্ধারিত পরীক্ষা সেন্টারে উপস্থিত হন। নিজের লার্নার্স পারমিট ও কলম অবশ্যই সাথে নিয়ে যাবেন।
৩. প্রথমে একটি লিখিত পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষার নমুনা প্রশ্ন দেখতে চাইলে এই লিংকে ঘুরে আসুন। (বাস্তবতা অত্যন্ত হাস্যকর। সাধারণত সবাইকে এই পরীক্ষায় উত্তর গুলো বলে দেয়া হয়।)
৪. লিখিত পরীক্ষার পর একটি মৌখিক পরীক্ষা হবে। সেখানে একজন কর্মকর্তা আপনাকে রাস্তার সাইনগুলোর অর্থ জিজ্ঞাসা করবেন। এই ধাপটি খুবই সহজ। ট্রাইভিং টেস্টের বই পড়লেই আপনি এই উত্তরগুলো পারবেন।
৫. সবশেষে হবে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা। আপনাকে একটি গাড়ি/ বাইক চালিয়ে দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত পার্কিং করা, একটি লাইন ধরে গাড়ি চালিয়ে দেখাতে হয়।
৬. তিনটি পরীক্ষায় পাস করলে আপনার লার্নার্স পারমিটের পেছনে তিনটি সাইন করা হবে। এটিই প্রমাণ করে যে আপনি পরীক্ষায় পাস করেছেন।
ব্যস! আপনার কাজ অনেকটাই হয়ে গেছে।
ধাপ-০৩: স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের জন্য আবেদন
বর্তমানে বাংলাদেশে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স দেয়া হয়। এতে একটি চিপ লাগানো থাকে যা ইলেকট্রনিক মেশিন দ্বারা রিড করা যায়। বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ার একটি ভালো দিক হলো এই সকল প্রযুক্তির ব্যবহার।
১. এই লিংক থেকে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের জন্য ফর্ম ডাউনলোড করুন। এই ফর্মটি ইংরেজিতে লেখা থাকবে। এর সাথে একটি বাংলা ফর্মও থাকবে। সেটাও পূরণ করতে হবে।
২. খুব সুন্দর করে ইংরেজি বড় হরফে এই ফর্মগুলো পূরণ করুন। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দিন। যে সকল পয়েন্ট আপনার জন্য প্রযোজ্য নয় সেগুলো ফাকাঁ রাখুন।
৩. স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফি আগের নিয়মে (লার্নার্স পারমিট অংশ দেখুন) জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করুন। স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের ফি: (ক) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফী – ১৬৮০/-টাকা (০৫ বছরের নবায়ন ফীসহ), (খ) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফী – ২৫৪২/-টাকা (১০ বছরের নবায়ন ফীসহ)
৪. নিম্নলিখিত কাগজপত্রগুলো ফর্মের সাথে যুক্ত করুন:
- ফর্মের সাথে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকবে। আবারো ডাক্তারের কাছ থেকে এটি পূরণ করিয়ে নিতে হবে।
- নিজের লার্নার্স পারমিটের মূলকপি এবং উভয় পাশের ৩টি ফটোকপি
- নিজের ৫ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি
- পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট। (এটি শুধুমাত্র যারা ড্রাইভিং-কে পেশা হিসেবে নিতে চান তাদের জন্য।)
- টাকা জমা দেয়ার রশিদ এবং তার দু্টি ফটোকপি (গ্রাহক কপি সহকারে)
- নিজের ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি
- সকল কাগজপত্র ও ছবির অন্তত দু/তিনটি অতিরিক্ত কপি রাখুন। এটা বিপদের বন্ধু হতে পারে।
৫. ড্রাইভিং টেস্ট পাশ করার অন্তত ১৫ দিন পর স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু, পরীক্ষাকেন্দ্র হতে রেজাল্ট আসতে প্রায়ই দেরি হয়। তাই, আপনি পরীক্ষা পাশের মাস খানেক পরে এই সকল কাগজপত্র সহ ফর্ম জমা দিতে BRTA এর শাখায় চলে যান।
৬. সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার ফর্ম জমা নিয়ে একটি প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ দেয়া হবে। সেই রশিদে আপনার বায়োমেট্রিক নেয়ার দিন-তারিখ লেখা থাকবে। সাধারণত আপনার ফর্ম জমা দেয়ার দিন থেকে একমাস পরে এই তারিখ দেয়া হয়। (দালালরা চাইলে এই তারিখও এগিয়ে আনতে পারে।)
ব্যস! হয়ে গেলো আবেদন পত্র জমা দেয়া।
ধাপ-০৪: বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান
স্মার্ট কার্ডের জন্য আপনাকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং স্বাক্ষর করতে হবে। এই ধাপটিকে বলা হয় বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান।
১. প্রাপ্তি স্বীকার রশিদে উল্লেখিত তারিখে সেই রশীদটি সাথে নিয়ে BRTA অফিসে চলে যান। অবশ্যই রশিদটির কয়েকটি ফটোকপি সাথে রাখবেন।
২. প্রথমে আপনাকে টোকেন সংগ্রহের লাইনে দাড়াঁতে হবে। সেখান থেকে আপনার জমাকৃত ফর্ম ও একটি টোকেন দেয়া হবে।
৩. বায়োমেট্রিক কাউন্টারের বাইরের স্ক্রীণে আপনার টোকেনের নম্বর ভেসে আসলে ভেতরে প্রবেশ করুন। বাইরে লাইনে দাড়িঁয়ে মারামারি করার দরকার নেই। টোকেন সিরিয়াল অবশ্যই রক্ষা করা হয়।
৪. প্রথমেই একজন আপনার কাছ থেকে ফর্মটি নিয়ে তথ্যগুলো সার্ভারে টাইপ করবেন। উনি ভুল করবেন এইটাই স্বাভাবিক। তাই, টাইপ শেষ হলে আপনি চেক করে দেখুন। ভুল পেলে তাকে বলুন। উনি সাথে সাথে তা শুধরে নিবেন।
৫. এর পর আপনার বায়োমেট্রিক প্রদান করুন। হিজাব পরিহিতাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিজাব খুলতে হবে। কানের অলংকারও গ্রহণযোগ্য নয়।
৬. বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়া হয়ে গেলে আপনাকে একটি সাদা রঙের প্রিন্ট করা কাগজ দেয়া হবে। সেখানে আপনার লাইসেন্স ডেলিভারীর তারিখ লেখা থাকবে। এই তারিখ সাধারণত অনেক দেরিতে দেয়া থাকে। কিন্তু, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার লাইসেন্স তৈরি হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তারা আপনার মোবাইলে SMS করে জানিয়ে দিবে। আপনি চাইলে নিজের ফোন থেকে বার্তা পাঠিয়েও লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারবেন। এজন্য 6969 নম্বরে এই ফরম্যাটে SMS করুন: DL DMXXXXXX (এই X চিহ্নিত স্থানে আপনার প্রাপ্তি স্বীকার রশীদে উল্লেখিত রেফারেন্স নম্বরটি লিখবেন।) ফিরতি বার্তায় তারা আপনাকে লাইসেন্সের অবস্থা জানিয়ে দিবে।
ধাপ-০৫: স্মার্টকার্ড লাইসেন্স সংগ্রহ
১. আপনার লাইসেন্স তৈরি হয়ে গেলে মোবাইলে SMS করে তা জানিয়ে দেয়া হবে। সেই SMS এ আপনার লাইসেন্সের নম্বরও লেখা থাকবে।
২. আপনার প্রাপ্তি স্বীকার রশীদের পেছনে SMSটির তারিখ এবং এতে উল্লেখিত লাইসেন্স নম্বরটি লিখে রাখুন।
৩. SMS পাবার পরবর্তী ১ সপ্তাহের মধ্য আবারো BRTA অফিসে হাজির হন। এপর্যায়ে এই অফিসটা আপনার অনেক পরিচিত হয়ে যাবে।
৪. নির্ধারিত লাইনে দাড়িঁয়ে থাকুন। নিজের প্রাপ্তি স্বীকার রশীদ প্রদানের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
নিজে বিশাল এক যুদ্ধ জয় শেষে বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরে যান। আপনি আগামী দশ বছরের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে গেলেন! অভিনন্দন!
দালালের ভূমিকা:
সবাই বলেন, দালাল ছাড়া লাইসেন্স করানো সম্ভব নয়। কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। দালাল ছাড়া লাইসেন্স করা সম্ভব; তবে আপনার ১-২ বছর সময় লাগবে। ৩-৫ মাসে করাতে হলে দালাল অথবা BRTA এর পরিচিত কর্মকর্তা থাকা লাগে। সবচেয়ে বড় ধাপ হলে ড্রাইভিং টেস্টের তারিখটি এগিয়ে এনে দেয়া।
এছাড়াও বলে রাখছি, শুধুমাত্র ড্রাইভিং টেস্ট ও বায়োমেট্রিকের দিন আপনার স্বশরীরে যাওয়া প্রয়োজন। অন্যান্য দিনগুলোতে দালালরাই আপনার কাজ করে দিবে। সেক্ষেত্রে বিশাল কষ্টের হাত থেকে বাচাঁর জন্য আপনি ৫-৭ হাজার টাকা খরচ করে দালাল ধরতেই পারেন। অথবা, আমার মতো ইন্টারনেট ঘেটেঁ আপনিও নিয়মগুলো বুঝে পাঠাও-রাইডারের পেছনে বসে দৌড়াঁতে দৌড়াঁতে লাইসেন্স পেতে পারেন। The choice is yours.
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির উপায়:
দেশের বাহিরে গাড়ি চালাতে হলে আপনাকে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এর জন্য করণীয়:
১. প্রথমে উপরের সবগুলো ধাপ অনুসরণ করে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।
২. এই লিংক থেকে ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্সের ফর্ম ডাউনলোড করুন।
৩. ফর্মটি ইংরেজিতে পূরণ করুন এবং এর সাথে নিম্নের কাগজ-পত্রগুলো সংযুক্ত করুন:
- স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি
- এককপি পাসপোর্ট ও চারকপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি
- আপনার পাসপোর্টের ১-৪ নং পাতার ফটোকপি
৪. এই সবকিছু সাথে নিয়ে ইন্ট্যারন্যাশনাল লাইসেন্সের অফিসে যান। এই অফিস শুধুমাত্র ঢাকায় আছে। ঠিকানা: ৩বি, আউটার সার্কুলার রোড, (মগবাজার আগোরার উল্টাপাশে), মগবাজার, ঢাকা। গুগল ম্যাপের লিংকের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
৫. অফিসে প্রথমে সব কাগজপত্র জমা দিন। এরপর সেখানেই ফি জমা দিতে হবে। ইন্ট্যারন্যাশনাল লাইসেন্সের ফি: ২৫০০ টাকা (১২ কর্মদিবসে ডেলিভারী) অথবা ৩৫০০ টাকা (৫ কর্মদিবসে ডেলিভারী)।
৬. টাকা জমা দেবার পর স্লিপ গ্রহন করুন।
৭. স্লিপে উল্লেখিত তারিখে নিজের ইন্ট্যারন্যাশনাল লাইসেন্স গ্রহণ করুন।
আশা করি, এই ব্লগটি সবার অনেক কাজে আসবে। আমি অনেক কষ্ট করে এই প্রক্রিয়াটি বুঝতে পেরেছি। তবে, আমি অবশ্যই ভুলে উর্ধ্বে নই। আপনি এই ধাপগুলোর কোথাও ভুল পেলে কমেন্টে জানাবেন। আমি অবশ্যই শুধরে দিবো।
একটি অনুরোধ: বাংলাদেশের ড্রাইভিং টেস্ট একটি হাস্যকর পরিহাস মাত্র। অনেকেই জীবনে গাড়ির স্টিয়ারিং না ধরেই লাইসেন্স পেয়ে যান। কারণ, টাকা ও কানেকশন সবকিছুই করে দেয় এখানে। কিন্তু, আসল রাস্তায় যখন গাড়ি চালাবেন তখন আপনার টাকা ও কানেকশন দূর্ঘটনাকে এড়াতে পারবে না। তাই, আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, একটি ড্রাইভিং স্কুলে গিয়ে ড্রাইভিং শিখে ফেলুন। ড্রাইভিং জানা ব্যতীত একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আপনি কি সুবিধা পাবেন তা আমার জানা নেই।
সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের দেশে প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছে। তাই, BRTA এর কোন কর্মকর্তা এই ব্লগটি পড়লে তাকে আমি অনুরোধ করছি: “নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ড্রাইভিং টেস্টটা কড়াকড়ি করুন।”
এই ব্লগটি আপনার অনেক বন্ধুর উপকারে আসতে পারে। তাই ফেইসবুকে এই লিংকটি http://www.shamirmontazid.com/blog/কীভাবে-পাবো-ড্রাইভিং-লাইসেন্স শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। আসুন, প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর একটি রিজার্ভার তৈরি করি সবাই মিলে।